রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : সাবেক এক বিচারকের অপসারণের রায়ে বিচারপতিদের জন্য ৪০টি আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত করা হয়েছে। ৪০টি আচরণ বিধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
একজন বিচারক আইন ও সংবিধানকে সম্মান করবেন ও মেনে চলবেন এবং এমনভাবে কাজ করবেন যাতে বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের আস্থার উন্নতি ঘটে।
একজন বিচারকের আচরণ এমন উচ্চ মানের হতে হবে, যাতে বিচার বিভাগের সততা ও স্বাধীনতা সমুন্নত থাকে।
বিচারিক কাজে বা রায়ে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কোনো পারিবারিক, সামাজিক বা অন্য সম্পর্ক রাখা একজন বিচারকের উচিত নয়। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য একজন বিচারক যেমন তার পদ ব্যবহার করতে পারে না, তেমনি অন্য কোনো ব্যক্তি তার বিশেষ অবস্থান দিয়ে একজন বিচারককে প্রভাবিত করবে সেটাও ওই বিচারক করতে দিতে পারেন না।
একজন বিচারক আদালতের বিচার কাজ দ্রুত শেষ করবেন এবং রায় বা আদেশ দানের ক্ষেত্রে অযথা বিলম্ব পরিহার করবেন। ব্যতিক্রমী রায় ছাড়া অন্য রায় ঘোষণার ছয় মাসের বেশি নয়, এমন সময়ের মধ্যে স্বাক্ষর করতে হবে।
যদি যৌক্তিক কারণে কোনো মামলায় একজন বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তিনি বিচার কাজ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
আদালতে বিচারাধীন মামলার বিষয় বস্তু নিয়ে বিচারক জনসম্মুখে মন্তব্য করতে পারবেন না।
একজন বিচারপতিকে দলীয় স্বার্থ ও জনবিক্ষোভ বা সমালোচনার ভয়ের ঊধর্বে উঠে কাজ করতে হবে।
একজন বিচারক এমন কোনো পাবলিক ডিবেট বা রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত হবেন না বা মতামত দিবেন না, যে বিষয়গুলো পরে বিচারিক সিদ্ধান্তের জন্য তার সামনে আসতে পারে।
আগে যদি কোন মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন তাহলে ওই মামলা থেকে বিচারক নিজেকে সরিয়ে নেবেন অথবা আইনজীবীর সঙ্গে তিনি ওই মামলায় আগে থেকে যুক্ত ছিলেন।
একজন বিচারক নিজে বা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত থাকতে পারবেন না। তিনি দেশে বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারবেন না।
প্রধান বিচারপতি চাইলে বিচারককে তার সম্পদ ও দায় দেনার হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হবে।
বিচার শুধু করলে হবে না, বিচার করা হয়েছে সেটা দেখাতেও হবে। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাক, এমন আচরণ করতে হবে।
বিচারকের পরিবারের কোনো সদস্য যদি আইনজীবী হন, তাহলে ওই আইনজীবী কোনোভাবে সেই বিচারকের বাসায় পেশাগত কাজ পরিচালনা করতে পারবে না। পরিবারের কোনো সদস্য জড়িত এমন কোনো মামলাও ওই বিচারক শুনতে পারবেন না।
আইনজীবীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকতে পারবে না, বিশেষ করে একই আদালতে প্র্যাকটিস করেন এমন বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে।
একজন বিচারকের পরিবারের সদস্য যেমন স্বামী/স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, জামাই-পুত্রবধূ বা কোনো ধরনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যদি আইনজীবী হন, তাহলে তার পরিচালিত কোনো মামলা ওই বিচারক পরিচালনা করতে পারবেন না। এমনকি যদি ওই আইনজীবী কোনো মামলার সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত থাকেন, তাহলেও তার বিচার ওই বিচারক করতে পারবেন না।
বিচারক গণমাধ্যমে কোনো সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না। তিনি তার বক্তব্য রায়ের মাধ্যমে দেবেন।
বিচারক থাকাকালে আইনপেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। বিচারক বা তার পরিবারের কোনো সদস্য কারও কাছ থেকে বিচারিক ক্ষমতার বিনিময়ে উপহার, অনুরোধ, ঋণ বা সুবিধা চাইতে পারবেন না।
এর আগে ২০০০ সালের ৭ মে বিচারকদের জন্য ১৪ দফা আচরণবিধি ঠিক করে দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান।