শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন অভিভাবকের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে প্রতি বছরই অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিলেও কার্যত কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ফি নির্ধারিত করে দেয়। কিন্তু দেশের কোথাও এ নিয়ম মানা হয়নি বলে জানা যায়। এক্ষেত্রে এলাকা বিশেষ ফি ধার্য করে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার ঘটনা ঘটে। সূত্র মতে, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য দাখিল পরীক্ষার বোর্ড নির্ধারিত ফি হচ্ছে এক হাজার ৫৫৫ টাকা বলে একটি মাদরাসার সুপার জানান, কিন্তু এই ফি কেউই নিচ্ছেন না। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই এর সাথে যোগ করে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন। আর এই ফি নেয়ার পরও কোন রশিদ দেয়া হচ্ছেনা বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের শ্যামারচর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার এবারের দাখিল পরীক্ষার্থী ৩৭ জন। সে জন্য ফরম পূরণ বাবত নেয়া হয়েছে দুই হাজার টাকা করে। অথচ বোর্ড নির্ধারিত ফি হচ্ছে এক হাজার ৫৫৫ টাকা। ফলে এ মাদরাসায় বাড়তি টাকা নেয়া হয়েছে ১৬ হাজার ৪৬৫ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদরাসার সুপার কে এম সুলতান মাহমুদ বোর্ডের নির্ধারিত ফি কত জানেন না। তবে তিনি বলেন, আমরা যে টাকা নিচ্ছি, তা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ি নিচ্ছি।
উপজেলার জগদল ইউনিয়নের রায়বাঙ্গালী শাহজালাল রহ. দাখিল মাদরাসার এবারের দাখিল পরীক্ষার্থী হচ্ছে ৫২ জন। পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে নেয়া হয়েছে এক হাজার ৮শত টাকা করে। ফলে এ মাদরাসায় বাড়তি নেয়া হয়েছে ১২ হাজার ৭৪০ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদরাসার সুপার মাওলানা শায়খুল ইসলাম জানান, আমরা যে টাকাটা নিচ্ছি, তা থেকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন খরচসহ আরো বিভিন্ন খরচ করতে ব্যয় করা হয়। তবে টাকা নেয়ার সময় রশিদ দেয়া হয় বলেও জানান তিনি।
দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের হাতিয়া পীর আকিলশাহ রহ. নেছারিয়া দাখিল মাদরাসার এবারের দাখিল পরীক্ষার্থী ২৭ জন। পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবত নেয়া হয়েছে এক হাজার ৬শত টাকা করে। সে হিসেবে এ মাদরাসা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি নিয়েছে এক হাজার ২১৫ টাকা। এ ব্যাপারে মাদরাসার সুপার মোঃ আবু সাঈদ সৈয়দ জানান, বোর্ডে যাতায়াত ও অনলাইনের খরচসহ এ টাকা নেয়া হচ্ছে, তবে আমরা টাকা নেয়ার সাথেই রশিদ দিচ্ছি।
উপজেলা সদরের পৌরশহরে অবস্থিত হাজী মাহমদ মিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার এবারের দাখিল পরীক্ষার্থী হচ্ছে ৫৯ জন। পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবত পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে এক হাজার ৭শত টাকা করে। সে হিসেবে বোর্ড নির্ধারিত ফি থেকে বেশি নেয়া হয়েছে আট হাজার ৫৫৫ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদরাসার সুপার মোঃ আব্দুল জলিল জানান, আমরা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি টাকা নিচ্ছি, প্রত্যেকের মোবাইল নাম্বার রাখা হয়েছে, পরে রশিদ দেয়া হবে।
উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল আশ্রম দাখিল মাদরাসার এবারের দাখিল পরীক্ষার্থী হচ্ছে ২১ জন। পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবত নেয়া হয়েছে দুই হাজার ১শত টাকা করে। সে হিসেবে বোর্ড নির্ধারিত ফি থেকে বাড়তি নেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৪৪৫ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার সুপার মাওলানা ফারুক আহমদ জানান, যদিও আমরা একুশ শ’ টাকা নির্ধারিত করেছি, কিন্তু সেই পুরো টাকা পাচ্ছিনা। বোর্ডের টাকা বাদে যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে আমরা অনলাইন খরচ ও পরীক্ষকদের ভাতা দিয়ে থাকি। যার কারণে কিছু টাকা বেশি নিতে হয়। তবে ফি বাবত নেয়া টাকার রশিদ দেয়া হবে।
দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের হায়দরিয়া দাখিল মাদরাসা (ভাটিপাড়া)-এর এবারের দাখিল পরীক্ষার্থী হচ্ছে ৩০ জন। তবে তারা এখন পর্যন্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদরাসার সুপার মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, আগামি ১০-১৫ তারিখের মধ্যে ফরম পূরণ করা হবে।
দিরাইয়ে দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য বাড়তি টাকা নেয়া ও রশিদ না দেয়ার ব্যাপারে আজ (বুধবার) জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত আমাকে কেউ লিখিতভাবে জানায় নি, অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ২৬/০৯/২০১৮ তারিখে ‘২০১৯ সনের দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয়। যার স্মারক নং-বামাশিবো/পরী/দাখিল-২০১৮/২৩৩৫। এই স্মারকের ৩নং ধারায় ফির বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।