সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
পারিবারীক রহস্যের জালে বন্দি থাকা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে সাত বছর বয়সী শিশু তোফাজ্জল অপহরণও হত্যাকান্ডের রহস্যজট খুলতে এবার তদন্তে নামলেন পুলিশ সুপার। সোমবার সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান (পিপিএম) সরজমিনে উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা গ্রামে এসে নিহত তোফাজ্জলের প্রতিবেশী ও নিকটত্বায়ীদের বসতঘর হতে রক্তমাথা সাদৃশ্য ভেঁজালুঙ্গি, সোফায় ব্যবহ্নত বালিশের উপরের কাপড়ের দুটি তোয়ালে জব্দ করেন।
কারাগারে থাকা সন্দেহভাজন আসামী উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের হবিবুর রহমান হবির ছেলে সারোয়ার হাবিব রাসেলের শয়ন কক্ষ হতে এসব আলামত জব্দ করা হয়। এর পুর্বে লাশ উদ্ধারের দিন রাসেলের শয়নকক্ষে থাকা খাঁটিয়ার বিছানার নীচ থেকে চিরকুট লেখার খাতাটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় হবিবুর রহমান হবি তার ছেলে রাসেল নিহত তোফাজ্জল ফুফ শিউলি ফুফা সেজাউল করিম, সেজাউলের পিতা কালা মিয়া, শিউলির দুই ভাই সালমান হোসেন ও লোকমান হোসেন জেলা কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে থানা পুলিশের আবদনের প্রেক্ষিতে সোমবার চীফ জুডিসিয়াল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শুভদ্বীপ পাল কারাগারে আটক সাত আসামীর রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এরমধ্যে নিহত তোফাজ্জলের ফুফু শিউলি,ফুফাত ভাই সারোয়ার হাবিব রাসেলের পাঁচ দিন এবং অন্য পাঁচ আসামীর তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান জানান, আসামীদের কারাগার হতে সোমবার রাতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাহিরপুর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রসঙ্গত; গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিযনের চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা গ্রামের জুবায়ের হোসেনের শিশু সন্তান তোফাজ্জল হোসেন (৭) মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নিজ গ্রাম হতে বিকেলে নিখোঁজ হন।
পরদিন বৃহস্পতিবার এ ঘটনাটি পরিবারের পক্ষ হতে লিখিতভাবে থানায় জানানো হয়। পরবর্তীতে শনিবার ভোররাতে উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের এক প্রতিবেশীর বাড়ির পেছনে সিমেন্টে’র বস্তায় বন্দি অবস্থায় শিশু তোফাজ্জলের লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ।
শিশু তোফাজ্জলের ডান চোখ উপরে ফেলে তাকে নৃশংশভাবে হত্যারপর লাশ সিমেন্টের বস্তায় বন্দি করে ফেলে রেখে যায় ঘাতকরা।
নিহত তোফাজ্জলের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, অপহরণের পর চিরকুট লিখে ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করার পর মুক্তিপণ না পেয়ে তোফাজ্জলকে হত্যা করা হয়।
জানা গেছে, পূর্ববিরোধ ও মামলা-মোকদ্দমা চলাকালীন অবস্থায় তোফাজ্জলকে অপহরণ করা হয়। শিশুটির ফুফুর জামাই সেজাউল কবির ও ফুফুর শশুর সেজাউলের পিতা কালা মিয়াকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যাকান্ডে জড়িত রয়েছেন এমন সন্দেহ করছে নিহতের পরিবার।
শনিবার রাতে নিহতের পিতা বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে শিশু তোফাজ্জলকে অপহরণকরত হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে লাশ উদ্ধারের পর থানা পুলিশ দু’দফায় ফুফু, ফুফা ও প্রতিবেশীসহ নয় জনকে জ্ঞিাসাবাদের জন্য আট করে থানায় নিয়ে আসার পর রবিবার সাত জনকে ওই মামলায় সন্দেহভাজন আসামী হিসাবে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা করাগারে পাঠায়।
অপরিদেকে সোমবার বেলা ১১টায় পুলিশ সুপার সরজমিনে ঘটনাস্থল উপজেলার বাঁশতলা গ্রামে এসে নিহত তোফাজ্জলের পিতা জুয়ায়ের ও তার স্ত্রী লিয়া আক্তারের সাথে কথা বলে তাদেরকে শান্তনা দেন এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্ব্বোচ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার রাতে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন, তদন্তে বেশ অগ্রগতি হলেও এ ঘটনার সাথে কে বা কারা জড়িত কিংবা কী কারনে শিশু তোফাজ্জলকে এমন নৃশংশকায়দায় হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে? ঠিক এখই তা বলার মত সময় হয়নি।
আলামত হিসাবে ওই গ্রামেরও নিহতের নিকটাত্বীয়ের শয়নকক্ষ হতে ভেজা লুঙ্গি ও সোফায় ব্যবহ্নত বালিশের উপর থাকা দুটি কাপড়ের কাভার জব্দ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তদন্তকাজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে শিশু তোফাজ্জল অপরহণ পরবর্তীতে এমন নৃশংশ হত্যাকান্ড সম্পর্কে জানানো হবে।