বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

মন্তব্য প্রতিবেদন: বর্তমান সরকারের সংস্কারের অর্জন কতটুকু?

amarsurma.com
মন্তব্য প্রতিবেদন: বর্তমান সরকারের সংস্কারের অর্জন কতটুকু?

আমার সুরমা ডটকম:

৫ আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। বলা যায়, এটি এ দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার দিন। হাজার হাজার মানুষের প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা বিগত হাসিনা রেজিমের পতনের পর সাধারণ মানুষের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। নিজ ভূমে বাস করেও অনেকেই ছিলেন পরাধীন। তাই সঙ্গত কারণেই মানুষ ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে গিয়ে এ সরকারকে হঠাতে পেরেছে।
হাসিনার পলায়ন ও তার সরকারের পতনের পর বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার। সাধারণ মানুষের আশা ছিল এবার হয়তো এ দেশটা ভালোভাবে চলবে। এ দেশের খেটে খাওয়া থেকে শুরু করে সবাই শান্তিতে থাকবে, পাবে ন্যায্য অধিকার ও নিরপেক্ষ আইনি সুবিধা। কিন্তু এ সরকারের আমলে যেই আশা ছিলো সাধারণ মানুষের মনে, তার সিকিভাগ অর্জিত হয়েছে কি না-আমার সন্দেহ হয়। বলা যায়, যেই লাউ, সেই কদু।
কিন্তু কেনো? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া আমাদের দেশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জটিল বলেই মনে হয়। আসুন, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কিছু আলোচনা করি।
আইনের সুবিচার
বর্তমান সরকারের আমলে সাধারণ মানুষের আশা-আখাক্সক্ষা ছিলো আইনের সুবিচার পাবে। কিন্তু এক্ষেত্রেও শতভাগতো নয়ই, সিকিভাগ পায়নি বলে মনে হয়। আওয়ামী আমলের চেয়ে ঘুষ এখন বেশি ও অবাধে চলছে। যে কোনো কাজ করতে হলেই ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না। জিডি কিংবা মামলার তদন্তের নামে টাকার খেলা। এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন ঘুষমুক্ত হতে পারেনি। অন্যান্য সেক্টর সমূহের অবস্থাও একই। কাজ পেতে হলে প্রধান বাহন ঘুষ।
চাকরি
দেশে সরকারি সেবাসমূহের সেক্টরে খালি পদের অভাব নেই। ঠিক তেমনীভাবে দেশে শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে বেকারত্বেরও অবাব নেই। কিন্তু সেই তুলনায় সরকারি বা বে-সরকারি কর্মসংস্থান হয়নি এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে। ফলে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের পাশাপাশি অন্যান্য বেকার জনগণও নাখোশ এই সরকারের প্রতি। এমনিভাবে উপজেলা প্রশাসন থেকে হাই কমান্ড পর্যন্ত সর্বত্রই একই অবস্থা বিরাজ করছে।
ফিরে দেখি
৫ আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ করার কিছুদিন পরই সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটে। সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে স্বৈরশাসক আসাদ সরকারের পতন হলে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আহমেদ আল-শারা দায়িত্ব গ্রহণ করেই চমক সৃষ্টি করেন একটি ডিক্রি বা পরিপত্রের মাধ্যমে। তা হলো, আসাদ সরকারের সকল বাহিনীকে বরখাস্ত করা। এখানে উল্লেখ্য যে, আহমেদ আল-শারার নিজস্ব বাহিনী থাকার কারণে তিনি আগের সরকারের চাটুকার বাহিনী সরাতে পেরেছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশ ভিন্ন। কারণ, বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার নিজস্ব কোনো বাহিনী না থাকার আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আমলা-কামলা দিয়েই সরকার পরিচালনা করছেন। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। ঘুষ-দুর্নীতিতো কমেই নাই, উল্টো সরকারকে বিব্রত করতেও সময় লাগে না এসব আমলা-কামলাদের। ফলে খুব চাপে থেকেই ইউনুস সরকার পরিচালিত হচ্ছে।
ব্যর্থতার মূল কারণ
নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেশের উপর চোখ বুলালে দেখা যাবে, বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রচুর ব্যর্থতা রয়েছে। আর যে সফলতাটুকু দেখা যায়, সেগুলো খুব বেশি নয়। তাহলে আসুন এক নজরে দেখে আসি ব্যর্থতার খতিয়ান।
দেশে চাকরী সংকট
বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে চাকরীর বাজার। দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রচুর। অন্যদিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ হাজার হাজার পদ খালি পড়ে আছে। যেগুলোতে বছরের পর বছর ধরে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা সবাই জানি, উন্নত বিশ্বে আর যাই হোক, তাদের লোকবল যথেষ্ট। এক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। এর জন্য উচিত গুরুত্বপূর্ণ শূণ্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ দেয়া। তাছাড়া, আগের সরকারের রেখে যাওয়া ভাইরাসগুলোকে বাদ দিয়ে নতুন জনবল নিয়োগ দিলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো, পাশাপাশি রেজিম আওয়ামী সরকারের ভাইরাসগুলোও সতর্ক থেকে কাজ করতো। যেমন-শর্ত-সাপেক্ষে যদি ২/৩ লাখ লোক নিয়োগের আওতায় নিয়ে আসা হতো, ধারাবাহিকভাবে কোথাও ২ জন বাদ দিয়ে ১ জন নিয়োগ, কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে ৫ জন বাদ দিয়ে ৩ জন নিয়োগ দিলে একদিকে যেমন বেকারদের কর্মসংস্থান হতো; অন্যদিকে ষড়যন্ত্রকারীরা সর্বদা সতর্ক থাকতো এবং ভালোভাবে দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতো। তখন রাষ্ট্র পরিচালনায় বর্তমান সময়ের মতো প্রচুর বেগ পেতে হতো না।
এভাবে দেশে সরকারি-বেসরকারি সেক্টরে লোক নিয়োগ দিয়ে দেশের মানুষের সেবা প্রাপ্তিতে সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করলে সাধারণ মানুষের সমর্থন আরো বেড়ে যেতো। এখনো মানুষ প্রকৃত অর্থে সাধারণ সেবা পেতেও ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। কারণ, আগের জনবল অক্ষত থাকায় তাদের অহমিকা ও দাপট কোনোভাবেই কমেনি। বরং দিন দিন আরো বেড়ে চলছে। তাই এখনো সময় আছে, ভালো ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কাঙ্খিত সেবা প্রদানে আন্তরিক ভূমিকা রাখতে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সকলের প্রতি উদার মানসিকতা চান দেশের জনগণ।

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার
০৩/১১/২০২৫

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com