শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর ৩৬টি মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ২৭টিরই উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর। এরমধ্যে সর্বশেষটা হলো সম্প্রতি আঘাত হানা আম্ফান। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ২৭ নম্বর সুপার সাইক্লোন এটি। আবহাওয়াবিদরা এমনই বিস্ময়কর তথ্য জানিয়েছেন।
জানা যায়, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে বঙ্গোপসাগরের ভারত ও বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানলো দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোন আম্ফান। এর আগে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি সুপার সাইক্লোনের আঘাত পরিবেশবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। ২০০৯ সালে এই অঞ্চলকে তছনছ করেছিল আইলা। আর তার ১০ বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সালে আঘাত হেনেছিল বুলবুল।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর মিলিয়ে মোট ৮টি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে এসেছে। যার মধ্যে ৬টিই সুপার সাইক্লোন। আর ২০২০ সালের প্রথম ঘূর্ণিঝড়টিই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া সুপার সাইক্লোন। এই অঞ্চলে এত ঘনঘন সুপার সাইক্লোনের আঘাত আবহাওয়াবিদদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কারণে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বাস করে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ।
আবহাওয়াবিদদের মতে, অবতল আকৃতির অগভীর উপসাগরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠে। আর এ রকমই ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে যুক্ত হয়েছে আরো কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন- সমুদ্রের উপরিতল বা সারফেসের তাপমাত্রা। এটি পরিস্থিতিকে আরো বিপজ্জনক করে তোলে।
তাদের মতে, বঙ্গোপসাগর খুবই উষ্ণ। সেইসঙ্গে এর উপকূলজুড়ে রয়েছে ঘনবসতি। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে থাকা দেশগুলোতে বিশ্বের প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন বাস করে। ফলে উষ্ণতার ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে উৎপত্তি হওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুপার সাইক্লোন-
১৯৭০:
ওই বছরের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) দক্ষিণাঞ্চল তথা ভোলায় যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল, সেটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়। প্রলয়ঙ্ককারী সেই ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়েছিল প্রায় ৫ লাখ মানুষ। ওই ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল, তার উচ্চতা ছিল ১০ দশমিক ৪ মিটার বা ৩৪ ফুট।
১৯৯১:
ওই বছরের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছিল আরেকটি ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়। এর ফলে ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। সেইসঙ্গে প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।
১৯৯৯:
১৩ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভয়ংকর ওই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল পাইলিন। ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে রাতভর ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এই সুপার সাইক্লোন। তবে আগে থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ায় প্রাণহানি কমানো যায় বলে দাবি করা হয়। যদিও এতে মৃত্যু হয়েছিল ১০ হাজার মানুষের।
২০০৭:
এই বছরের ১৫ নভেম্বর আরেকটি সুপার সাইক্লোনের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। সিডর নামের ওই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব চলেছে কয়েক দিন। এতে দুই হাজার দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
২০০৮:
পরের বছরের মে মাসে মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হেনেছিল সাইক্লোন নার্গিস। ভয়াবহতম সেই ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয়েছিল কমপক্ষে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের। সেইসঙ্গে ঘরবাড়ি হারিয়েছিল প্রায় ২০ লাখ মানুষ।