মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
জোরপূর্বক জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ, চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

জোরপূর্বক জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ, চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

অলইতলী-জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে ফিরে মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: মসজিদ নির্মাণের নাম করে অন্যের রেকর্ডিয় জায়গা জোরপূর্বক দখল করে মার্কেট নির্মাণ ও সেই সাথে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে চাঁদাবাজি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জসিট) দাখিল করায় এলাকায় নিন্দার ঝড় ওঠার বিষয়টিও সরেজমিন গিয়ে পাওয়া যায়। তাছাড় নিজের স্বত্ত্ব ফিরে পাওয়া ও চাঁদাবাজি নিয়ে একাধিক মামলা দায়েরের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে পুরো উপজেলায় বিরাজ করছে এক ধরণের চাপা ক্ষোভ।
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহি গ্রাম ‘অলইতলী’। গ্রামের পাশেই রয়েছে ‘পল্লীগঞ্জ বাজার’ নামে একটি বাজার। বাজারের পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি টিনশেড পাকা মসজিদ। প্রায় ২৫ বছর আগে ১৯৯২ সালে এই বাজারের মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। কালের পরিক্রমায় মসজিদে মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়াতে এটি নতুন করে বর্ধিত করার পরিকল্পনা করেন এলাকাবাসি। পল্লীগঞ্জ বাজার কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল খয়ের এ প্রতিবেদককে জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে লন্ডনস্থ বাংলা টেলিভিশন ‘চ্যানেল এস’-এ এক সাক্ষাতকার প্রদান করি। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি পল্লীগঞ্জ বাজার জামে মসজিদে মুসুল্লীদের স্থান সংকটের কথাও তুলে ধরি। এতে তিনি লন্ডন প্রবাসি অলইতলী-কাতিয়া বিশেষ করে অলইতলী গ্রামের প্রবাসিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে। পরে এলাকায় পুরাতন মসজিদের স্থলে নতুন মসজিদ নির্মাণ করার জন্য একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জায়গা নির্ধারণ নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে এক পর্যায়ে দুটি পক্ষে বিভক্তি দেখা দেয়। তিনি আরো জানান, বাজার কমিটির সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আমরা এলাকার গণ্যমান্য মুরুব্বীদের ওপর ছেড়ে দিয়ে পরিষ্কার বলে দেই যে, কোন ধরণের দ্বন্দ্ব নিয়ে মসজিদ নির্মাণ হোক, আমরা তা দেখতে চাইনা। সকলের সমন্বয়ে আমরা একটি মসজিদ দেখতে চাই। আর মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকায় কোন ধরণের বিভক্তি, মামলা-মোকদ্দমা, সংঘর্ষ আমরা দেখতে চাইনা। আমরা বাজার কমিটির পক্ষ থেকে গ্রামবাসির কাছে অনুরোধ করেছি যে, সর্ব সাধারণের মতামতের ভিত্তিতে একটি সুন্দর মসজিদ চাই। বেশ কয়েকটি বৈঠক করার পর ২০১৫ সালে হঠাৎ করেই পুরাতন মসজিদের পাশে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হতে দেখি। পাইলিংয়ের প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন লন্ডন প্রবাসি সাজন উদ্দিন। তবে নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করার ব্যাপারে বাজার কমিটির সাথে কেউ কথা বলেনি। এ ব্যাপারে পল্লীগঞ্জ বাজার ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুল খয়ের ও কোষাধ্যক্ষ আখলিছ মিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, পুরাতনটি ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে আমাদের বক্তব্য গ্রামবাসির ওপর শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দিয়েছি, যাতে কোন ধরণের দ্বন্দ্ব প্রবেশ বা প্রকাশ না ঘটে। তবে নতুন মসজিদ নির্মাণ শুরুর বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলেও জানান।
এদিকে হঠাৎ করে মসজিদের পাশে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে দেখে বিষয় জানতে জিজ্ঞাসা করলে কাজের তদারকিতে থাকা জয়নাল উদ্দিনগংরা জানান যে, এখানে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি সেখানে তার জমির মালিকানা দাবি করলে এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে অনু মিয়া নিজের জমির স্বত্ত্ব দাবিসহ একই গ্রামের টগন উদ্দিনের ছেলে জয়নাল উদ্দিন এবং ছাদেক মিয়াকে আসামি করে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রিট আদালতে বিশেষ মোকাদ্দমা (নং-৫৭৩/২০১৬ ইং) দায়ের করেন। মামলায় তিনি তার স্বত্ত্ব দাবির পক্ষে কাগজপত্র জমা দিয়ে সেখানে কোন ধরণের কাজ না করার জন্য আদালতকে অনুরোধ জানান। আদালত পরে এ জায়গায় সকল প্রকার কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়।
অন্যদিকে অনু মিয়া কর্তৃক স্বত্ত্ব চেয়ে আদালতে মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে পল্লীগঞ্জ বাজার মসজিদ নির্মাণ কাজের ক্যাশিয়ার দাবিদার মোঃ আফজল মিয়া বাদি হয়ে অলইতলী গ্রামের মৃত আব্দুছ ছোবহানের ছেলে মোঃ অনু মিয়া ও মোঃ হানু মিয়া, মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে সফিকুর রহমান ওরফে তহুর, মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে গণি মিয়া, মৃত আমতর উল্লাহর ছেলে জিতু মিয়া, ঠাকুর মিয়ার ছেলে সিরাজুল আমিন ও তার ছেলে রাহিম মিয়াকে আসামি করে ১লা জানুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় ৩ লাখ টাকার একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ১লা জানুয়ারি তাদের দাবিকৃত মসজিদ নির্মাণ কাজ চলা অবস্থায় সেখানে গিয়ে আসামিগণ তাদের কাজ অব্যাহত রাখতে চাইলে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে না এবং হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে বলে বাদি মামলায় উল্লেখ করেন। মামলা দায়েরের পর তাৎক্ষণিকভাবে গত ৩ জানুয়ারি রাতেই মোঃ জিতু মিয়াকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয় এবং নিন্দার ঝড় ওঠে। একজন ভালো মানুষকে চাঁদাবাজ বানিয়ে গ্রেফতার করার তীব্র বিরোধিতা করে পল্লীগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল খয়ের জানান, চাঁদা চাওয়ার ঘটনা পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি চাঁদা দাবি করবেন তো দূরের কথা, তার কাছে কেউ এক টাকা বাকি পাবেনা বলেই আমি জানি। আর এ ঘটনার পেছনে একটি চক্র অবৈধ অর্থের লেনদেন করে তাদের দাপট দেখাতে চাচ্ছে। আমরা বাজার কমিটির পক্ষ থেকে এ সকল ন্যাক্কারজনক কাজের বিরোধিতা করি ও তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি। তিনি আরো বলেন, এলাকার লোকজনের সর্বসম্মতিক্রমে বাজার কমিটি গঠন করা হয়। বাজারে যাদের দোকান নেই, তারা বাজার কমিটির সদস্য হতে পারবেনা বলেই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর যারা বাজার কমিটির সদস্য হবে, তারাই মূলত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। এর বাইরে যারা দাবি করবে, তারা সবাই ভূয়া দাবিদার। এ ব্যাপারে পল্লীগঞ্জ বাজার কমিটির ক্যাশিয়ার আখলিছ মিয়া জানান, ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বাজার কমিটির ক্যাশিয়ার পদে আছেন। যদি এর বাইরে কেউ দাবি করে, তবে তার দাবি হবে মিথ্যা। বাজার মসজিদ কমিটির মুতাওয়াল্লী মাওলানা ইয়াহইয়া এ প্রতিবেদককে জানান, যেহেতু এলাকার লোকজনসহ এ বাজারে বাহিরের লোকজন এসেও বাজার মসজিদে নামাজ পড়েন, মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়াতে নতুন মসজিদ নির্মাণ প্রয়োজন; সেহেতু মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের বাজার কমিটির পক্ষ থেকে পরিষ্কার বক্তব্য দেয়া আছে এলাকাবাসির কাছে যে, কোন ধরণের দ্বিধাবিভক্তি কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় নিলে আমরা এর পক্ষে থাকবো না। এছাড়া মসজিদ নির্মাণ নিয়ে কোন দ্বন্দ্ব বা বিতর্কও আমরা সমর্থন করবো না। তিনি আরো বলেন, আমাদের ধারণা ছিলো যে এলাকার গণ্যমান্য লোকজন সর্বসম্মতিক্রমে পুরাতন মসজিদটি ভেঙে নতুন করে করবেন, কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর দেখলাম আলাদাভাবে কাজ হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম এলাকার লোকজন মসজিদের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছেন। অথচ বায়তুল্লাহ শরীফ নির্মাণের সময় বড় করার প্রয়োজনে পুরাতন অংশকেও মূল মসজিদের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বাজারের পশ্চিমপার্শ্বে পুরাতন মসজিদটি এখনো বিদ্যামান আছে এবং এর সামান্য অদূরে দক্ষিণ দিকে নতুন করে বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। এ নিয়ে এলাকায় ভিন্ন মতও পাওয়া যায়। কেউ বলছেন এটি মসজিদের নতুন ভবন আবার কেউ বলছেন মসজিদের মার্কেট। প্রকৃতপক্ষে এটি মসজিদ না মার্কেট-এ নিয়ে উভয়পক্ষের মামলা আদালতে শুনানীকালে ম্যাজিস্ট্রেট বিব্রতবোধ করে গত ৩১ জানুয়ারি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবেরা আক্তার বাজারে উপস্থিত লোকজন ও বাদি-বিবাদিদের সাথেও তিনি কথা বলে সকল প্রকার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন বলে তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একটি সূত্র জানায়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবেরা আক্তারের নিষেধাজ্ঞা জারির পরও জয়নাল উদ্দিনগংরা সেখানে কিছু কাজও করেছেন। পরে আবার প্রশাসনকে অবগত করানো হলে তা বন্ধ হয়। এখন পর্যন্ত সেখানে কোন ধরণের কাজ হচ্ছেনা বলে সরেজমিন দেখা যায়।
এদিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবেরা আক্তার তার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘১ম পক্ষ অনু মিয়ার কৌশলী নালিশা দাগে মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে এবং ২য় পক্ষ জয়নাল উদ্দিনের কৌশলী মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে মর্মে জানান। উভয়পক্ষের শুনানীর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্বয়ং নালিশা জমি পরিদর্শন করে ৩১ জানুয়ারি বহু লোকের সমাবেশের মধ্যে তদন্ত করি। উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ মসজিদ আবার কেউ কেউ মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে মর্মে জানান। নালিশা জমির একপার্শ্বে পূর্ব থেকেই একটি মসজিদ আছে মর্মে দেখা যায় এবং এই জায়গার ৭ জন মালিক আছে বলে জানা যায়। এদের মধ্যে আব্দুছ ছোবহানও একজন মালিক হিসেবে আছেন। আব্দুছ ছোবহানের একজন উত্তরাধিকারী ১৯৯২ সালে দলিলের মাধ্যমে ৪ শতক জমি মসজিদের নামে দান করেন এবং তার প্রেক্ষিতে মসজিদ নির্মিত হয়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ২য় পক্ষ জয়নাল উদ্দিনের দেয়া দলিলে দলিলদাতা ১০ জন উল্লেখ করা হলেও ১ জন আব্দুছ ছোবহানের উত্তরাধিকারী, বাকি ৯ জন দলিলদাতার বিষয়টি বুঝা যায়নি। কোন রেকর্ডীয় মালিকের সাথে সম্পর্কযুক্ত ও কিভাবে এই জমির মালিক, তারও উল্লেখ দলিলে নেই। দলিল প্রাপ্তির পূর্বে ২য় পক্ষ কিভাবে মসজিদের নির্মাণ কাজ করছে, তা বোধগম্য নয় বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।’
অন্যদিকে গত ১৪ মার্চ জগন্নাথপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) অঞ্জন চন্দ্র সরকার আফজল মিয়ার দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন। এতে জিতু মিয়াকে প্রধান আসামি করে তার সাথে অলইতলী গ্রামের মৃত আব্দুছ ছোবহানের ছেলে মোঃ অনু মিয়া ও মোঃ হানু মিয়া, মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে সফিকুর রহমান ওরফে তহুর, মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে গণি মিয়া, ঠাকুর মিয়ার ছেলে সিরাজুল আমিন ও তার ছেলে রাহিম মিয়ার নাম চুড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। চুড়ান্ত প্রতিবেদনে তিনি দাবি করেন, ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করে বাদি ও কতেক স্বাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত করি। বাদির দেয়া স্বাক্ষীগণের বক্তব্য নেয়া হয়েছে এবং আরো কিছু ব্যক্তির বক্তব্য নিয়ে চার্জসিট দেন বলে জানান। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সঠিকভাবে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চার্জসিট দিতে গিয়ে কোন ধরণের টাকা লেনদেন হয়নি। তবে মসজিদ কমিটির কারো সাথে তার কোন কথা হয়নি। বাদিপক্ষ যাদেরকে স্বাক্ষী হিসেবে নিয়েছে, আমি তাদের সাথে কথা বলেছি। চাঁদাবাজি মামলার বাদি মোঃ আফজল মিয়ার কোন স্বত্ত্ব নেই নির্মাণকৃত মসজিদের জায়গায়, তার কাছে কিভাবে চাঁদা দাবি করা হয়-প্রশ্ন করা হলে এসআই অঞ্জন চন্দ্র সরকার বলেন, এটা কোর্ট দেখবে, মূলত আমি চাঁদাবাজি মামলার বিষয়ে তদন্ত করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জসিট) দিয়েছি।
একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্বত্ত্ব দাবি করে দায়ের করা মামলার বাদি অনু মিয়া দাবি করেন, আইনী লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার ভয়ে তড়িগড়ি করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মিথ্যা ও বানোয়াট চাঁদাবাজির মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আবারো সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চাইছে স্থানীয় প্রশাসন। তিনি বলেন, যিনি চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন, তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এটি যে করেছেন, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এ ধরণের মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। তিনি আরো জানান, অলইতলী মৌজার ২২২নং জেএলস্থ ১০৪নং খতিয়ানের ৪৪৯নং দাগের মোট ৪ শতক জায়গা রয়েছে আমার। আমাকে কিছু না বলেই জয়নাল উদ্দিনগংরা মসজিদের নাম করে মার্কেট নির্মাণের পায়তারা করছে বলেই আমি স্বত্ত্ব মামলা দায়ের করেছি।
চাঁদাবাজি মামলার অন্যতম আসামি হাজী জিতু মিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, আমি নিজেই জানিনা কবে কার কাছে চাঁদা দাবি করলাম। কিন্তু আমাকে চাঁদাবাজি মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হলো। তিনি আরো বলেন, আমাদের বাজারে একটি মসজিদ রয়েছে, মুসুল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়াতে পুরাতনটি ভেঙে তা নতুন করে বড় আকারের মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে জায়গা নির্ধারণ করি। তবে এলাকাবাসির মতামত হচ্ছে যদি চিহ্নিত জায়গায় কারো মালিকানা থাকে বা কেউ জায়গা দিতে আগ্রহ না হন, তবে আমরা তাকে বুঝিয়ে বা জায়গার উপযুক্ত দাম দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করতে চাই। তবে এ নিয়ে কোন দ্বন্দ্বে যেতে চাই না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পর চিহ্নিত জায়গায় জয়নাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু হলে অনু মিয়া তার জায়গায় কার অনুমতি নিয়ে এ কাজ হচ্ছে জানতে চান এবং তা বন্ধ করতে বলেন। পরে কাজটি বন্ধ না হলে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি স্বত্ত্ব মামলা দায়ের করেন। এদিকে এই মামলার বিষয়ে আলোচনা করার কথা বলে জয়নাল উদ্দিন একজন সহজ-সরল মানুষ মোঃ আফজল মিয়াকে বাদি বানিয়ে ৩ জানুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় গিয়ে অনু মিয়াসহ ৭ জনকে আসামি করে চাঁদাবাজির বিষয়ে উল্টো আমাদের ওপর মামলা দায়ের করেন। রাত অনুমান দেড়টায় জগন্নাথপুর থানা পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরদিন কোর্টে চালান দেয়। এসব ঘটনায় আমি হতবাক হই এবং এলাকার মানুষও অবাক হয়ে যায়। একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা নিরীহ সাধারণ মানুষ এমন জঘণ্য মিথ্যা অপবাদ থেকে মুক্তি চাই।
পল্লীগঞ্জ বাজার কমিটির ক্যাশিয়ার আখলিছ মিয়া বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমি সর্বসম্মতিক্রমে দায়িত্বে রয়েছি। হঠাৎ শুনলাম যে, আমাদের বাজারে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে নির্মাণ কমিটি হয়েছে, এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা। তিনি আরো উল্লেখ করেন, মসজিদ নির্মাণ নিয়ে একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে; যা আদৌ সত্য নয়, এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমাদের দাবি হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চাই মামলা প্রত্যাহার হোক।
কথিত মসজিদ নির্মাণ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত হাজী জয়নাল উদ্দিন পল্লীগঞ্জ বাজার মসজিদ নির্মাণ, স্বত্ত্ব দাবি ও চাঁদাবাজির মামলা নিয়ে এ প্রতিবেদকের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে এই বাজারে বর্তমান পুরাতন মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে এখন মুসুল্লীর জায়গা হয়না এই মসজিদে। তাই এলাকাবাসির উদ্যোগে প্রবাসিরা অর্থ দিয়ে নতুন মসজিদ করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেন। আমি এলাকার মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে কাজ শুরু করি এবং কিছু কাজ হওয়ার পর অনু মিয়া নামে একজন স্বত্ত্ব দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করে বসে এবং এক পর্যায়ে আমাদের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করে। অন্যথায় তারা আমাদেরকে কাজ করতে দেবেনা। পরে আমাদের পক্ষের একজন বাদি হয়ে চাঁদাবাজির মামলা করলে স্থানীয় প্রশাসন মসজিদ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়। পুরাতনটা ভেঙে কেন নতুনটার সাথে সংযুক্ত করছেন না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি মক্তব ও তাবলীগের লোকদের জন্য রেখেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা চেয়েছিলাম এলাকার সবাই মিলে মসজিদের কাজ করতে, কিন্তু একটি মহল তা দিচ্ছেনা। ৪ তলা ফাউন্ডেশনের এই মসজিদটির ১ তলার কাজ শেষ করতেও চান বলে জানান হাজী জয়নাল উদ্দিন।
সরেজমিন অলইতলী গ্রাম ও আশপাশের বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, পল্লীগঞ্জ বাজার মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে একটি চক্র অবৈধ অর্থের লেনদেনে মেতে ওঠেছে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি না হওয়াতেই মূলত এই চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর যাকে কথিত চাঁদাদাবির মামলা দিয়ে পুলিশ জেলে পাঠিয়েছে, তিনি মূলত এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তড়িগড়ি করে চাঁদাবাজির মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জসিট) দাখিল করেছে বলেও মনে করেন এলাকার সাধারণ জনগণ। তারা প্রশাসনের প্রতি এই মিথ্যা মমালার সুষ্ঠু তদন্তেরও দাবি করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com