বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
ভাস্কর্য নিয়ে ‘অপমানজনক’ মন্তব্য করায় হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহের দুই মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালত এ নির্দেশ দেন। আদালত পিবিআইর ডিআইজিকে আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
এর আগে গতকাল সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। একইসঙ্গে সিএমএম আদালতেই মোহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগেই আরেকটি মামলা দায়ের করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক। পিবিআইকে দুটি মামলাই তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বাদীরা বলেছেন, বাবুনগরী, মামুন ও ফয়জুল করিম যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান এবং তা রাষ্ট্রবিরোধী। সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করা ও দেশে অরাজকতা সৃষ্টি’র সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এই তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাদীরা। মামলায় উল্লেখ্য করা হয়েছে, মামলার আসামি মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেছিলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। এই মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্বর কায়েম হবে। একই দিন আসামি সৈয়দ ফয়জুল করীম ধোলাইরপারের কাছে গেন্ডারিয়া নামক স্থানে তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উঁচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, ‘আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দেয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের ৭২ ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজ হোক, কাল হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে।
মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারীতে বলেন, মদিনা সনদে যদি দেশ চলে তাহলে কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে এবং ওই ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলা হবে।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে মামলার বাদী দাবি করেছেন, আসামিরা এ রূপ ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা ও সুযোগ-সুবিধা লাভের হীনউদ্দেশ্যে বিদেশি শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে ধর্মের লেবাসে সাধারণ মুসলমানদের উসকানি দিয়ে, ক্ষেপিয়া তুলে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে ঘৃণা এবং শত্রæর ভাব সৃষ্টি করেছে। ফলে আসামিদের নির্দেশে মধুদার ভাস্কর্য ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মিত ভাস্কর্যসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য ভাঙা হচ্ছে। এ প্রচারণা ও উসকানি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মালেক একই আদালতে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআই ডিআইজিকে আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলাটির অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, “আসামি মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ মিলনায়তনের এক আলোচনাসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, লাশের পর লাশ পড়বে, তবুও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গড়তে দেয়া হবে না।’ আর এই বক্তব্যের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমর্যাদা ও সম্মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় স্থানীয় মাদরাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।