বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম :
নিজ সংগঠনের নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টির ‘আত্মহত্যার প্ররোচনায়’ অভিযুক্ত মজিবুর রহমান অনিককে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বৃষ্টির ‘আত্মহত্যা প্ররোচনার’ অভিযোগে বৃষ্টির বাবার কাফরুল থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারের দুই নম্বর আসামি অনিক। তাকে সভাপতি করায় নিহতের পরিবার ও বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ শাখা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। নিহতের পরিবার ‘হত্যাকারীদের’ এভাবে পুরুস্কৃত করায় ছাত্রলীগের কড়া সমালোচনা করেছেন। সোমবার ছাত্রলীগের অফিসিয়াল প্যাডে সংগঠনের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। মামলার প্রধান আসামি সভাপতি এইচ এম জাহিদ মাহমুদকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন মজিবুর রহমান অনিককে নতুন সভাপতি করা হয়েছে। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান মিয়া জীবন। মিরপুর বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও কাফরুল থানা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টির সাথে সভাপতি জাহিদের দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে বৃষ্টি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে তিনি জাহিদকে বিয়ের চাপ দিতে থাকেন। জাহিদ এতে রাজি না হওয়ায় গত ১৩ জুন ১৩২০/১ শেওড়াপাড়ার বাসায় বৃষ্টি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে উদ্ধার করে মিরপুরের স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জুন তিনি মারা যান। এরপর বৃষ্টির বাবা তোফাজ্জল হোসেন বাদি হয়ে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদকে প্রধান ও নতুন কমিটি মজিবুর রহমান অনিককে দুই নম্বর আসামি করে সাত জনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- জাহিদ মুন্সি, মো. আলমগীর হোসেন, এ আজিজ তানভীর, শাকিল আহমেদ ও চঞ্চল। ১৯ জুন জাহিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তিনি। তবে চোখের সামনে অনিকসহ অপর আসামিরা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছেন তারা পলাতক। ঘটনার একমাস যেতে না যেতেই অনিককে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি করা হল। অনিককে সভাপতি ঘোষণা করায় বৃষ্টির মামা জুয়েল রানা শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের একজন নেত্রী ছিল বৃষ্টি। কিন্তু তার অপমান ও মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের ছাত্রলীগ পুরস্কৃত করে বিচারের মুখ বন্ধ করে দিল। ছাত্রলীগের যখন বৃষ্টির পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা তখন তারা হত্যাকারীকে পুরস্কৃত করল। আমরা এর নিন্দা জানাই।’
তবে এবিষয়ে ছাত্রলীগের বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক জয়দেব দাস বলেন, ‘আপনারা বলছেন সে অভিযুক্ত কিন্তু অভিযোগতো প্রমাণীত নয়। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেই প্রমাণীত হয় না। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আদালতে প্রমাণীত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’ বৃষ্টির মামা বলেন, ‘আসামি অনিক প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। ঘটনার একমাস পার হয়ে গেলেও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।’ মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার এসআই খন্দকার মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘বাদির কোনো ‘ইন্টারেস্ট’ নেই, আপনাদের এত ইন্টারেস্ট কিসের ? বাদীতো আমাদের সাহায্য করছে না। তাকেইতো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিহতের লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও হাতে পায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে বিষয়টা জানা যাবে। গত ৯ জুলাই ময়নাতদন্তের জন্য বৃষ্টির গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কবরস্থান থেকে তার লাশ উত্তোলন করা হয়েছিল। ময়নতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে তদন্তে আরো গতি আসবে।’ আসামি গ্রেফতার হচ্ছে না কেনো ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসামি সব পলাতক। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ অথচ বৃষ্টির মামা জুয়েল দাবি করেছেন, ‘অনিক সব সময় বাংলা কলেজে থাকেন। কিন্তু পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না।’ নিহতের স্বজনদের অভিযোগ আত্মহত্যার আগে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা বৃষ্টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রী নেতাদের কাছে জাহিদ ও অনিকের বিরুদ্ধে বিচার দিয়েছিল। কিন্তু তার বিচারে কেউ সারা দেয়নি। সন্তানের স্বীকৃতি না পাবার অসম্মানে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।