মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : ‘কী মোহাম্মদ আলী, কেমন আছিস দোস্ত?’, ‘আরে নাসির, খবর কি বন্ধু? মরু কোথায় আছে রে, তাকে দেখছি না?’ কথাগুলো রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের। পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি ও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই হঠাৎ করে আজ সোমবার কিশোরগঞ্জ আদালতপাড়ায় হাজির হন রাষ্ট্রপতি। এ সময় তিনি দীর্ঘদিনের কর্মস্থলের ফেলে যাওয়া বন্ধু ও সতীর্থদের খোঁজ করেন এবং উপস্থিত সবার সঙ্গে কথা বলেন। কর্মব্যস্ত আদালতপাড়ায় হুট করে রাষ্ট্রপতিকে দেখে আইনজীবীসহ সবাই হতবাক হয়ে যান।
শুধু কি তাই, এর আগে দু’দিনের সফর শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দুপুর পৌনে ২টার দিকে কিশোরগঞ্জ শহরের খড়মপট্টি এলাকার বাসভবন থেকে বের হন। কিন্তু তিনি হেলিপ্যাডের উদ্দেশে অপেক্ষমাণ গাড়িতে না উঠে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করেন। তাঁর নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে হতভম্ব হলেও দ্রুত সামলে নিয়ে রাষ্ট্রপতির পিছু নেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বাসার পাশের প্রেসক্লাবের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। সামনের চত্বর পেরিয়ে তিনি মূল ভবনের সামনে উপস্থিত হন। কিন্তু সে সময় কোনো সংবাদকর্মী না থাকায় প্রতিষ্ঠানের পিয়নের দায়িত্ব পালনকারী হাফিজুর রহমান রাষ্ট্রপতির সামনে এসে সালাম দেন। তাঁকে দেখে রাষ্ট্রপতি কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে বেরিয়ে আসেন।
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমাকে কেমন আছি, কোথায় থাকি জিজ্ঞাসা করেছেন। তিনি স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রায়ই প্রেসক্লাবে এসে সময় কাটাতেন। তিনি অনেক বড় মনের মানুষ।’ প্রেসক্লাব থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রতিবেশী নুরুজ্জামানের নির্মাণাধীন বাড়ির দিকে এগিয়ে যান। নুরুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এসে আমার কুশল জিজ্ঞেস করে বাড়ি নির্মাণের খোঁজ-খবর নিয়েছেন।’
পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ হেলিপ্যাডের উদ্দেশে গাড়িতে চড়ে বসলেও জজকোর্টের সামনে এসে অনির্ধারিতভাবে হঠাৎ করে নেমে পড়েন। জজকোর্ট ভবনের ভেতর দিয়ে হেঁটে তিনি আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনের খোলা চত্বরে হাজির হন এবং রৌদ্রের তাপ উপভোগ করা আইনজীবীদের মধ্যে তিনি একটি চেয়ারে বসে পড়েন। খবর পেয়ে অন্য আইনজীবীরা কাজকর্ম ফেলে দ্রুত রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটে আসেন। এ সময় তিনি সবার খোঁজখবর নেন এবং ১৫ মিনিট তাঁদের মধ্যে অবস্থান করে হেটে মূল রাস্তায় এসে গাড়িতে ওঠেন।
১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তখন তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম জাতীয় সংসদের একজন তরুণ সংসদ সদস্য। এরপর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন এবং আরো অনেকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ কর্মগুণে তিনি একের পর এক সিঁড়ি ভেঙে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সর্বোচ্চ শিখরে উঠলেও আইন পেশায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘ টানা ২০ বছর। কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৪৮৮ জন আইনজীবীর মধ্যে জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে তাঁর অবস্থান বর্তমানে ১২তম স্থানে। রাজনীতির মতো আইনজীবীদের নেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। পাঁচ-পাঁচবার কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে তিনি এ পেশার মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে ডেপুটি স্পিকার মনোনীত হওয়ার পর বাধ্য হয়ে তিনি আইন পেশা ত্যাগ করেন। কিন্তু আইন পেশা ছেড়ে গেলেও তিনি ভুলে যাননি আদালতপাড়ায় ফেলে যাওয়া বন্ধু ও সহকর্মীদের।
রাষ্ট্রপতির বন্ধু কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতির অন্যতম জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘পুরোনো বন্ধু ও এ পেশার লোকজনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণেই তিনি (রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ) এভাবে আমাদের মাঝে ছুটে এসেছেন।’ অপর বন্ধু জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নাসির উদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘এর আগেও সময়-সুযোগ পেলেই তিনি আমাদের মাঝে ছুটে এসেছেন। তবে তখন আসতেন প্রটোকল নিয়ে। প্রকৃত হিতৈষী বলেই এবার এভাবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ছুটে এসেছেন।’ রাষ্ট্রপতির সহপাঠী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল মালেক ভূঁইয়া বলেন, ‘বন্ধুদের প্রতি ওনার ভালোবাসা সহজাত ও অকৃত্রিম। তিনি কখনো বন্ধুদের ভোলেন না।’