বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
প্রকল্প চালু রাখার দাবি সুবিধা ভোগীদের: জীবিকায়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে হিলিপ প্রকল্প

প্রকল্প চালু রাখার দাবি সুবিধা ভোগীদের: জীবিকায়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে হিলিপ প্রকল্প

amarsurma.com
প্রকল্প চালু রাখার দাবি সুবিধা ভোগীদের: জীবিকায়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে হিলিপ প্রকল্প

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
‘বর্ষায় নাও (মানে নৌকা), আর হেমন্তে পাও (পায়ে হেটে চলা)’ এই প্রবাদটি হাওরের জনপদ সুনামগঞ্জের জন্য প্রযোজ্য। ৩ হাজার ৭৪৭ দশমিক ১৬ বর্গ কিলোমিটারের উন্নয়ন বঞ্চিত এ জেলার মোট জনসংখ্যা ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৫ জন। এ জেলার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ একটি ফসল বোরোর উপর নির্ভরশীল। এ জেলায় কোন শিল্পকারখানা না থাকায় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের নেই কোন কর্মসংস্থান। ৬ মাস ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে এ বিরাট অংশের মানুষ। বাকি ৬ মাস থাকেন বেকার। শুধু তাই নয়, বর্ষায় আফালের ঢেউয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায়, এ জনগোষ্ঠী হয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
এমনি এক পরিস্থিতিতে হাওরাঞ্চলের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে এবং বেকারত্ব দূর করতে ভূমিকা রাখছে এলজিইডির হিলিপ প্রকল্প। ২০১৩ সালে হাটি হাটি পা পা করে ইফাদের অর্থায়ানে হিলিপ প্রকল্প গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল, গ্রামীণ সড়ক এবং বেকার শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত যুবক ও যুব মহিলাদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে। এরপর থেকে উন্নয়নের স্বপ্ন নয়, বাস্তব রূপ দেখতে থাকে হাওরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত অনগ্রসর বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষ।
এলজিইডির হিলিপ প্রকল্পের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট, গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়াল, ল্যান্ডিং ঘাট নির্মাণ, হিজল ও কচর গাছ লাগানো হয়েছে। এরমধ্যে ইউনিয়ন থেকে উপজেলায় যাতায়াতের জন্য ৩২ কিলোমিটার সড়ক, ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারে যাতায়াতের জন্য ৩১ কিলোমিটার সড়ক, ১১৬টি ব্রিজ-কালভার্ট, ১৬টি ল্যান্ডিং ঘাট, ২৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার, রোড, একটি মার্কেট কালেকশন সেন্টার, ১২১টি গ্রাম প্রতিরক্ষা দেয়া তৈরি, ১৩ গ্রামীণ বাজার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ, বিভিন্ন হাওরে ৫০ হাজার হিজল ও করচ গাছ লাগানো হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত বিভিন্ন উপজেলায় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের দক্ষ জনগোষ্ঠতে পরিণত করতে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ৫ হাজার ২১১ জন যুবক ও যুব মহিলা। প্রশিক্ষণ লব্দ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তারা নিজ নিজ পরিবার ও সমাজকে স্বাবলম্ভী করছেন। ট্রেডগুলোর মধ্যে প্যারাভেট (পশু চিকিৎসা) ১১টি ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩৩০ জন, গাড়ি চালকের প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৫৬৫ জন, এরমধ্যে ২৬ জন নারী; ভোকেশনাল (ইলেক্ট্রিক হাউজ ওয়ারিং) প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৫২৫ জন, রেফ্রিজারেটর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২১০ জন, স্যানেটারি মিস্ত্রির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২৫৫ জন, মোবাইল রিপিয়ারিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২৪০ জন, মোটর সাইকেল রিপিয়ারিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩৫২ জন, ওয়েলড্রিং (ওয়ার্কশপ) প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৮৬ জন, ডিজেল ইঞ্জিন মেরামত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১০৭ জন, রাজমিস্ত্রি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২৭ জন, টেইলারিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৭৬৮ জন মহিলা, বাঁশ-বেত ও পাঠজাত দ্রব্য তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১ হাজার ৫৪০ জন, ব্লক-বাটিক, নকশীকাথা ও এ্যামব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১ হাজার ৮০ জন, মোমবাতি তৈরি ও প্যাকেজিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩৬০ জন এবং কাঠমিস্ত্রির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২০ জন।
জেলার জগন্নাথপর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামের ছত্তার মিয়া জানান, স্ত্রী, ২ ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। এলজিইডির হিলিপ প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি হাঁস পালন শুরু করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার ৪ শতাধিক হাঁস রয়েছে। আগামি মাসে হাঁসগুলো ডিম দিতে শুরু করবে।
জেলার বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের জামেনা বেগম জানান, তিনি বেকার ছিলেন। ২০১৩ সালে হিলিপ প্রকল্পের মাধ্যমে ভেড়া পালন কর্মসূচির মাধ্যমে ২টি ভেড়া দিয়ে ভেড়া পালন শুরু করেন। ২০২২ সালে বন্যার আগ পর্যন্ত তার ১৬টি ভেড়া ছিল। বিক্রি করে র্দূযোগ কাটিয়ে উঠেছেন। পরে কয়েকটি ভেড়া বিক্রি করে তিনি ৪২ হাজার টাকা দিয়ে একটি ষাঁড় কিনেন। গত ঈদে ওই ষাড়টি ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা বিক্রি করেন। তিনি আরও জানান, হিলিপের কর্মকর্তারা তার চোখ খুলে দিয়েছেন। এখন তিনি ভেড়া পালনের পাশাপাশি হাঁস ও মুরগি পালন শুরু করেছেন। তার পরিবারের স্বামী, ২ ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ৫ সদস্যের পরিবার। তার বড় ছেলে ও মেয়ে ডিগ্রি পড়ে আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ে। এখন তার সুখি পরিবার।
সুনামগঞ্জ হিলিপ প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারি মো. মিজানুর রহমান খান জানান, ইফাদের অর্থায়নে সুনামগঞ্জে এলজিইডির হিলিপ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ৫ সহস্রাধিক যুবক ও যুব মহিলাসহ ৮৮ হাজার লোককে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক ও যুব মহিলারা এখন স্বাবলম্বী। এছাড়াও জেলার বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের চান্দেরগাঁও গ্রামের ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি মডেল ভিলেজ তৈরির কাজ চলছে। এ পর্যন্ত হিলিপ প্রকল্প সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্রায় তিনশত কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছে।
জেলার দিরাই উপজেলা পরিষদের ভাইস মোহন চৌধুরী জানান, হাওরাঞ্চলের মানুষ হিলিপ প্রকল্পের মাধ্যমে খুবই উপকৃত হয়েছে। আমার এলাকায় হিলিপ গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, গ্রাম সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও গ্রামীণ যুবক ও যুব মহিলাদের বিভিন্ন বিকল্প জীবিকায়ণে কাজ করেছে। তিনি জানান, গ্রাম সুরক্ষা দেয়ার ফলে ঢেউয়ের কবল থেকে গ্রামের বাড়ি-ঘর রক্ষা পাচ্ছে। হঠাৎ করে এলজিইডির হিলিপ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাহত হবে ও হাওরাঞ্চলের বেকার যুবক এবং যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হারাবে। তিনি প্রকল্প চালু রাখার জন্য ইফাদের প্রতি আহ্বান জানান।

amarsurma.com

প্রকল্প চালু রাখার দাবি সুবিধা ভোগীদের: জীবিকায়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে হিলিপ প্রকল্প

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com