শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স: যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে যাবতীয় ধরনের আলোচনা এখন দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ইমেইল পুনঃতদন্তের সিদ্বান্তের পর থেকেই কমতে শুরু করেছে হিলারির জনপ্রিয়তা। ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাও ‘একহাত’ নিয়েছেন এফবিআই-কে। তবে ইন্টারসেপ্টের এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নয়, জনস্বার্থেই এফবিআই পরিচালক তদন্তের বিষয়ে জনসমক্ষে কথা বলেছেন। এই সিদ্ধান্ত জনগণকে তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার সম্পর্কে সচেতন করবে বলেও মনে করছে ইন্টারসেপ্ট। এদিকে উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া ইমেইল থেকে জানা গেছে, এক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলও ইমেইল তদন্তের ব্যাপারে অন্যায় সহযোগিতা দিয়েছেন হিলারি শিবিরকে। তবে সাবেক এক ফেডারেল অ্যাটর্নি দাবি করেছেন, এফবিআই-এর অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের কারণেই পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ডব্লিউএমএএল রেডিও-কে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি নতুন করে হিলারির ইমেইল তদন্তের বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসকে চিঠি লিখে অবগত করেন। পরে তিনি জনসমক্ষে তদন্তের কিছু বিষয় তুলে ধরেন। আর এরপরই ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ডেমোক্র্যাট শিবিরের রোষানলে পড়ে তদন্ত সংস্থাটি। ডেমোক্র্যাটরা দাবি করে আসছে, এফবিআই নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। হিলারির ইমেইল পুনঃতদন্তে এফবিআই-এর নেওয়া সিদ্ধান্তের পর থেকেই নির্বাচনি জরিপগুলোতে এগিয়ে থাকা হিলারির সঙ্গে কমতে থাকে ট্রাম্পের ব্যবধান। এই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার এবিসি-ওয়াশিংটন পোস্টের চালানো সর্বশেষ জরিপে দাবি করা হয়, জনপ্রিয়তায় হিলারি ক্লিনটনকে এক পয়েন্ট পেছনে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সর্বশেষ পরিচালিত দুটি জরিপেও দুই প্রধান প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। বুধবার বিকেলে কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, ফ্লোরিডাসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে একেবারেই সামান্য ব্যবধানেই ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন হিলারি। অবশ্য, ওহাইও অঙ্গরাজ্যে হিলারির চেয়ে ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। জরিপে দেখা যায়, হিলারির পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন ৪৬ শতাংশ ভোটারের আর ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন ৪৫ শতাংশ। আর সিএনএন/ওআরসি-র জরিপ বলছে, পেনসিলভানিয়ায় হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তবে নেভাদা ও আরিজোনায় এ দুই প্রার্থীর অবস্থান সমান সমান। অথচ সপ্তাহখানেক আগের জরিপগুলোতেও হিলারি ৭ থেকে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।
জনপ্রিয়তার ধস নামায় স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হিলারি শিবির। তারা এজন্য দায়ী করছে এফবিআই এবং এর পরিচালক কেমস কোমিকে। বাদ যাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। দুইদিন আগেই এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বললেও এবার ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে একহাত নিয়েছেন ওবামা। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হিলারির ইমেইল পুনঃতদন্তে নেওয়া এফবিআই-এর সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বুধবার অনলাইন সংবাদমাধ্যম নাউ দিজ নিউজ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেছেন, অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে এফবিআই প্রধান বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তদন্তের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা প্রচলিত নিয়মের লঙ্ঘন। অবশ্য সোমবারের সাক্ষাৎকারেও ওবামা বলেছিলেন, কেন এফবিআই হিলারির ইমেইল পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিলো, তার জবাব তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকেই দিতে হবে।
ওই সাক্ষাৎকারে ওবামা আরও দাবি করেন, হিলারি ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে ভুল করেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি কোনও অপরাধমূলক কাজ তিনি করেননি। কংগ্রেসও এ বিষয়ে তদন্ত করে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল। এফবিআই-এর অতীত অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ব্যক্তিগত সার্ভারে অফিসিয়াল ই-মেইল ব্যবহারকে হিলারির ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলেও মন্তব্য করেন ওবামা। নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে এই নতুন তদন্তের ঘোষণার পর ডেমোক্র্যাট শিবির তার তীব্র সমালোচনা করেছে। শনিবার চার প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সিনেটর ভারমন্টের প্যাট্রিক লিহি, ক্যালিফোর্নিয়ার ডায়ান ফেইনস্টেইন, ডেলাওয়ারের থমাস কার্পার এবং ম্যারিল্যান্ডের বেঞ্জামিন কার্ডিন এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল লোরেটা লিঞ্চকে লেখা এক চিঠিতে নতুন তদন্তের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করেছেন। মার্কিন বিচার বিভাগও কোমির মন্তব্যের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে। কোমি নতুন তদন্তের বিষয়ে কংগ্রেসকে অবগত করুন, তা অ্যাটর্নি জেনারেল লিঞ্চ এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস চান না।
তবে হিলারি শিবিরের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে দাবি করেছে, জনসমক্ষে কোমির এই ঘোষণা অবশ্যই বিচার বিভাগের ‘জনস্বার্থ’ বিষয়ক নীতির একটি ব্যতিক্রম। তাদের মতে, এটি কেবল একটি তদন্তের বিষয় নয়, বরং মার্কিন ব্যবস্থায় ‘জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট’ বিষয়ে গোপনীয়তার নীতি নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করবে মার্কিন জনগণকে। ইন্টারসেপ্ট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, জনস্বার্থের একটি ব্যতিক্রম হয়তো সরকারের সামনে প্রশ্ন তুলবে, কেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিচারের আওতায় আসেন না। তবে এখনও পর্যন্ত কোমি কেবল হিলারির ইমেইল নিয়ে একটি ব্যতিক্রমই ঘটালেন।
উল্লেখ্য, হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে ইমেইল আদান-প্রদান করেছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে আদান-প্রদান করা ইমেইলগুলোতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েরও উল্লেখ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের নিয়ন্ত্রিত চ্যানেল ছাড়া ক্লাসিফায়েড তথ্য আদান-প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ধরনের অনিরাপদ চ্যানেলের মাধ্যমে অতি গোপনীয় ইমেইল ফাঁস হওয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে মার্কিন সরকার। তবে ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহারের কথা স্বীকার করলেও হিলারির দাবি, তিনি ভুল কিছু করেননি। হিলারির ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে ইমেইল আদান-প্রদানের কারণে আইন ভঙ্গ হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে এফবিআই। গত ২৯ জানুয়ারিতে সংস্থাটির অনুরোধে হিলারির ২২টিরও বেশি ইমেইলকে ‘অতি গোপনীয়’ বলে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। আর জুলাই মাসে প্রথম ধাপের তদন্ত সম্পন্ন করে অপরাধের অভিযোগ থেকে এফবিআই হিলারিকে রেহাই দিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, হিলারি তা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ করেননি এবং এর ফলে কোনও অপরাধমূলক কাজ করা হয়েছে, এমন নিশ্চিত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চলতি বছরের জুলাইয়ে কোমি জানিয়েছিলেন, ‘২০০৯-১৩ মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন হিলারি ক্লিনটন অসতর্কভাবে বেশ কিছু গোপন তথ্য আদান প্রদান করেন। যা অপরাধমূলক কাজ। মূলত ফেডারেলের আইন ভঙ্গ করে নিজের ইমেইল সার্ভার ব্যবহার করে হিলারি এসব কাজ করেছিলেন।’ তবে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুলের’ জন্য তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি এফবিআই।
এদিকে, উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া ইমেইল থেকে জানা গেছে, হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল ইস্যুতে কংগ্রেসের বিভিন্ন তৎপরতার সর্বশেষ খবর হিলারির প্রচারণা শিবিরের কাছে পাচার করেছিলেন সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পিটার কাডজিক। প্রচারণা শিবিরের চেয়ারম্যান জন পোডেস্টাকে দিয়েছিলেন আগাম সতর্কতা। কাডজিকের ফাঁস হওয়া ওই ইমেইলে হিলারির ইমেইল বিতর্ক নিয়ে কংগ্রেসে শুনানি সম্পর্কিত তথ্য, ‘তথ্যের স্বাধীনতা আইনে’ মামলা করা নিয়ে তৎপরতার ব্যাপারে সর্বশেষ খবর জানিয়েছিলেন তিনি। কাডজিকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো ইমেইলটির শিরোনাম ছিল ‘হেডস আপ’ বা ‘আগাম সতর্কতা’। ইমেইলে লেখা ছিল, ‘আজ হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির ওভারসাইট হিয়ারিং হবে এবং সেখানে আমাদের সিভিল ডিভিশনের প্রধান সাক্ষ্য দেবেন। পররাষ্ট্র বিভাগের ইমেইল ইস্যুতে প্রশ্ন গ্রহণ করার কথা রয়েছে। গত রাতে এফওআইএ মামলায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যেভাবে চলছে তাতে বোঝা যাচ্ছে পররাষ্ট্র বিভাগ থেকে ইমেইলগুলো পোস্ট করার আগ পর্যন্ত কিছুটা সময় এ ধরনের তৎপরতা চলবে।’
হিলারির প্রচারণা শিবিরের চেয়ারম্যান পডেস্টা পরে ইমেইলটি হিলারির ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কাছে ফরওয়ার্ড করেছিলেন। ফরওয়ার্ড করা ওই ইমেইলে পডেস্টা একটি বাক্য যুক্ত করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষতি করার অতিরিক্ত সুযোগ’। কাডজিক ‘অনগোয়িং ওভারসাইট: মনিটরিং দ্য অ্যাক্টিভিটিজ অব দ্য জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট’স সিভিল, ট্যাক্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস ডিভিশনস অ্যান্ড দ্য ইউএস ট্রাস্টি প্রোগ্রাম’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত সাবকমিটির শুনানির কথা জানিয়েছিলেন ওই ইমেইলে। তবে সাবেক এক ফেডারেল অ্যাটর্নি দাবি করেছেন, এফবিআই গোয়েন্দাদের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী অবস্থানের কারণেই পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
গত শুক্রবার ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার সাবেক ফেডারেল অ্যাটর্নি জো ডি’জেনোভা নতুন তদন্ত শুরুর কথা জনসমক্ষে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডব্লিউএমএএল রেডিও-কে বলেন, এফবিআই-এর অভ্যন্তরে বিদ্রোহের কারণেই কোমি জনসমক্ষে এসে তদন্ত সম্পর্কে কথা বলেছেন। সূত্রের বরাত দিয়ে তার দাবি, একটি মোবাইল থেকে হিলারির ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত কংগ্রেস সদস্য হুমা আবেদিন এবং তার সাবেক স্বামী অ্যান্থনি ওয়েইনারের অনেকগুলো ইমেইল পেয়েছে এফবিআই গোয়েন্দারা, যা হিলারির ওই ইমেইল তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইমেইলের বিষয়ে আদালতের আদেশ আসার পরও যে ৩০ হাজার ইমেইল মুছে ফেলা হয়েছিল হিলারির ইমেইল সার্ভার থেকে, সেগুলোও হুমার ওই মোবাইলে খুঁজে পায় তারা। তখন ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অ্যান্থনি ওয়েইনারের পাঠানো কিছু আপত্তিকর ইমেইলের বিষয়ে তদন্ত করছিল এফবিআই। ওই তদন্তের সময়েই এফবিআই ওই মোবাইল ফোনটি জব্দ পরীক্ষা করে। এফবিআই-এর পাওয়া নতুন ইমেইলগুলো আগের ইমেইল তদন্তের সময়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি, এগুলো উইকিলিকসের এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ইমেলের মধ্যেও নেই। আর এই ফোন উইকিলিকসের ইমেইল ফাঁসের আগে থেকেই এফবিআই-এর হেফাজতে রয়েছে বলে সাবেক এই ফেডারেল অ্যাটর্নি জানান।
জো ডি’জেনোভা মনে করেন, এফবিআই কর্মকর্তাদের চাপেই কোমি নতুন ধাপের তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তা তাদের আত্মসম্মানের সঙ্গে সংযুক্ত। তিনি আরও দাবি করেন, আগের তদন্ত সঠিকভাবে এগোয়নি আর তা ছিল অসম্পূর্ণ। তা না হলে হুমা ও অ্যান্থনির ব্যবহার করা ওই মোবাইল ফোন আগেই এফবিআই তদন্ত করতো। এক অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে ডি’জেনোভা আরও দাবি করেন, ইমেইল কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত হিলারির সন্দেহভাজন সাহায্যকারী শেরিল মিলস এবং হিদার স্যামুয়েলসনের ল্যাপটপ, যা এর আগে এফবিআই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছিল। তা এফবিআই গোয়েন্দাদের কাছেই সংরক্ষিত আছে। সেখান থেকেও এফবিআই অনেক তথ্য পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গোপন তথ্য প্রাইভেট ইমেইলে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
পুনঃতদন্তের ঘোষণার পর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের ফক্স ফ্রাইডে অনুষ্ঠানে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি জানিয়েছিলেন, ‘তদন্তকারীরা হিলারির মেইলগুলোতে কোনও বিশেষ তথ্য আছে বা কোনও বিশেষ বার্তা বহন করে কিনা, তারা তা খতিয়ে দেখছেন। এফবিআই ইতোমধ্যে ডেমোক্রাট প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভারে বেশ কিছু স্পর্শকাতর তথ্য পেয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, হিলারির ঘনিষ্ট ‘হুমা আবেদিন ও ওয়েইনারের কাছ থেকে এফবিআই একটি ডিভাইস আটক করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে ওয়েইনার নর্থ ক্যারোলিনার এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর কাছে যৌন হয়রানিমূলক বার্তা পাঠিয়েছেন।’ হুমা আবেদিন ও হিলারির মধ্যকার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ইমেইলের বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করা হবে বলে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ফক্স নিউজ।
এদিকে, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন-এর বিরুদ্ধে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা তদন্তে গতি আসছে। এখন এই তদন্তটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এফবিআই। সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ। অভিযোগ রয়েছে, হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়ে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ আর্থিক দুর্নীতি করা হয়েছে। ফক্স নিউজ জানায়, উইকিলিকস হিলারির ইমেইল ফাঁসের বহু আগেই এফবিআই গোয়েন্দাদের কাছে এ বিষয়ক প্রচুর তথ্য-প্রমাণ মজুদ ছিল। এক সূত্র ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, ‘প্রতিদিনই পাহাড় সমান তথ্য আসছে।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, নতুন তথ্যের একাংশ উইকিলিকস-এ প্রকাশিত দলিল ও ইমেইল থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে হিলারির আইনগত জটিলতায় পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। সিএনএন, ফক্স নিউজের মতো মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, এফবিআই-এর তদন্তে হিলারি দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা আদালতে গড়াতে পারে। আর আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে কারাগারেও যেতে হতে পারে হিলারিকে।
হিলারি ও তার ঘনিষ্টদের জন্য আরও বড় আশঙ্কার কারণ–ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া। ট্রাম্প আগে থেকেই দাবি করে আসছেন, হিলারি রাষ্ট্রীয় পদের অপব্যবহার করেছেন। তাই তিনি ‘প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন’। সেই সঙ্গে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে পারলে, তিনি হিলারিকে কারাগারে পাঠাবেন! তবে সবমিলে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন নির্বাচন এখন যতোটা না নির্ভর করছে জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার ওপর, তার চেয়েও বেশি পরিমাণে এটি নির্ভর করছে এফবিআই-এর কর্মকাণ্ডের ওপর। যেন ওই নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ এখন চলে এসেছে এফবিআই-এর হাতে!
সূত্র: ফক্স নিউজ, দ্য ইন্টারসেপ্ট, উইকিলিকস, পলিটিকো, সিএনএন, টাইম, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, গ্লোবাল রিসার্চ।