বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
ওমান সংবাদদাতা: ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে দেশের শিক্ষিত বেকারদের একটি বড় অংশ প্রতি বছর পাড়ি জমায় প্রবাসে। ওমান মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম একটি দেশ। অনেক রঙিন স্বপ্ন নিয়ে দেশটিতে পাড়ি জমায়। তবে না বুঝে দালালের ফাঁদে পড়ে ওমানে পাড়ি জমালেও টাকা তুলতেই অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। জানা গেছে, প্রতিটি লেবার ভিসায় খরচ হয় ওমানি প্রায় ৩৫০ রিয়াল যা বাংলাদেশি টাকায় ৭০ হাজার। সেখানে বাংলাদেশি ভিসা ব্যবসায়িরা ভিসা প্রতি উল্টো ১২শ থেকে ১৫শ পর্যন্ত প্রস্তাব করেন নিয়োগকর্তাকে। (যা বাংলার দুই লাখ চল্লিশ হাজার থেকে তিন লাখ পর্যন্ত)। এছাড়া ভিসা ব্যবসায়িদের হাত বদলের কারণে কখনো ভিসার দাম পড়ে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত ফ্রি ভিসার দরুণ। দালালরা বলেন, ওমানে কাজের অভাব নেই, মাস শেষে সর্বনিম্ন ৩০-৫০ হাজার টাকা রুজি করা যায়, কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন, অনেক কোম্পানি আছে যে, ৪-৫ পর্যন্ত বেতন দিচ্ছেনা।
দালালরা যে সুবিধার কথা বলেন তার অধিকাংশই বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। এমনটাই জানান অনেক ওমানে আসা অভিবাসিরা। তারা আরো বলেন, হালাল পথে রুজি করে মাস শেষে রুম ভাড়া, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল ও খানা-খরচ দিয়ে ১০-১৫ হাজার অনেক কষ্টের বিনিময়ে থাকে, আর তা হল বাস্তবতা। প্রতিটা ভিসার একজন ওমানি আরবাব থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় দালাল মধ্যেখানে থাকার দরুন আরবাবকে দেখার সুযোগ হয় না অনেক ওমান প্রবাসির। যার কারণে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অভিবাসিরা।
দুই বছর ভিসার মেয়াদে আসা ওমান প্রবাসিদের ব্যয় তুলতে মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। এরমধ্যে বিপদের পর বিপদ! ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন ভিসা লাগাতে প্রায় ৮শ রিয়াল যা বাংলার ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা (ফ্রি ভিসার ক্ষেত্রে)। একদিকে এখনো মূল টাকা তোলা হয়নি, অন্যদিকে আবার ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ভিসা লাগাতে চলে যায়।
অন্যদিকে ওমানের আইন অনুযায়ি যে কোম্পানি বা দোকানে নিয়ে আসে, ওই কোম্পানি বা দোকান ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করতে পারবেনা প্রবাসীরা। কিন্তু ভিসার ব্যয় তুলতে ঝুঁকি নিয়ে অনেকে অন্য কোম্পানি/রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তবে কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়লে জরিমানা, জেল অথবা দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ওমান প্রবাসিরা কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে একদিকে ক্ষয় করছেন, অন্যদিকে থাকছেন তীব্র মানসিক চাপে। তবে শেষ পর্যন্ত আকাশছোঁয়া অভিবাসন ব্যয় কোনো মতেই তুলতে পারছেন না বিধায় অধিকাংশই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর নতুন ভিসা না লাগিয়ে আনলিগেল হয়ে যায়।
এভাবেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে মানসিক সমস্যার ভুগছে বহু শ্রমিক। যার জেরে ভিসা প্রাপ্তিতে নতুন নতুন বিধিনিষেধ ও শর্ত আরোপ করছে দেশটি। যে সমস্যার মূলেই রয়েছে রক্তচোষা ভিসা ব্যবসায়িদের তৎপরতা।