বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। প্রতিদিনই নারী নির্যাতনের অসংখ্য খবর প্রকাশিত হচ্ছে নানা মিডিয়ায়। পথ ঘাট থেকে অফিস আদালত কোথাও নিরাপদ নয় নারী। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে ১০০ দিনে ৩৯৬ জন নারী শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হয় যখন আমরা এ ধরনের নৈতিক স্খলনের খবর কোন শিক্ষাঙ্গন থেকে পাই। কেননা শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে সভ্যতা ও নৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার স্থান। যেখানে মানুষ আচার-ব্যবহার, সভ্যতা ও নৈতিকতা শিখবে সেখানেই যদি এগুলোর অবক্ষয় ঘটে তাহলে এই সমাজ মানুষের সমাজ হিসেবে কী করে টিকে থাকবে? যারা জ্ঞানের আলো বিচ্ছুরণে ভূমিকা রাখবেন তারাই যদি অন্ধকার জগতে বাস করেন তাহলে সভ্য ও আলোকিত মানুষ কী করে সৃষ্টি হবে?
স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টি বেশ পুরনো হলেও ইদানিং মাদ্রাসায় সংঘটিত কয়েকটি অনৈতিক ঘটনার খবর বেশ আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রিক কয়েকটি ঘটনা মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা জন্ম দিয়েছে। ফলে কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে যে, মাদ্রাসা শিক্ষা ও স্কুল শিক্ষার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
মূলত নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ গুলো ছড়িয়ে পড়েছে গোটা সমাজে। এর থেকে বাদ যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। কেননা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত তারাও সমাজের অংশ। এছাড়া বর্তমানে আলিয়া মাদ্রাসা গুলোও প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মতোই পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে নারী পুরুষকে একসঙ্গে পাঠদান করা হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সিলেবাসের কিছুটা অমিল থাকলেও শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় অনুরূপ। নানা সময়ে রাজনৈতিক ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের হস্তক্ষেপে সেখানেও শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির মানদণ্ড বজায় রাখা সম্ভব হয় না। তাই আলিয়া মাদ্রাসার বর্তমান অবস্থা দেখে মাদ্রাসা শিক্ষা ও স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা কে এক করে ফেলা উচিত হবে না। কওমি মাদ্রাসায় কোন অপরাধ সংঘটিত হয় না এমন নয়। যেহেতু কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে এই সমাজের লোকেরাই জড়িত সেখানেও কোন না কোনভাবে নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটে। তবে ওহী ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়ার কারণে সেখানে অপরাধ প্রবণতা খুবই কম এবং যখনই কোন অপরাধ সংঘটিত হয়, এর শাস্তি হয় দৃষ্টান্তমূলক। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার মতো কোনো সুযোগ নেই কওমি মাদ্রাসাগুলোতে।
তথাপিও এই সমাজ এবং দেশকে বাঁচাতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে শতভাগ নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আজকের এ সেমিনার থেকে মূলত শিক্ষা শিক্ষাঙ্গনে নৈতিক অবক্ষয় রোধে ৭ দফা দাবি ও সুপারিশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বরাবর পেশ করা হচ্ছে।
৭ দফা দাবি ও সুপারিশ
. ১) নারীদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে পাঠদান এবং পাঠগ্রহণ সহ যাবতীয় কার্যক্রম নারীরাই পরিচালনা করবেন।
২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠনে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষিত ও শিক্ষানুরাগী এবং শিক্ষার মূল্য অনুধাবন করতে সক্ষম এমন ব্যক্তিরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
৩) শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার মূলোৎপাটন করতে হবে। শিক্ষার জন্য নিবেদিত প্রাণ, মেধাবী ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত এমন লোকদেরকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
৪) যারা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে অর্থাৎ শিক্ষকতার মেজাজ নেই, কেবল জীবিকা নির্বাহের খাতিরে এ পেশায় আত্মনিয়োগ করেছে, তাদেরকে শিক্ষকতা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে।
৫) ছাত্র, শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সমস্যা সরাসরি সরকার প্রধানকে অবহিত করা যায় এমন কোন পথ খুলতে হবে। প্রয়োজনে এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে কোন সেল গঠন করা যেতে পারে।
৬) শহরকেন্দ্রিক গণপরিবহন গুলো দুই দরজা বিশিষ্ট হতে হবে। সামনের দরজা দিয়ে কেবল নারীরা আরোহন ও অবতরণ করবেন। পেছনের দরজা বরাদ্দ থাকবে পুরুষদের জন্য। প্রয়োজনে গণপরিবহনের মধ্যখানে পার্টিশনের ব্যবস্থা করে নেয়া যেতে পারে। যাতে নারীদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন ও নিষ্কণ্টক হয়।
৭) মহান আল্লাহ তাআলার ফরজ বিধান পর্দার প্রতি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে হবে। ধর্ম ও নৈতিকতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে শিক্ষার সকল স্তরে। যৌন উত্তেজনা ও উম্মাদনা সৃষ্টিকারী সমস্ত আয়োজন যথা অশ্লীল নাটক, সিনেমা, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট ইত্যাদি বন্ধ করে দিতে হবে।
কওমী ফোরাম সমন্বয়ক মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক-এর সভাপতিত্বে ও মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা হাসান জামিল, মুফতী এনায়েতুল্লাহ, মুফতী মুরতাজা হাসান ফয়েজী মাসুম, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ হামিদী, মুফতী মহিউদ্দিন কাসেমী, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মুফতি মোস্তফা কামাল, মুফতী তোফায়েল গাজালী, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা ইয়াকুব উসমানী, মুফতী দ্বীন মুহাম্মদ, মাওলানা মাহবুব নবাবগঞ্জী, মুফতী অাবুল কালাম তৈয়্যবী, মুফতী রিজওয়ান রফিকী, মাওলানা ইনঅামুল হক অাইয়ুবী, মুফতী অাখতার হাফেজ্জী, মাওলানা অাবুল বাশার রিজওয়ান, মাওলানা ফরহাত অাশরাফী, মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ্, মুফতী সাইমুম সাদী ভাই, মাওলানা অাজহারুল ইসলাম অাজমী, মুফতী অাব্দুর রহিম অাল মাদানী, মুফতী রাফি বিন মনির, মুফতী খালিদ সাইফুল্লাহ্ নুমানী, মাওলানা অানোয়ার অানসারী, মুফতী অাবসার সিদ্দিকী প্রমুখ।