বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন মুসলমান বসবাস করে। ২০১১ সালে পিউ গবেষণা কেন্দ্রের করা এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট মুসলিমের ২০ শতাংশ হচ্ছেন ধর্মান্তরিত মুসলিম। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরো জানিয়েছে যে, গত শতাব্দীতে একমাত্র ইসলাম ধর্মই ছিল সবচেয়ে দ্রুত বিকশিত হওয়া একটি ধর্ম। কিন্তু সেখানে এখনো কেউ ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হন। তাদেরকে সহজে মেনে নিতে পারেনা তাদের পরিবার, সমাজ ও আন্তীয়রা। মূলত ইসলাম সম্পর্কে সেখানে মানুষের ভুল ধারণাই এর জন্য দায়ী। সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে এই বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানালেন তিন ধর্মান্তরিত মুসলিম নারী।
তাদের একজন ২৩ বছর বয়সী স্টেসি নাভারেত। তিনি যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তখন তার পরিবারের লোকজন এবং তার বন্ধুরা ভেবেছিল যে, তিনি তার মুসলিম স্বামীর মন পাওয়ার জন্য এমনটি করেছেন। মেক্সিকো এবং পুয়ের্তো রিকান বংশোদ্ভূত নাভারেত বলেন, ‘আমার বন্ধু এবং আমার পরিবারের লোকজন ভেবেছিল আমি মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়েছি, কিন্তু আসলে এরকম কোনো কিছুই ঘটে নি। প্রথমে আমার পিতামাতা এ বিষয়টি বুঝতে পারে নি, কিন্তু আমি শুধুমাত্র মজা তথা আনন্দ করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করিনি এমনটি জানতে পেরে তারা এখন এ বিষয়টি গ্রহণ করে নিয়েছেন।’ স্টেসি নাভারেত বলেন, ‘ট্রাম্পের আমেরিকায় বসবাস করা খুবই ভয়ের। আমি সাধারণত হিজাব পরিধান করি না যাতে করে লোকজন আমার পরিচয় সম্পর্কে জানতে না পারে। কিন্তু যখন আমি আমার স্বামী এবং সন্তানের সাথে থাকি তখন আমি এই ভয়ে থাকি যে, লোকজন হয়ত আমাদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবে।’
আরেকজন হলেন ৩৬ বছর বয়সী ইয়াশা আব্রাহাম। এই কৃষ্ণাঙ্গ নারী যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো রাজ্যে একজন ইহুদি হিসেবে বড় হয়েছেন। তিনি গত বছরের মে মাসে তার দাদার জন্মদিনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে না জেনে অনেক মন্তব্য করেছি এবং এক সময় তা বুঝতে পেরে আমি পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করা শুরু করি। আমি আর কপট থাকতে চাই নি তাই আমি আমার নিজেকে শিক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি কখনোই জানতাম না যে, এটি এভাবে আমার কাছে এসে ধরা দিবে। সৃষ্টিকর্তার সাথে একজন মানুষের ঠিক যে ধরনের সম্পর্ক হওয়া উচিত বলে আমি মনে করতাম তা আমি পবিত্র কুরআনে খুঁজে পাই।’
ইয়াশা আব্রাহাম একজন নাচের শিক্ষিকা। তিনি বলেন, তার নতুন ধর্ম চর্চা এখন তার কাছে সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় কারণ রক্ষণশীল মুসলিমগণ একে হয়তো ভালো চোখে দেখবেন না। তিনি বলেন, ট্রাম্পের যুগে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম হতে হলে চতুর হতে হবে। তার ভাষায়, ‘অনেক সময় যান চলাচলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যরা আমার ব্যাগ চেক করে দেখে এবং আমি সাধারণত কোথাও ভ্রমণের সময় হিজাব পরিধান করি না। আমি একজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং আমার জীবন এসব কিছুর মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত।’
তৃতীয়জন হলেন ৩৫ বছর বয়সী সারা মেকআলিস্টার। তিনি ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার কয়েক মাস পূর্বে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি জানান, পবিত্র কুরআন পড়ার ফলেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে উৎসাহ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি পবিত্র কুরআন খুলে দেখি তখন আমার মনে হয়েছিল আমি যেন আমার হৃদয় খুলে দিয়েছি। আর আমি যখন এই বইটি পড়তে শুরু করি তখন মনে হয়েছিল এটি যেন আমাকেই পড়তে শুরু করেছে।’
লুইসিয়ানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পি.এইচ.ডিতে অধ্যয়ন করার সময় তিনি পুরোপুরি হিজাব পরিধান করা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তখন অনুভব করতে শুরু করি যে, শ্বেতাঙ্গ মানুষেরা আমার মুসলিম হওয়া এবং হিজাব পরিধান করা দেখে নিজেদের শ্বেতাঙ্গ হওয়াটাকে অপরাধ মনে করছিল।’
সূত্র: মিক ডটকম