রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
নির্বাচন কমিশন নিয়োগে মন্ত্রিসভায় যে আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে তাতে ‘পর্বতের মুষিক প্রসব’ বা একটি ‘পচা কদু’ হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান একথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘অনুগত ও অপদার্থ নির্বাচন কমিশন গঠনের চলমান প্রক্রিয়াকে দলীয় স্বার্থে আইনি রুপ দেয়ার সরকারি অপপ্রয়াসের ফলাফল হবে ‘যেই লাউ, সেই কদু’। এবার সম্ভবত হতে যাচ্ছে একটি পঁচা কদু।” ‘‘এটা পর্বতে মুসিকের চেয়ে বেশি কিছু প্রসব করবে না। এতো দিন ধরে যেটা প্রশাসনিক কায়দায় হয়েছে এখন সেটা আইনি কায়দায় হবে।আমরা ওইজন্য বলেছি যে, ‘যেই লাউ, সেই কদু।”
‘পঁচা কদু’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘ পঁচা কদু এজন্য বলছি যে খসড়া আইন আরেক প্রস্তাব করা হয়েছে যে, সরকারি চাকুরির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছাড়া কেউ এটার সদস্য হতে পারবেন না। অর্থাত সিভিল সোসাইটির কেউ অথবা কোনো শিক্ষাবিদ, কোনো আইনজ্ঞ তারা কেউ সদস্য হতে পারবেন না। দুনিয়ার কোথায় এরকম বিধি-নিষেধ আছে।”
‘‘এই যে সারা জীবন সরকার আদেশ মেনে চলার যাদের অভ্যাস সেই সরকারি কর্মকর্তা বা যাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার তাদেরকেই দিয়ে শুধূ নির্বাচন কমিশন হবে এরকম একটা আইন করা-এটা তো সেই কদু .. আমরা সেজন্য বলেছি যে, সম্ভবত পঁচা কদু হতে যাচ্ছে।”
খসড়া আইনের সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘ বিনা ভোটের অনির্বাচিত একটি অবৈধ সরকারের নিকট থেকে জনগন এর চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করে না বলে তারা মনে করে যে, একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের নৈতিক যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের।”
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। চলতি অধিবেশনে আগামী রোববার বিলটি পাসের জন্য সংসদে উস্থাপন করবেন আইনমন্ত্রী্ আনিসুল হক।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এতে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশন গঠনে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া আইন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
‘শেখ হাসিনার অধিনে নির্বাচন নয়’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমরা তো এই সরকারের এবং এই সরকারি প্রশাসনের অধিনে নির্বাচন করতে রাজী না। আমরা এটা বলে দিয়েছি যে, এই সরকার যারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত না তারা গণবিরোধী এবং তাদের সাজানো যে প্রশাসন তার অধিনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। আর তাদের করা যে নির্বাচন কমিশন অযোগ্য, অপদার্থ হিসেবে সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত তাদের অধিনে তো আমরা নেই।”
‘‘আর তারা এবার যেটা করতে যাচ্ছে এটা আলটিমেটলি একই জিনিস দাঁড়াবে। আইনে যেটা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে..। দেখেন আমাদের সংবিধানে পরিস্কার বলা আছে যে, সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কাজেই যে যেই আইন বলেন আর যাই বলেন ফাইনালি তার এ্যাপ্রুভেবল ছাড়া কিছুই হবে না। আর উনি এই এতো দিন ধরে যা করে আসছেন তার বাইরে কিছু করবেন তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নাই।কাজেই এই সরকার, এই সরকারি প্রশাসন, এবং এই সরকার কর্তৃক কোনো নির্বাচন কমিশনের অধিনে আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার কথা তো পরে.., জনগন নির্বাচন করতে কিনা সেটা্ দেখা যাবে।”
‘প্রেসিডেন্টের সংলাপ অর্থহীন’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম সেটা হলো, একদিক থেকে প্রেসিডেন্টেরও কোনো ক্ষমতা নাই, যারা গেছেন তাদেরও কোনো ক্ষমতা নাই। এই সংলাপ অর্থহীন এটা ইতিহাস প্রমাণ করে। এই সংলাপে কোনো কিছুই অর্জিত হয় নাই বরঞ্চ ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির আরো অবণতি হয়েছে।”
‘‘এবার কী হলো? প্রেসিডেন্ট সংলাপ আহবান করলেন, অনেকেই গেলো, নানা প্রস্তাব করলেন তার কাছে। বিভিন্নভাবে প্রস্তাব। একজন এটাও বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারেও বলেছেন।কিন্তু এর কোনো কিছু কি আমরা দেখলাম? আমরা কী জানি যে, প্রেসিডেন্ট কী প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব করেছেন, যে আপনি একটা আইন করেন। অর্থাত সংলাপের জায়গায় সংলাপ, সিদ্ধান্তের জায়গায় সিদ্ধান্ত। উনাকে(প্রেসিডেন্ট) সংলাপ করতে দিয়ে মন্ত্রিসভা আইন প্রনয়নের কাজ করেছে। কাজে্ই এই সংলাপ.. সেই কারণেই আমরা যাই না। এটার কোনো অর্থ নাই।”