মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক, অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৬২৫-৬২৭৬৪৩

সুনামগঞ্জ সড়কে সওজের পুকুর চুরি: কাজ না করে ৪০ কোটি টাকা উত্তোলন

amarsurma.com
সুনামগঞ্জ সড়কে সওজের পুকুর চুরি: কাজ না করে ৪০ কোটি টাকা উত্তোলন

আমার সুরমা ডটকম:

ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এক কিলোমিটার কাজ করে নয় কিলোমিটারের প্রায় ৪০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর এই কাজটি হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী পরিকল্পনামন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আলহাজ্ব এমএ মান্নানের এলাকায়। খোদ মন্ত্রীর এলাকায় কাজ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এক কিলোমিটার কাজ করে বিল দেয়া হয়েছে ৯ কিলোমিটারের।
বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের শান্তিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের মাটির কাজে এমন পুকুর চুরির মত ঘটনাটি ঘটেছে। শুধু মন্ত্রীর বাড়ি এলাকা নয়, পার্শ্ববর্তী মদনপুর-দিরাই সড়কের শূন্য থেকে ২৬ কিলোমিটার রাস্তার কাজ না করেই অর্ধেক বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। ৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকার কাজের মধ্যে কার্যাদেশের ১৮ দিনের মাথায় কাজ শুরু না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের শান্তিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত পিএমপি কাজের ২৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে কাজ না করে ও অবৈধভাবে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেছে সড়ক বিভাগ। সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে এমন পুকুর চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে।
সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কাজ না করে বিল উত্তোলন ও আংশিক কাজ করে পুরো বিল উত্তোলনের সত্যতা পাওয়া যায়। শুধু সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক নয়, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সড়কে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬৩৫ কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে টাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট বিভাগের বন্যা-পরবর্তী সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন, সে টাকার পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।
একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের বাইরেও সিলেটে সড়ক বিভাগের কাজে ব্যাপক অনিয়ম চলছে। এরমধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকার আল আমিন ফিলিং স্টেশন থেকে কাড়াই ব্রিজ পর্যন্ত ডিবিএসটির কাজ একটি। পাম্পের পাশ থেকে মাইলেজ পয়েন্ট ২৭, ২৮, ২৯, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এ কাজটি পায় নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড। গত জুন মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। দেড় কোটি টাকার এ কাজ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করেছে সওজ বিভাগ। টাকা উত্তোলন শেষ ভাগবাটোয়ারাও করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে কাজের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ঠিকাদার আমিনুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আল আমিন ফিলিং স্টেশনের মালিক রুহুল আমিন জানান, সড়কে কোনো কাজ চোখে পড়েনি। কাজের যে বরাদ্দ হয়েছে, তাও আমাদের জানা নেই। একই সড়কে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দের পিএমপির ২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার কাজ পায় এমএনও জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আল আমিন ফিলিং স্টেশন থেকে ডাবর পয়েন্ট পর্যন্ত (মাইলেজ পয়েন্ট ২৩ কিলোমিটার থেকে ৪৬ কিলোমিটার) কোনো কাজ হয়নি। অথচ ১২ কোটি ৫১ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট সওজ সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফজলে রব বিলটি অনুমোদন করেন। কাজ না করলেও পেমেন্ট সার্টিফিকেটে সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে মতামত প্রদান করেছেন। সবচেয়ে বড় অনিয়ম হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার বরাদ্দের মদনপুর-দিরাই রাস্তায়। পিএমপির এ কাজে ৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সওজ বিভাগ। কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আহমদ ও কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স জেভি। গত ১ জুন কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। অথচ কাজ শুরু না করেই ১৮ দিনের মাথায় ১৯ জুন ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করে সওজ বিভাগ। বিলে সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফজলে রব, সুনামগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল হামিদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষর করেছেন। সর্বশেষ ২৪ আগস্ট সওজ ঢাকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীও বাকি টাকা ছাড় দিয়েছেন। অথচ কার্যাদেশের চার মাসেও কোনো কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
সুনামগঞ্জের আরেকটি বড় কাজ শান্তিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত ২৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার কাজ। রাস্তার এক পাশে হাওরের দিকে ‘ব্রিক টো ওয়ালসহ কংক্রিট স্লোপ প্রটেকশন’ নামে এ কাজের কার্যাদেশ হয় গেল জুন মাসে। কাজটি পায় একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আহমদ ও কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স জেভি। স্থানীয় এমপি ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের এলাকা শান্তিগঞ্জ থেকে ট্রাফিক পয়েন্ট পর্যন্ত প্রটেকটিভ ওয়াল নির্মাণ করার কথা ছিল। সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, দেখার হাওরের সাইনবোর্ডের পাশের এক কিলোমিটারেরও কম এলাকায় ওই ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ বিল উত্তোলন করা হয়েছে ৯ কিলোমিটারের। যার পরিমাণ ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। কার্যাদেশের তিন সপ্তাহের মধ্যে গত ২০ জুন বিলে অনুমোদন করেন সংশ্লিষ্টরা। গত ২৪ আগস্ট পুরো টাকাও ছাড় দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান, ভুয়া মেজারমেন্ট শিট দেখিয়ে বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থবছরের শেষ সময়ের কারণে কাজ না করেই ঠিকাদারদের বিল দেয়া হয়েছে। এ জন্য তারা বাড়তি সুবিধা নিয়েছেন। কিছু প্রকল্প রয়েছে যেখানো কোনো কাজ আর করবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ম্যানেজ করে বিল নিয়ে গেছে।
কাজের বিল প্রস্তুতকারী সুনামগঞ্জ সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান কথা বলতে রাজি হননি। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, চার ভাগের এক ভাগ বিল দেওয়া হয়েছে। কাজ না করে পুরো বিল পরিশোধের বিষয়টি মানতে নারাজ তিনি। সরাসরি কথা বলতে চাইলে সময়ক্ষেপণ করে দেখা করতে চাননি ওই কর্মকর্তা।

সুত্র: সমকাল

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: