বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
মার্কিন নির্বাচন: যে ইস্যুতে মঙ্গলবার ঘায়েল হতে পারেন ট্রাম্প

মার্কিন নির্বাচন: যে ইস্যুতে মঙ্গলবার ঘায়েল হতে পারেন ট্রাম্প

amarsurma.com

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা-দু’দিক থেকেই বিশ্বের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত সেখানে ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি।

প্যানডেমিকের ভয়াবহ এই চিত্র এখনও বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি। বরঞ্চ নির্বাচনের ঠিক আগে সংক্রমণের সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়ছে। প্রতিদিন এখন প্রায় ৮৯ হাজার আমেরিকান নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। মার্কিন বিশ্লেষকদের মধ্যে বড় কোনো দ্বিমত নেই যে আমেরিকায় এবারের নির্বাচনে এক নম্বর ইস্যু করোনা ভাইরাস। তাদের অনেকেই বলছেন, এবার রেকর্ড আগাম ভোটের অন্যতম কারণ কোভিড। বিধিনিষেধের কারণে মঙ্গলবার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারার উদ্বেগ যেমন এই আগাম ভোটারদের মধ্যে কাজ করেছে তেমনি অনেক পর্যবেক্ষকের মতে-কোভিড মোকাবেলায় সরকারের পারফরমেন্সে নিয়ে তাদের মনোভাব ব্যালটের মাধ্যমে দেখাতে অনেকেই উন্মুখ।

ইতিমধ্যে, রেকর্ড ৯ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন যা ২০১৬ সালে দেয়া মোট ভোটার উপস্থিতির ৬০ শতাংশ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গত সাত মাস ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্যানডেমিক সামাল দিতে যা করছেন বা বলছেন, ভোটের সিদ্ধান্তে তার প্রভাব কী হচ্ছে? দু’দিন আগেও ওয়াশিংটনের রাস্তায় বিবিসির একজন সংবাদদাতা ভোটারদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুনেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ এক তরুণী বলেছেন, ‘যেভাবে তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন তা খুবই দুর্বল।’ অন্যদিকে মাঝবয়েসী শ্বেতাঙ্গ এক নারীর কথা ছিল এরকম, ‘প্রেসিডেন্ট চাইছেন সবাই যেন আতঙ্কিত না হয়ে পড়ুক। আমি সেটা পছন্দ করছি।’ আরেক শ্বেতাঙ্গ তরুণীর বক্তব্য, ‘অত্যন্ত ভালো কিছু তিনি করেননি, আবার যে খুব খারাপ কিছু করেছেন তাও আমি বলব না।’

ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক জো গার্সটেনসন বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসের মোকাবেলা যা করছেন অধিকাংশ আমেরিকান তাতে খুশী নন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট যা করছেন তা হলো প্রতিদিনের পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করে সেই মত তিনি সাড়া দিচ্ছেন।’ সর্বশেষ জনমত জরীপও বলছে যে প্রতি ১০ জন আমেরিকানের ৭ জনই মনে করছেন কোভিড-১৯ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ‘ভুল বার্তা’ দিচ্ছেন। তবে রিপাবলিকান সমর্থকদের সিংহভাগই এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের পেছনেই রয়েছেন।

অধ্যাপক গার্সটেনসন বলেন, ‘শুধু যে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মতামতে ভিন্নতা রয়েছে তাই নয়, এলাকা ভিত্তিতেও জনমত ভিন্ন। যে এলাকার মানুষ এই প্যানডেমিকে মানুষ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা ক্ষিপ্ত।’ যেমন, বছরের শুরুর দিকে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জনমত জরীপে জো বাইডেন খুব সামান্য এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু গ্রীষ্মে ঐ রাজ্যে কোভিড-১৯ ভয়ঙ্কর রূপ নেয়ার পর বাইডেনের পক্ষে সমর্থন অনেক বেড়েছে। অ্যারিজোনায় এই প্যানডেমিকে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৫ হাজার ৯২০ জন।

উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালের ভোটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবারও বছরের অধিকাংশ সময় জুড়ে ট্রাম্পের সমর্থনে তেমন কোনো ভাটা দেখা যায়নি। কিন্তু অক্টোবর মাসে হঠাৎ সংক্রমণ হুহু করে বাড়তে থাকায় জনমত ঘুরে গেছে। সর্বশেষ জনমত জরীপে উইসকনসিনে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে সাত থেকে ১৭ পয়েন্ট এগিয়ে গেছেন। এছাড়াও, যে রাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানদের অন্যতম একটি ঘাঁটি সেই টেক্সাসেও ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে নিয়ে বিরূপ মনোভাবে স্পষ্ট হচ্ছে। কারণ, দুই দফা সংক্রমণে টেক্সাস বিপর্যস্ত। কোভিডে এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৪০ জন মারা গেছে। টেক্সাসের চিত্রশিল্পী শেন রেইলি তার রাজ্যে কোভিডে এত লোকের মৃত্যুতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় রক্ষণশীলদের ভোট দিয়েছি। কিন্তু এই প্যানডেমিক মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা যা করছে তাতে জীবনে প্রথমবারের মত আমি ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেব।’

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব ক্রোধের তেমন তোয়াক্কা করছেন না। দু’দিন আগে শনিবার পেনসিলভানিয়ার নিউটন শহরে শনিবার এক সভায় তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে মশকরা করে বলেন, ‘জো বাইডেন কি বলছেন আমি গতকাল তা দেখলাম। তার মুখে সেই একই বুলি – কোভিড, কোভিড আর কোভিড। বলার মত তার কাছে আর কিছু নেই।’ ট্রাম্পের ঐ প্রচারণা সভায় অনেকের মুখেই মাস্ক ছিলনা।

শনিবার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি একটি হিসাব প্রকাশ করেছে যে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রচারণা সভার কারণে অতিরিক্ত ৩০ হাজারেরও বেশি লোক কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে অতিরিক্ত ৭০০ জন। অবশ্য সরেজমিনে তদন্ত নয়, বরঞ্চ প্রচলিত একটি গাণিতিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে তারা এই রিপোর্ট দিয়েছে। অবশ্য অধ্যাপক গার্সটেনসন মনে করেন, বহু মানুষের ভোটের সিদ্ধান্তের পেছনে করোনাভাইরাস প্যানডেমিক একমাত্র বিবেচ্য নয়। তিনি বলেন, ‘খুব কম রিপাবলিকানই, বিশেষ করে যারা দলের ঘোরতর সমর্থক, তাদের দলীয় আনুগত্য ভঙ্গ করে জো বাইডেনকে ভোট দেবেন।’ তবে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে যদি আমেরিকায় রাজনৈতিক পট বদলে যায়, কোভিড নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পারফরমেন্সকেই তার প্রধান কারণ হিসাবে দেখা হবে।

সূত্র: বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com