মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের গাগলী গ্রামে টাকা চুরিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত এখলাছুর রহমান হত্যা মামলার পলাতক আসামীদের গ্রেফতার ও হত্যায় জড়িত সকল আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় উপজেলার শান্তিগঞ্জ বাজারস্থ সমবায় মার্কেট ২য় তলায় অবস্থিত দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের ছেলে শাহীন আলম। তিনি বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪টায় গাগলী গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নান ওরফে লাখই মাস্টারের ছোট ছেলে আলফাতুর রহমানের দোকান থেকে একই গ্রামের আলাল মিয়ার মেয়ে আয়েশা বেগম দোকানের টাকা চুরি করে দৌঁড়ে চলে যায়। তখন মেয়ের পেছনে ছুটে যান আলফাতুর রহমানের বৃদ্ধ মা ময়না বেগম। তিনি ঐ মেয়ের পেছনে দৌঁড়ে তাদের বাড়িতে পৌঁছেন। এ সময় আলাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী আয়েশা বেগমের মা কুকিলা বেগমের কাছে নালিশ করেন। এ সময় কুকিলা বেগম ঘটনা চুরির সত্যতা যাচাই না করে উল্টো বৃদ্ধা ময়না বিবিকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কুকিলা বেগম তার হাতে থাকা ভাতের প্লেইট দিয়ে বৃদ্ধা ময়না বেগমের মাথায় সজোরে আঘাত করলে ময়না বেগম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর কুকিলা বেগম বৃদ্ধা ময়না বেগমকে লাটি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। তার আর্তচিৎকারে অন্যান্য প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। তখন এখলাছুর রহমান ও আলফাতুর রহমান সাংসারিক কাজে বাইরে ছিলেন। ঘটনার সংবাদ শুনে তারা বাড়িতে আসেন। ঘটনার বিবরণ শুনে এখলাছুর রহমান ও আলফাতুর রহমান বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করার প্রস্তুতি নেন। এ সময় খুনী আলাল মিয়াসহ তার সহযোগিরা দেশিয় ধারালো অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের বাড়িতে হৈচৈ শুরু করে। এ সংবাদ শুনে এখলাছুর রহমান বিষয়টি মিমাংসার উদ্দেশ্যে একাই খুনী আলালের বাড়ীতে যান। তার সাথে তার ভাই আলফাতুর রহমান ও আমি যেতে চাইলে তিনি নিষেধ করেন। তখন তিনি বলেন, আমার সাথে কেউ যাওয়ার দরকার নাই আমি ওদের সাথে ঝগড়া করতে যাচ্ছিনা বরং এলাকার একজন গণ্যমান্য শালিস ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিষয়টি মিমাংস করতে যাচ্ছি। এমতাবস্থায় এখলাছুর রহমান একাই খুনী আলালদের বাড়ীতে যান। ওদের বাড়ির উঠানে পৌঁছা মাত্রই খুনী আলালগংরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে তারা কয়েকজন মিলে আমার বৃদ্ধ পিতার উপর হামলে পড়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে। এ সময় তাদের মারপিট সহ্য করতে না পেরে তিনি সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন আশেপাশের জনতা তাকে উদ্ধার করলে আমরা জরুরী ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ আমার বাবাকে মৃত ঘোষণা করে। সাথে সাথে আমরা বিষয়টি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানাকে অবহিত করি। তখন পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত মৃত আকবর আলীর ছেলে আলাল মিয়া, আলাল মিয়ার ছেলে হাছান মিয়া, মৃত হাসিম উল্লাহর ছেলে কামরুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। ঘটনার পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর আমার পিতার দাফন শেষে আমি নিজে বাদী হয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের দর্পণ। আপনাদের সাহসিকতাপূর্ণ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সমাজের কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আমার পিতা নিহত হওয়ার পর থেকে আমি আমার পরিবার ও প্রতিবেশীদেরকে বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি এই মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাকেও প্রাণে মারার হুমকি দেয়া হচ্ছে। খুনীদের রক্ষায় একটি কুচুক্রীমহল নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা বিভিন্ন নাটক সাজিয়ে হত্যা মামলাটিকে বিতর্কিত করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে। ঐ কুচক্রীমহল গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় একটি ভুয়া সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ সুনামগঞ্জের স্থানীয় একটি পত্রিকায়ও প্রকাশ করেছে। যে সংবাদে আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিত থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং বস্থনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থি বলে তিনি উল্লেখ করেন। ঐ সংবাদ সম্মেলনের বিবরণ শুনে যে কারো হাসির খোরক হওয়াটাই স্বাভাবিক। সংবাদে উল্লেখিত সময় হিসেবে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত কথিত ঐ সংবাদ সম্মেলনের স্থান হিসেবে সুনামগঞ্জ শহরের বনানীপাড়ার একটি বাসা বলা হলেও বাসার ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কোন সাংবাদিকের নামও উল্লেখ করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মৃত এখলাছুর রহমানের ছেলে মো: শাহীন মিয়া। অথচ আমার নাম শাহীন আলম, এছাড়া গাগলী গ্রামে মৃত এখলাছুর রহমানের ছেলে শাহীন মিয়া নামে কোন লোক নেই। এমনকি উক্ত সংবাদটি শুধুমাত্র ২০ সেপ্টেম্বরের স্থানীয় একটি পত্রিকা ছাড়া আর কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। আমি উক্ত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ধরনের ভূয়া সংবাদ প্রকাশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সব মানুষকে একদিন চলে যেতে হবে তা ঠিক। কিন্তু আমার মরহুম পিতার মত আর কারো মৃত্যু যেন না হয় আমি এই দোয়া করছি। কতিপয় খুনীরা আমার বৃদ্ধ বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করল। এখন যারা এই খুনীদের রক্ষায় ষড়যন্ত্র করছে শীঘ্রই তাদের মুখোশ উন্মোচন হবে। এক্ষেত্রে গ্রাম এলাকায় এক নিরীহ পিতৃহারা সন্তান হিসেবে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। হত্যা পরবর্তীতে আসামীদের গ্রেফতার ও মামলা পরিচালায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের সময়োপযোগি কার্যক্রম আমার পিতার হত্যাকারীদের বিচারের ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। আমি সাংবাদিক বন্ধুগণ ও প্রশাসনের নেতৃবৃন্দকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। মামলা দায়েরের পর থেকে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি প্রদান করায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছি। আপনাদের কলমের শক্তিতে একজন পিতৃহারা ছেলে তার পিতা হত্যার বিচার পাবো বলে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত এখলাছুর রহমানের ছোট ভাই আলফাতুর রহমান, নিহতের সাড়ে ৫ বছরের ছেলে রাহিন মিয়া ও ৭ বছরের মেয়ে শরমিন বেগম, নিহতের ভাতিজা তোতা মিয়া, নিয়ামত উদ্দিন ও মনু মিয়া প্রমূখ।