হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব, ঢাকা জামিয়া মাদানীয়া বারিধারার প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ও শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আমীরে হেফাজত, হাটহাজারী মাদরাসার শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
আজ (১৩ ডিসেম্বর) রবিবার সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় আমীরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরী বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও শীর্ষ একজন প্রবীণ আলেমেদ্বীন ছিলেন। ইসলামি আন্দোলনের ময়দানে তিনি ছিলেন একজন বীর সিপাহসালার। বাংলাদেশের জন্য তিনি ছিলেন রত্নতুল্য ৷ তার ইন্তেকালে বাংলার ইলমাকাশের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ঝরে পড়েছে ৷ দেশবাসী হারিয়েছে একজন নিবেদিতপ্রাণ মুখলিছ আলেমে দ্বীনকে ৷ আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর ইন্তেকালে আমি গভীরভাবে শোকাহত।
হেফাজত আমীর বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) হক ও ন্যায়-নীতির ওপর অটল-অবিচল একজন নিষ্ঠাবান আলেম ছিলেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানাতেন তিনি। হকের উপর ছিলেন দৃঢ় মজবুত। বাতিলের সাথে কখনো আপোষ করেননি তিনি। তাঁর ইন্তেকালে ইসলামি অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবার নয়। ইতিহাস তাঁর অমর কীর্তি চিরকাল স্মরণ রাখবে।
আমীরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, লোভ-লালসা ও ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকতেন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। আমরণ তিনি এখলাছ ও নিষ্ঠার সাথে দ্বীনের বহুমুখী খেদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন। ইসলাম-মুসলমান, দেশ ও জাতির পক্ষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। ইসলামি আন্দোলন সংগ্রামে আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ত্যাগ তিতিক্ষা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। আল্লামা কাসেমী (রাহ.) আত্মশুদ্ধির ময়দানেও ছিলেন একজন হক্কানী পীর। ইলমের ময়দানে তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন। রাজনীতির ময়দানে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিজ্ঞ।
হেফাজত আমীর বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী অনেক বছর অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ও জামেয়া সুবহানিয়ার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদীসের গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। দীর্ঘদিন হাদীসের সর্বোচ্চ কিতাব বুখারী শরীফের পাঠদান করেছেন। হাজার হাজার মুহাদ্দীসীনরা তাঁর ছাত্র। সাবলীল উপস্থাপনা, মধুময় বাক্যশৈলী ও সর্ববোধগম্য দরস প্রদানে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ছিলেন একজন আদর্শ উস্তাদ। দরস-তাদরীস ও আত্মশুদ্ধির লাইনে মেহনতের পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঈমান আকিদা রক্ষায় ওয়াজ-নসিহতের ময়দানেও অসাধারণ খেদমত করে গেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, বেফাকুল মাদারীসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি এবং কওমি মাদরাসা সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড আল-হাইয়্যাতু উলইয়া বাংলাদেশের কো-চেয়ারম্যান। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনীতে দ্বীন ও ইসলামের বহুমুখী খেদমত করে গেছেন। তাঁর সৎ ও যোগ্য সন্তান মুফতী জাবের কাসেমীও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দরস তাদরীসসহ দ্বীনের নানা খেদমতের আঞ্জাম দিচ্ছেন।
আমীরে হেফাজত আরো বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর সাথে আমার গভীর হৃদ্যতা ছিলো। তিনি আমাকে খুব বেশি মুহাব্বত করতেন এবং আমিও তাঁকে মুহাব্বত ও সম্মান করতাম। আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর দাওয়াতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় বহুবার গিয়েছি। বর্তমান এই নাজুক পরিস্থিতিতে দেশ ও জাতীর এই সংকটময় মুহূর্তে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর মতো হক ও ন্যায়নীতির উপর অটল-অবিচল, নিষ্ঠাবান আলেম আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আল্লাহ তায়া’লার হুকুমে আজ আমাদেরকে কাঁদিয়ে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মহান প্রভুর দরবারে আমি দুআ করি, আল্লাহ তাআলা যেন তাঁর সকল দ্বীনি খেদমতকে কবুল করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা জামেয়া বারিধারা ও জামেয়া সুবহানিয়াকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম রাখুন এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন আমিন।