বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

মামদানির ভূমিধস বিজয়ে ধরাশায়ী ট্রাম্প

amarsurma.com
মামদানির ভূমিধস বিজয়ে ধরাশায়ী ট্রাম্প

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয়। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ইতিহাস গড়লেন ৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট প্রার্থী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও এ জয়ের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রবিন্দু নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে তার বিজয় শুধু একটি শহরের নেতৃত্ব বদলের ঘটনা নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক যুগান্তকারী রূপান্তরের প্রতীক। তার এই জয়ের বৃহত্তর রাজনৈতিক তাৎপর্য সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয়বস্তু। সাশ্রয়ী মূল্য এবং প্রগতিশীল নীতির মামদানির জয়লাভকে একটি ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে মার্কিন মিডিয়ায়।

মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মুসলিম ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির ঘোর বিরোধী। ফিলিস্তিনের পক্ষেও তার কঠোর অবস্থান প্রসংশিত হয়েছে। ট্রাম্প সমর্থিত প্রার্থীকে শোচনীয়ভাবে হারিয়ে পুরো দৃশ্যপটই যেন পাল্টে দিয়েছেন তিনি।কারণ ট্রাম্প মামদানির বিরুদ্ধে তাঁর প্রভাব এবং রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনে বাধা দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করেছেন। তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও মামদানির বিশাল জয়কে ট্রাম্পের জন্য বড় ধাক্কা বা পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধের হুমকি এবং সরাসরি রাজনৈতিক প্রচারণার মাধ্যমে মামদানির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, কিন্তু সেই কৌশল পরাজিত হয়েছে।

কেবল তাই নয়, মামদানিকে হারাতে ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন না করে ডেমোক্র্যাট থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অ্যান্ড্রু কুওমোকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানান। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হারাতে তার পুরনো এই গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ব্যর্থ হয়েছে।এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রকাশ্যে বিরোধিতা সত্ত্বেও মামদানির বিশাল জয়কে ট্রাম্পের প্রতি নিউইয়র্কবাসীর অনাস্থা এবং তার পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের পর মামদানি নিজেই বলেছেন, তার এই বিজয় ট্রাম্পকে পরাজিত করার পথ দেখাচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা হিসেবে মামদানিকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাননি। তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট পাগল’, ‘উগ্রপন্থী’ এবং ‘ভয়ানক মানুষ’ বলেও আক্রমণ করেছিলেন। এমনকি তিনি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় সরকারি তহবিল আটকে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন এবং মামদানির অবৈধ অভিবাসী হওয়ার সন্দেহ প্রকাশ করে তাকে গ্রেপ্তারের হুমকিও দিয়েছিলেন।

মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সত্যিই একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্প, বিশেষ করে এক বছর আগে তিনি যেখানে ছিলেন, তার সাথে তুলনা করলে। এক বছর আগে মামদানি হয়তো যেকোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারলেই খুশি হতেন। আর এখন তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন তারকা ও মুখ।

ষাটের দশকের শেষের দিক থেকে নিউ ইয়র্কে এবার সবচেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। এটি তার প্রতি আগ্রহ এবং ভোটদানের মাত্রা উভয়ই প্রতিফলিত করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বহুজাতিক নগরী নিউ ইয়র্কে ভোটারদের কাছে মামদানির বিজয় ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের নয়; এটি জীবনযাত্রার ব্যয় ও নাগরিক স্বস্তি নিয়ে তার স্পষ্ট বার্তার প্রতি এক আস্থার প্রকাশ।

নিউ ইয়র্কের মতো যেখানে একটি দল অত্যন্ত প্রভাবশালী, সেখানে সাধারণত প্রাইমারিই আসল লড়াইয়ের জায়গা। তাই অন্যান্য বছরগুলোতে সাধারণ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকতো, কারণ প্রাইমারিতেই ফয়সালা হয়ে যেত। কিন্তু এবার যেন তা আবার হলো। তিনি এখন কুওমোকে দুবার পরাজিত করলেন। অ্যান্ড্রু কুওমো নিউ ইয়র্কের রাজনীতি এবং ডেমোক্রেটিক রাজনীতিতে বেশ সুপরিচিত এক ব্যক্তিত্ব। তাকে পরাজিত করাটা বেশ বড় ব্যাপার।

অন্যদিকে, মামদানির এই বিজয় ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি বৃহত্তর ইতিবাচক নির্বাচনী রাতে এসেছে। একই রাতে ডেমোক্র্যাটরা ভার্জিনিয়ায় গভর্নরের আসন নিজেদের দখলে এনেছে এবং নিউ জার্সিতেও জয়ী হয়েছে।

মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, মামদানি মূলত ‘সাধ্যের মধ্যে জীবনযাত্রা’ নিশ্চিত করার এজেন্ডা নিয়ে প্রচার চালিয়ে নগরবাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর মূল অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্কের কোটিপতিদের (যারা বছরে ১০ লক্ষ ডলারের বেশি আয় করেন) উপর ২% অতিরিক্ত কর আরোপ করা যেই অর্থ বিনামূল্যে বাস পরিষেবা এবং ভাড়া ফ্রিজ করার মতো কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে।

ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি বিজয় উদযাপনের ভাষণে বললেন, “সব বাধা পেরিয়ে আমরা আজ ভবিষ্যৎকে হাতে পেয়েছি। বন্ধুরা, আমরা আজ এক রাজনৈতিক বংশের পতন ঘটিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “নিউইয়র্ক আজ এক নতুন ম্যান্ডেট দিয়েছে- পরিবর্তনের ম্যান্ডেট, নতুন ধরনের রাজনীতির ম্যান্ডেট, এমন এক শহরের ম্যান্ডেট যা আমরা সামর্থ্যের মধ্যে রাখতে চাই।”

ব্রুকলিনে বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেন, “আজ যারা অসম্ভবকে সম্ভব মনে করেছে, সেসব ভোটারদের ধন্যবাদ। আমরা এমন এক নিউইয়র্ক গড়ব যেখানে ইসলামবিদ্বেষে কেউ আর ভোট পাবে না।”এই নির্বাচনকে অনেকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক হিসেবে দেখছেন। কুওমো প্রতিনিধিত্ব করেছেন ঐতিহ্যবাহী অর্থশালী দাতা-নির্ভর রাজনীতিকে, আর মামদানি এনেছেন এক নব প্রজন্মের সমাজতান্ত্রিক চেতনার বিকল্প দিশা।

ভোটের দিন নিজের ব্যালট দেওয়ার সময় কুওমো বলেন, “এটা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরেই এক গৃহযুদ্ধ। একদিকে উগ্র বামপন্থী সমাজতান্ত্রিকরা, অন্যদিকে মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটরা- এই দ্বন্দ্বই আজকের নির্বাচনে ফুটে উঠেছে।”ভোটের রাতেই পরাজয় স্বীকার করে সেই কুওমো বলেন, “আজকের রাত তাদের।”

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com