বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

রোহিঙ্গাদের নতুন জীবন: ভাসানচরে প্রথম পা রাখল এক হাজার ৬৪২ জন

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নতুন জীবন শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সাতটি জাহাজে তাদের চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা ২টায় তারা ভাসানচরে পৌঁছান। সেখানে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। ভাসানচর ঘাটে পৌছার পর করোনার কারনে সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যদিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের নতুন জায়গায় স্থানান্তর শুরু হলো।

পর্যায়ক্রমে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া হবে। ক্যাম্পগুলোতে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রথম দিনে এক হাজার ৬৪২ জনকে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্যাম্পের চেয়ে উন্নত জীবন যাপনের প্রত্যাশা নিয়ে স্বেচ্ছায় এসব রোহিঙ্গারা ভাসানচরে গেছেন।

পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর বোটক্লাব জেটি থেকে সকালে নারী-শিশুসহ রোহিঙ্গাদের নিয়ে সাতটি জাহাজ ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজ বেলা ২টায় ভাসানচরে পৌঁছান। সেখানে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে পুরুষ ৩৬৮ জন, মহিলা ৪৬৪ জন ও শিশু রয়েছে ৮১০ জন। ভাসানচর ঘাটে পৌছার পর করোনার কারনে সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া মানবিক সহায়তা প্রদানে ইতিমধ্যে ২২টি এনজিও প্রতিনিধিরা ভাসানচরে অবস্থান করছে। জানা গেছে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য তিনমাসের খাদ্য মজুত রাখা হয়েছে। বেসরকারী সংস্থাগুলো প্রথম দিকে রান্না করার খাবার পরিবেশন করবে। পরবর্তীতের রোহিঙ্গা পরিবারগুলো নিজেরা রান্না করবে। ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গারা সুস্থ রয়েছেন। নোয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, আগত রোহিঙ্গাদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম ও ওষধ মজুত রাখা হয়েছে।

নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, নৌবাহিনীর ছয়টি এলসিইউতে ও সেনাবাহিনীর জাহাজ শক্তি সঞ্চারে করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া হয়। এছাড়া নৌবাহিনীর জাহাজ শাহ মখদুম ও শাহ পরানে করে রোহিঙ্গাদের এক হাজার ১৯টি লাগেজসহ মালপত্র সকালেই ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রোহিঙ্গাদের এই বহরের সঙ্গে নৌবাহিনীর দুটি ও কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজ ছিলো। এছাড়া দুটি হাইস্পিড বোট, দুটি ডিফেন্ডার বোট ও চারটি কান্ট্রি বোট বহরের সাথে যায়।

তার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন ধাপে ৪০টি বাসে শতাধিক পরিবারের দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া ছাড়েন। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাদের চট্টগ্রামে আনা হয়। রাতে তাদের পতেঙ্গার বিএএফ শাহীন কলেজ ও কয়েকটি অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হয়। সেখানে তাদের রাতের খাবার ও সকালের নাস্তা দেওয়া হয়।

স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের গত বুধবার রাত থেকে উখিয়া কলেজ মাঠে আনা হয়। সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্পে খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। তাদের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়। পরে তাদের ডাটা এন্ট্রি করে বাসে তোলা হয়। মালাবাহী কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকে তাদের মালামাল নিয়ে আসা হয়।
জাহাজে উঠার সময় রোহিঙ্গাদে হাসি-খুশি দেখা গেছে। তাদের কয়েকজন জানান, ক্যাম্পের চেয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপনের জন্য তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছেন। সেখানে তারা চাষাবাদ করতে পারবেন, ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার সুযোগ পাবেন। তাদের স্থানান্তরে সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য তারা সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

এদিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। ইতিহাসের নজিরবিহীন গণহত্যার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য সেখানে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি করেছে সরকার। ২০১৭ সালের নভেম্বরে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এই চরে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে।

সেখানে এক লাখ এক হাজার ৩৬০ জন বসবাস করার মত গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২০টি গুচ্ছগ্রামে ঘরের সংখ্যা এক হাজার ৪৪০টি। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় দুটি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য এক বছরের রসদ মজুত করা হবে। তার সাথে রোহিঙ্গাদের জন্য নানা ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি ২২টি সাহায্য সংস্থাকে যুক্ত করা হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মাঝে বেশ কয়েকদিন রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে।

amarsurma.com

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com