বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স: আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং-এর ধর্ষণ চেম্বার। এর নাম ‘গুফা’। গুফায় তাকে ঘিরে থাকেন ২০০ জনেরও বেশি বাছাই করা শিষ্যা। তাদের চুল খোলা। পরনে সাধ্বীদের মতো দুধসাদা রঙের পোশাক। সাধ্বী লাভের আশায় যেসব নারী আসতেন, তাদের এখানে নিয়ে যাওয়া হতো। শুধু নারী ভক্তদের রাম রহিমের সেবায় নিয়োজিত করা হতো এবং গুফার পাহারায়ও থাকত নারীরা। যে দুই নারী রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন, ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিচারকদের সামনে তাদের জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ধর্ষণের প্রায় ১০ বছর পর রাম রহিমের দুই সেবিকার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয় ২০০৯ ও ২০১০ সালে। মূলত এ দু’জনের নির্যাতিত হওয়ার বয়ান রেকর্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে বিতর্কিত ধর্মগুরুর সাজার ভাগ্য নির্ধারিত হয়। ধর্ষণের শিকার দুই নারী অভিযোগ করেন, রাম রহিম যখন ধর্ষণ করতেন, তখন তিনি নিজেকে দেবতা বলে দাবি করতেন এবং দেবতার মর্যাদায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন। এছাড়া রাম রহিমের ধর্ষণকাণ্ডকে তার ভক্তরা ‘মাফি’ (ক্ষমা) বলে অভিহিত করতেন। নিজের গোপন ডেরায় আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে নারীদের সম্মোহিত করার চেষ্টা করতেন রাম রহিম। এছাড়া যারা তার আধ্যাত্মিক শক্তিতে বিশ্বাস করতেন, তাদের পরিবারের নারীরাও তার সেবায় নিয়োজিত হতেন।
আরেক অভিযোগকারী জানান, এক রাতে বাবা রাম রহিম তাকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি রাম রহিমের ঘরে ঢুকতেই ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। রাম রহিম সেই সময় পর্নোগ্রাফি দেখছিলেন এবং তার হাতে রিভলভার ছিল বলে অভিযোগকারীর দাবি। সে রাতে রাম রহিম তাকে ধর্ষণ করেন এবং তারপর থেকে টানা তিন বছর তাকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। ডেরা সচ্চা সওদার অন্য সন্ন্যাসিনীদেরও রাম রহিম ধর্ষণ করেন বলে জানান তিনি।
হরিয়ানা রাজ্যের যমুনানগরের এক নারী তার জবানবন্দিতে বলেন, ভাইয়ের কারণে ১৯৯৯ সালে রাম রহিমের সেবায় নিয়োজিত হন তিনি। তার ভাই গুরুর অন্ধভক্ত ছিলেন। কিন্তু ধর্ষণের পর বোনের পক্ষে বিচার চাওয়ায় তাকে খুন করা হয় বলে দাবি করেন ওই নারী। তিনি আরও জানান, প্রথমবার যখন ওখানে যাই, তখন অন্য সেবিকারা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি গুরুর ‘মাফি’ চান কিনা, তিনি তখন বুঝে উঠতে পারতেন না, তারা আসলে কী বলতে চাইছেন। ১৯৯৯ সালের ২৮-২৯ আগস্ট যখন তাকে গুফায় নিয়ে ধর্ষণ করা হল, তখন তিনি গুরুর মাফি সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলেন।
রাম রহিমের কনভয়ে বিলাসবহুল ১০০টি গাড়ি। তারমধ্যে ১৬টি কালোরঙের ফোর্ড এনডেভার। বাবা প্রাসাদ থেকে বের হলে সব গাড়ি তাঁবু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বাবা নিজেই ঠিক করেন, তিনি কোন গাড়িতে উঠবেন। আশ্রমে নিজের ব্যাটারিচালিত গাড়িতেই ঘোরেন তিনি। সিরসায় ডেরা সচ্চা সৌদার এই সদর দফতর আসলে নিছক আশ্রম নয়। ছোটখাটো শহর। ডেরার ভিতরেই চাল, ডাল, আনাজের চাষ হয়। হোটেল, সিনেমা হল, স্কুল, রেস্তোরাঁ, মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, স্টুডিও, বায়োগ্যাস কারখানা, পেট্রোল পাম্প, সংবাদপত্রের ছাপাখানা সবই রয়েছে। এক সঙ্গে ১০ হাজার জামাকাপড় কাচার ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াশিং মেশিনও রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে কন্ট্রোল রুম, গোটা ডেরা জুড়ে নজরদারি ব্যবস্থা।
ডেরার বাইরেও রাম রহিমের দাপট কম নয়। ডেরা সচ্চা সৌদা সিরসায় একটি নিজস্ব বাজার তৈরি করেছে। সেখানে সব দোকানেরই নাম শুরু সচ্ দিয়ে। সিরসা ছাড়াও দেশেবিদেশে আরও ৪৬টি আশ্রম রয়েছে রাম রহিমের। রাম রহিম নিজেকে ‘মেসেঞ্জার অফ গড’ বলেন। তাঁর ‘এমএসজি’ ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু-তেল-সাবানের মতো হাজারো সামগ্রীর ব্যবসাও চলে এই আশ্রম থেকেই। আশ্রমে রাম রহিমের প্রবচন শুনতে দিনে গড়ে ৩০ হাজার লোক জড়ো হয়। মাত্র ছ’মিনিট ভক্তদের উপদেশ দেন। তার পরেই মঞ্চে ডিজে উঠে গান বাজাতে শুরু করেন।
মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই সিরসার ডেরায় ‘মিউজিক্যাল কার্নিভাল’-এর আয়োজন হয়েছিল। ১২ অগস্ট রাতের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অন্তত ৭০ লক্ষ মানুষ। মাঝরাতে মঞ্চে ওঠেন রাম রহিম। অদ্ভূতদর্শন লাল রঙের আলো ঝলমলে গাড়িতে। তারপর গান শোনাতে শুরু করেন। জলসা চলে রাত তিনটে পর্যন্ত। রাম রহিম অবশ্য শ’খানেক কনসার্ট করেছেন। বাবাজি ১৫ অগস্টেই ৫০ বছরে পা দিলেন। সেদিন ৩ ইঞ্চি মোটা, ৪২৭.২৫ বর্গফুটের কেক তৈরি হয়েছিল। তার উপরে একসঙ্গে দেড় লক্ষ মোমবাতি জ্বালানো হয়েছিল।
ধর্মগুরু রাম রহিম অবশ্য সংসারী। স্ত্রী হরজিত কউর ও তাঁর এক পুত্র ও দুই কন্যাও রয়েছেন। এছাড়াও একটি কন্যা দত্তক নিয়েছেন তিনি। মেয়েরা তাঁর সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। ছেলে জসমিতের বিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা হরমেন্দ্র সিংহ জস্সির কন্যার সঙ্গে। বড় মেয়ে চরণ প্রীতের দুই ছেলে রয়েছে। বাবাজি আদর করে নাতিদের নাম দিয়েছেন—সুইটলাক ও সুবাহ-এ-দিল।
সূত্র আনন্দবাজার