সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পদে থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারা এবং ফৌজদারি মামলার চার্জশিটভুক্ত হলে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রেখে ‘জেলা পরিষদ সংশোধন আইন-২০১৬’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিলটি পাসের এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।
গত মঙ্গলবার বিলটি সংসদে তোলা হলে তা পরীক্ষা করে একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। বিলে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসকরা নির্বাচন করতে চাইলে তাকে পদ ছাড়তে হবে। এছাড়া জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের শপথ নেয়ার সময় তাদের পরিচিতির জন্য পিতা বা স্বামীর নামের সঙ্গে মায়ের নামও এখন অন্তর্ভুক্ত হবে। বিলের বিরোধিতা করে এটি অধিকতর যাচাই-বাছাই করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।
সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়, জেলা পরিষদ হবে ২১ সদস্যের। তাদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্য থাকবেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভোটে তারা নির্বাচিত হবেন। ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইনে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাময়িক বরখাস্তের বিধান ছিল না। পাস হওয়া বিলে আদালত কর্তৃক চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়া সাপেক্ষে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। বিলে সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন পরিচালনা এবং এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা সরকারের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া বিধান রাখা হয়েছে।
বর্তমান আইনে জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দুর্নীতি বা নির্বাচনী অপরাধ করলে সাত বছরের সাজার বিধান রয়েছে। পাস হওয়া বিলে এর সঙ্গে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান যোগ করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তিতে সাব-জজ পদের কর্মকর্তার সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে ওই ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্বে যুগ্ম জেলা জজকে রাখার বিধান রাখা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, জেলা পরিষদ আইনটি ২০০০ সালে প্রণীত হয়। ইতিমধ্যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং জেলা পরিষদ ব্যতীত অন্য সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জলা পরিষদ নির্বাচন করার দাবি করা হচ্ছে। নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা জেলা পরিষদগুলো পরিচালিত হলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন হবে। বিদ্যমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।