শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : নিজের বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি’ বলে সম্বোধন করা আদালত অবমাননা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এতেই ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তার দলের নেতারা। গণভবনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জিয়াউর রহমান ও এরশাদকে ‘অবৈধ রাষ্ট্রপতি’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘হাইকোর্টের স্পষ্ট রায় আছে, জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ। এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। তাই পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল ঘোষিত হয়েছে। কাজেই সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বা জিয়াউর রহমান, কেউ কিন্তু আর রাষ্ট্রপতি নন। কারণ তারা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আইনগতভাবেই এরশাদ সাহেব সাবেক বৈধ রাষ্ট্রপতি, অবৈধ বলার সুযোগ নেই। আদালত তো একটা সুনির্দিষ্ট সময়কালকে অবৈধ বলেছেন। আর আদালত যে সময়কে অবৈধ বলেছেন, সেই ১৯৮২ সালে এই শেখ হাসিনা এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর দ্বৈতনীতি। যখন সুবিধা তখন ভাল বলেন, অন্য সময় খারাপ বলেন। এই দ্বৈতনীতিকে আমরা খারাপ মনে করি।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) যখন এরশাদ সাহেবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তখন অবৈধ সরকারকে কীভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন? এটা তো নীতিগতভাবে অবৈধ। আর আইনগতভাবেও মনে হয় অবৈধ। এটা জানার পর অবৈধ সরকারকে স্বাগত জানানো মানে অবৈধ সরকারের সহযোগী হওয়া। এটা তো আইনগতভাবে অবৈধ। তাহলে তারা অবৈধ কাজের সহযোগী ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক সমস্যায় আছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও তিক্ততা সৃষ্টি করবে, যা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।’
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) কী কারণে এ কথা বলেছেন তা জানি না। ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবরের নির্বাচনের পর থেকে আদালতের রায় অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল বৈধ। এর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগই অংশ নিয়েছে। সেই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমপি নির্বাচিত ও বিরোধীদলীয় নেত্রী হয়েছিলেন। উনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে আমার প্রশ্ন, অবৈধ রাষ্ট্রপতির অধীনে উনি কীভাবে বৈধ বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন?’ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যেহেতু ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসনামলকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বৈধতা দিয়েছেন। সেহেতু রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল বৈধ। কেননা এরশাদ সাহেবই তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। অতএব এরশাদ সাহেব বৈধ রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি সঠিক নয়।