বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
এ যেন অপরুপ সৌন্দের্যের মহা-আয়োজন। হাওরের বুকে দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া পিচঢালা পথ। দুপাশে থৈ থৈ করছে পানি। দূরে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা গ্রাম, হিজল বন। তার পাশ দিয়ে যেন এঁকে বেঁকে চলে গেছে এক কালোরেখা। সড়কের দুপাড়ে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। নির্জন পথে পানির কলতানের শব্দ। এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখলে কার না ভাল লাগে? হাওরের এই সৌন্দর্য দে তে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক।
এই সড়কের হাত ধরে বদলে গেছে কিশোরগঞ্জের হাওরের দৃশ্যপট। এক সময়ের বিচ্ছিন্ন ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা যুক্ত হয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন সম্ভাবনার পাশাপাশি সারাদেশের সাথে সড়কপথে হাওরের যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে এই সড়ক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সড়কটি। গণভবন থেকে মিঠামইনের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করা হবে অলওয়েদার সড়কটি। এ অনুষ্ঠানে মিঠামইন প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত থাকবেন।
জানা গেছে, গত অর্থ বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অল ওয়েদার সড়কটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর পর্যন্ত বাড়ানো হবে সড়কটি। এ কাজটি শেষ হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল। কেবল বর্ষায় নয়, শুকনো মৌসুমেও হাওরে চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে ৩৬ কিলোমিটার সাব-মার্সেবল সড়ক। নদ-নদীতে বসানো হয়েছে বেশ কিছু ফেরি। কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল আলম জানান, সড়কটি আরো দৃষ্টিনন্দন করতে দুইপাশে গাছপালা লাগানোর পৃথক আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, সারা বছর চলাচল উপযোগী ‘আবুরা’ সড়কটি নির্মিত হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত হয়েছে পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে বিশ্বে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এই হাওর। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বললেন, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে হাওরের বিস্ময় হিসেবে। সড়কটি নির্মিত হওয়ায় অনুন্নত হাওর এলাকায় আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়কে জীববৈচিত্রে ভরপুর হাওরের হাওরের চিরকালীন সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে। এখন সারাদেশের সঙ্গে সারা বছর চলাচলের জন্য হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণ হলে হাওরবাসীর দাবি বাস্তবায়ন হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের (অল ওয়েদার সড়ক) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সড়কের উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধন ঘোষণার পর ভিডিওতে হাওরের বিস্ময় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়কের ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনটা পড়ে থাকলো। এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে কবে যাবো। প্রেসিডেন্টও চান আমি যেন সরাসরি যাই। আমি যাবো। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে এ সড়ক দেখতে যাবো।
জানা গেছে, হাওরের বিশাল জলরাশির বুক চিরে চলে গেছে ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি। বর্ষায় সড়কের দু’পাশে অথৈ জলরাশি, নির্মল বাতাস আর মনকাড়া ঢেউ। শুকনো মৌসুমে মাইলের পর মাইল ফসলি জমি, যেখানে সবুজ আর সোনালি রং মিলেমিশে একাকার। হাওরের বুকে বিশাল খোলা আকাশের রূপে মুগ্ধ ভ্রমণ পিপাসুরা।
কখনো ঝকঝকে নীল আকাশ, কখনো আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। ভোরের সূর্য আর গোধূলিতে ভিন্ন রূপে সাজে হাওরের আকাশ। বর্ষায় মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ জলরাশি, বর্ষা শেষে জলকাদা আর শুকনো মৌসুমে ফসলি জমি। বর্ষায় নৌকা আর অন্য ঋতুতে পায়ে হাঁটা ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না হাওরবাসীর। যোগাযোগে এখানকার মানুষের কষ্ট লাঘবে বিশাল হাওরের মধ্যে সড়ক নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়।
২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে।