শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : জাতীয় সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দশম সংসদের সপ্তম অধিবেশনের প্রথম কার্র্যদিবসে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অধিবেশন কক্ষে ঢুকে নীরবে সামনের সারিতে নিজের আসনে বসেন লতিফ সিদ্দিকী। তখন অধিবেশন কক্ষে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন না। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন লতিফ সিদ্দিকী। ৭টা ২৪ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন। ৭টা ৩৯ মিনিটে শেষ করেন বক্তব্য। এ সময় অধিবেশন কক্ষে ছিল পিনপতন নীরবতা।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও প্রথমে সাড়া পাননি লতিফ সিদ্দিকী। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন তার উদ্দেশে বলেন, মাননীয় সদস্য, আপনি একটু পরে কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পর স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। লতিফ সিদ্দিকী ঢোকার সময় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছিলেন।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার যত আপত্তি সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ৪ দফা উল্লেখ করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে স্পিকারের চিঠির বিষয়ে। আমি বিবেচনা করি, এ চিঠির কারণে সংসদের স্বার্র্বভৌমত্ব ক্ষুণœ হয়েছে এবং সংবিধানের অপব্যাখ্যা হয়েছে। বিনা শুনানিতে কোনো সংসদের আসন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়া যথাযথ কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। আপনি আমাকে সময় দিয়েছেন। বিদায় বেলা শুধু এ কথা বলতে চাই- আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি, মানুষকে ভালোবেসেছি, বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করে মানবকল্যাণে শপথ নিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে আমি অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছি। আজকে আমার সমাপ্তির দিন। এ দিনে আমার কারো বিরুদ্ধে কোনো ধরণের বিদ্বেষ, অভিমান এবং অভিযোগ আনছি না। দেশবাসী যদি আমার আচরণে দুঃখ পেয়ে থাকেন আমি নতমস্তকে তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। মানুষের ভালোবাসাকে আমার সৃষ্ট মূলধন মনে করি। আমার নেতার অভিপ্রায়, আমি আর সংসদ সদস্য না থাকি। কর্মী হিসেবে নেতার একান্ত অনুগত ছিলাম। বহিষ্কৃত হওয়ার পর তার ব্যাত্যয় কিংবা ব্যতিক্রম সমুচিত মনে করি না। ইতিপূর্বে আমার প্রতিবাদ ছিল প্রতিকার পাওয়ার।
এখন দ্বিধাহীন কণ্ঠে, ঘৃণা বিদ্বেষ উগড়ে না দিয়ে, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করে দৃঢ় চিত্তে বাংলাদেশ সংসদের ১৩৩ আসনের (টাঙ্গাইল-৪) সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করছি। একই সঙ্গে মাননীয় স্পিকার আপনার বরাবর পদত্যাগ পত্রটি প্রেরণ করছি। আপনি অনুমতি দিলে আমি পড়েও শোনাতে পারি। তার বোধহয় প্রয়োজন নেই।’ লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য শেষ হলে কয়েকজন সংসদ সদস্যকে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায়। এর মধ্যে শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুও ছিলেন। এ সময় আমুর পাশের আসনে বসা তোফায়েল আহমেদকে তার হাত চেপে ধরতেও দেখা যায়।
বক্তব্য শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, গাজীপুরের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলসহ কয়েকজনের সঙ্গে করমর্দনও করেন লতিফ সিদ্দিকী।
গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় সমালোচনায় মুখে পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। সেই সভায় তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীর যতটা বিরোধী, তার চেয়ে বেশি হজ আর তাবলিগের বিরোধী।’
এরপর বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে চার বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা ২০০৯ সাল থেকে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরের বার তাকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর পদ থেকে সরানোর পাশাপাশি দলের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, তা মীমাংসার জন্য গত ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মেম্বার অব পার্লামেন্ট (ডিটারমিনেশন অব ডিসপিউট) অ্যাক্ট অনুযায়ী, ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও লতিফ সিদ্দিকীকে লিখিত বক্তব্য দিতে বলে ইসি। লিখিত বক্তব্য পাওয়ার পর গত ২৩ আগস্ট শুনানিতে হাজির হয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেলাম। এ নিয়ে আর শুনানি করার দরকার নেই।’