রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
সুনামগঞ্জে হাওর ডুবি ও বন্যা পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের জন্য ১৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে হাওর অঞ্চলে আঞ্চলিক সংগঠন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’। শনিবার দুপুরে বন্যা পরবর্তি হাওরের টেকসই উন্নয়ন ভাবনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারে জেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, চলতি বছরের বোরো মৌসুমে পর পর হাওর ডুবি ও বর্ষায় দুইদফা বন্যায় গোটা সুনামগঞ্জ বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে অর্থনৈতিক সংকটসহ সার্বিক জীবনযাত্রায় প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে। এক ফসলি বোরো মৌসুমের উপর নির্ভরশীল জেলার মানুষ বিগত দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারছে না এখনো। হাওর বাঁচাও আন্দোলন মনে করে হাওর ডুবি ও বন্যা পরবর্তী সময়ে সুনামগঞ্জ জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেই নিতে হবে।
বিগত সময়ে হাওরের ফসলরক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলদের গাফিলতি, অনিয়ম-দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। হাওরবাসীর জীবনমানের উন্নয়নে টেকসই হাওর উন্নয়ন ব্যবস্থা পাশাপাশি বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম ও আগামী বোরো মৌসুমে ১৩ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন। বাঁধ নির্মাণ কাজের প্রাক্কলন সরেজমিনে নিধারিত সময়ের আগে শেষ করা, গণশুনানীর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের অর্ন্তভূক্ত করে পিআইসি গঠন করে তার তালিকা অনলাইনে আপলোড করা ও ১৫ ডিসেম্বর একযুগে নির্মাণ কাজ শুরু করে নিধারিত সময় শেষ করা হয়েছে মর্মে জনস্মমুখে তুলে ধরা, গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারে কজওয়ে নির্মাণ করাসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইসগেইটের সংস্কার করা, স্থানীয় কৃষক কর্তৃক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের অভিযোগ আসলে তা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বিগত মৌসুমে যে সকল পিআইসি কাজে গাফিলতি ও অনিয়ম দুর্নীতি করেছে তাদের নতুন করে পিআইসিতে অর্ন্তভূক্তি না করা ও ঐ সকল পিআইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, যথাযথ সময়ে প্রকল্পের অর্থ ছাড় ও মনিটরিং জোরদার করাসহ নির্মাণকৃত সকল বাঁধের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরা, আগামী বোরো মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা শর্তে ঋণ, বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণ প্রদান করা, ভরাটকৃত সুনামগঞ্জের সকল নদী-নালা, খালবিল, খনন করা ও খনন কার্যক্রম নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে অর্থছাড় দেয়া, নগরায়নের নামে পুকুর, জলাশয়, খাল ভরাট বন্ধ করা ও ভূমি জরিপের মাধ্যমে দখলকৃত খাল উচ্ছেদ করা, সুনামগঞ্জ পৌর শহর রক্ষায় সুরমা নদীর পাশ দিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা, হাওর ডুবি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার স্থায়ি পুনবার্সনের আওতায় নিয়ে আসা, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে জেলায় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপন করা ও ৪৮ ঘন্টার আগে সতর্কতা জারি করা, বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে স্থায়ি প্রকল্প গ্রহণ করা এই দাবিগুলো উপস্থাপন করেন সংগঠনে এই নেতা।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুকেন্দু সেন, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য্য, কার্যকরি সভাপতি ওলিউর রহমান বকুল, উপদেষ্টা রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, শাল্লা উপজেলা কমিটির সভাপতি তরুণ কান্তি, সহ-সভাপতি আলী হায়দার, রাধিকা রঞ্জনসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি ও সম্পাদকগণ বক্তব্য রাখেন।