শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
মঞ্চে উঠা নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে দলটির বিবদমান দু’গ্রুপের সংঘর্ষে একজন মারা গেছে বলে জানা গেছে। তবে সংঘর্ষে নয়, বরং ‘স্ট্রোকে’ এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল (সোমবার) দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলা বিএডিসি মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে মঞ্চে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম প্রদীপ মাছুম, বাগবাড়ির মোহন মিয়া, চণ্ডিপুরের বাবুল মিয়া, মতিউর রহমান, হাসান মিয়া, মাদানী মহল্লার সাগর মিয়া, আব্দুল ওয়াহাব, রফিনগর ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার নিয়াশা সরকার, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মল্লিকপুরের মুহিবুর রহমানসহ অর্ধশত নারী-পুরুষ। সংঘর্ষে হামলায় আগত হয়ে দিরাই হাসপাতালে মারা যান কৃলঞ্জ গ্রামের আজমল হোসেন চৌধুরী (৩০)।
হামলার সময় সম্মেলন মঞ্চে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুল সামাদ আজাদ ডন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. শামীমা শাহরিয়ারসহ জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ও দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়ার নেতৃত্বে সম্মেলন শুরু হলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মঞ্চের সামনে এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে তারা চেয়ার হাতে নিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন। পরে পুলিশ এসে তাদের মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের মানবঢাল তৈরি করে ও চেয়ার দিয়ে রক্ষা করেন। পরে অবশ্য পুলিশ হামলাকারীদের ঠেকিয়ে দেয়।
হামলার এক ঘণ্টা পরে পুনরায় সম্মেলন শুরু হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে মঞ্চে হামলার ঘটনা ঘটে। তাই মোশাররফ হোসেন ও রঞ্জন রায়কে দল থেকে বহিষ্কার ঘোষণা করেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান পরবর্তীতে নতুন কমিটি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার জনগণের উন্নয়নে বিশ্বাসী। বিশ্বের দরবারে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ মকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারী, বন্যার সময়ও শেখ হাসিনার সরকার দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশই করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খেয়েছে। অথচ আমরা এর মোকাবেলা অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই করেছি।
সম্মেলনে বক্তারা বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, তারা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। অথচ শেখ হাসিনা দেশের জনগণের উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বক্তারা আগামি জাতীয় নির্বাচনে আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে ঘোষণা দেন।