বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টাতেই রাজস্থান সেশনস আদালতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দিতে চলেছেন সোনাল শর্মা। রাজস্থানের উদয়পুরের মেয়ে তিনি। বাবা দুধ বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুধ বেচার টাকাতেই সংসারের যাবতীয় খরচ চালান তিনি। তার উপর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ তো রয়েছেই।
ছোট থেকেই বাবাকে কাজে সাহায্য করেন সোনাল। রোজ ভোর ৪টায় ঘুম ভাঙে তার। উঠে বাবার সঙ্গে গোয়ালে চলে যান তিনি। তার পর সারাদিন গোয়ালেই কাটে। গোবর তোলা, গরুকে স্নান করানো, খাওয়ানোর কাজ সেরে নিজে পড়তে বসেন। গোয়ালেরই এক কোণায় তেলের টিনের ফাঁকা বাক্স পাশাপাশি সাজিয়ে টেবিল বানিয়ে নেন। তাতে বই-খাতা রেখে চলে পড়াশোনা। গরুর ডাক, গোবরের গন্ধ কোনও কিছুই তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে না। শুধু খাবার সময়টুকু গোয়াল থেকে বার হন তিনি।
অভাবের সংসারে কোনওদিন কোচিং সেন্টার বা টিউশন নিতে পারেননি। সাইকেল চালিয়ে সময়ের অনেক আগেই কলেজে পৌঁছে যেতেন। সেখানে লাইব্রেরিতে বসে নোট নিতেন। পড়াশোনা এগিয়েছিল এ ভাবেই। তার কলেজের নাম ছিল মোহনলাল সুখোদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের পরীক্ষাতেও ভাল ফল করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে রাজস্থান জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। মাত্র ১ নম্বরের জন্য চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করতে পারেন নি। ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন তিনি। পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা থেকে ৭ জন চাকরিতে যোগ দেননি। পদ ফাঁকা থাকার ফলে ওয়েটিং লিস্ট থেকে আরও ৭ জন ডাক পান। সেই তালিকায় সোনালও রয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি সেশনস আদালতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেবেন তিনি।
লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি তার। কাজে যোগ দেওয়ার পর তার প্রথম কাজ হবে মা-বাবাকে একটি ভাল জীবন দেয়া। তাদের যাতে আর দুধ বেচে সংসার টানতে না হয় সেটা দেখা। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে এমন একটি সুযোগ পাওয়ার পর শৈশবের দিনগুলির কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে সোনালের। অনেক সময়ই তিনি স্কুলে যেতেন জুতোয় গোবর লেগে থাকত। সারা গায়েও যেন গোবরের গন্ধ মিশে থাকত তার। দুধওয়ালার মেয়ে হিসাবে শুনতে হয়েছে কটাক্ষও। এখন এই পরিচয়ই তার গর্বের কারণ। শুধু তার পরিবারের কাছেই নয়, সারা দেশের অনুপ্রেরণা তিনি। সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস।