জুলাই মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়। ২০২৪ সালের এই মাসের শুরুতে ছাত্র সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার—চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামলে শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশ বাহিনী গুলি চালিয়ে বহু ছাত্রকে শহীদ করে। এ গণঅভ্যুত্থান কেবল এক মাসের আন্দোলনের ফসল নয়, বরং ১৬ বছরের জুলুম, শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছিল এক গণবিস্ফোরণ। বুধবার (২ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সভাপতি ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ এবং সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ এই মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, এ দেশের শাসকগোষ্ঠী একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতায় বিরোধী দল ও মতকে নাগরিক বলেই মনে করত না। মুক্তিযুদ্ধকে একচেটিয়া দাবি করে তারা জাতিকে বিভক্ত করে দেয়, ইতিহাসকে করেছে দলীয়করণ। আর সেই ভিত্তিতে দেশ শাসন করতে গিয়েই তারা ইসলামী শক্তির ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালায়। নেতৃদ্বয় বলেন, ইসলামপন্থীরা এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে কখনো মাথা নত করেনি। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ইসলামপন্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে শুরু হয় এক দীর্ঘ প্রতিরোধ-ইতিহাস। সেই প্রতিরোধের ধারাবাহিকতা ছিল ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত, যখন ছাত্র-জনতা জীবন উৎসর্গ করে নব্য ফেরাউনের পতন ঘটায়।
তারা বলেন, জুলাই হলো আত্মত্যাগ, রক্ত এবং বিজয়ের ইতিহাস—যেখানে শত শত শহীদের রক্তে এক নতুন ইনসাফভিত্তিক ভবিষ্যতের বীজ রোপিত হয়েছে। শহীদদের এই কোরবানিই হবে একটি ইনসাফভিত্তিক ইসলামি বাংলাদেশের ভিত্তি। ইনশাআল্লাহ, এই দেশে আর কোনোদিন নব্য ফেরাউন ফিরে আসতে পারবে না। ইউকে জমিয়তের নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশে-বিদেশে ইসলামপন্থীদের ওপর জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠনটি সোচ্চার থেকেছে। হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য সমমনা ইসলামী দলসমূহও একই ভূমিকা পালন করেছে। জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার কারাবরণ করেছেন, আলেমদের বিরুদ্ধে শত শত মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
তারা বলেন, তবুও জমিয়তের আপোষহীন সংগ্রামের পথচলায় নব্য ফেরাউন পরাজিত হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ইসলামপন্থীরা বিজয় অর্জন করেছে—জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। নেতৃদ্বয় ছাত্র-জনতা, ওলামায়ে কেরাম, তরুণ সমাজসহ সকল ইসলামপ্রিয় জনগণকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইনসাফ, স্বাধীনতা ও ইসলামি চেতনা রক্ষায় একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, যদি এই ঐক্য টিকিয়ে না রাখা যায়, তবে আবারও জুলুম ও ফ্যাসিবাদের চক্র ফিরে আসতে পারে।