রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর সেই সময়ের গোয়েন্দা সংস্থা আইবির (ইনটিলিজেন্স ব্রাঞ্চ) এর যে রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে প্রথম খণ্ড ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে। মোট ১৪ খণ্ডে প্রকাশ হবে এই প্রতিবেদন।
মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিনে বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মা এবং বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই হয়েছে পাকিস্তান আমলের বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধও হয়েছে তার নেতৃত্বে। আর তিনিই বাংলাদেশের জাতির পিতা।
এই মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি বঙ্গমাতার ভূমিকাও কম না। তিনি বুদ্ধি পরামর্শের পাশাপাশি সংকটকালীন সময়ে দৃঢ়চেতা ভূমিকা নিয়েছেন। আর এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর দেয়া ছয় দফার বিপরীতে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতাদের দেয়া আট দফা পাত্তা পায়নি। আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাবও বঙ্গবন্ধু নাচক করেন স্ত্রীর পরামর্শে।
শেখ হাসিনা জানান, তিনি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আইবির রিপোর্টগুলো দেখেন। আর এরপর এগুলো ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেন।
‘আমি সমস্ত ফাইলগুলি নিয়ে আসলাম। এই ফাইলগুলো নিয়ে এসে সবগুলো ফটোকপি করি। সেখানে ৪৭ খানা ফাইল আমার আব্বার বিরুদ্ধে। অন্যান্য অনেক নেতাদের ফাইল আমি নিয়ে এসেছি, তাদের কারও বিরুদ্ধ এক খানার বেশি ফাইল নাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ৪৮ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত ৪৭ খানা ফাইল ওনার বিরুদ্ধে লেখা। তার নানা চিঠি ও নির্দেশনা ওই ফাইলে আছে। তার দুই খানা খাতা যে বাজেয়াপ্ত করেছে, তাও সেখানে আছে।’
এই প্রতিবেদন বই আকারে ছাপা হবে, সেটি আগেও জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আর তিনি জানান, এর অগ্রগতি কতদূর। বলেন, ‘মোট ১৪টা ভলিউম হবে। ইতিমধ্যে প্রথম ভলিউমটা ছাপাখানায় চলে গেছে। শুধু আমার মুখবন্ধটা, সেটাও লিখে দিয়েছি। কিছু নির্ঘণ্ট করা দরকার, সেটাও আমরা করে দিয়েছি।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসংখ্য বই, কবিতার ভিড়ে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ডায়রি ‘কারাগারের রোজনামচা’ তুমুল সমাদৃত হয়েছে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের এই পুরোধার নিজের চিন্তা-চেতনা, আদর্শ-দর্শন এবং কৈশোর-যৌবনের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি জানা গেছে এই দুটি বইয়ে।
বই দুটি প্রকাশের পর এমনকি আওয়ামী লীগের বিরোধীরাও ক্ষমতাসীন দলকে বঙ্গবন্ধুর উদাহরণ দিয়ে সমালোচনা করে থাকে।
এর মধ্যে এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন বই আকারে এলে সেটি বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেক দলিল হবে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন, ‘এই রিপোর্টটা বের হলে পরে এটা বাংলাদেশের জন্য যে বাংলাদেশ কীভাবে স্বাধীন হলো, বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম এবং সেখান পাওয়া যাবে।’
‘কারণ, একজন নেতার বিরুদ্ধে এত রিপোর্ট, সেটা তো আর কারও বিরুদ্ধে নাই। একমাত্র পাকিস্তানের শত্রু ছিলেন মনে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে, পুলিশের এসবির কয়েকজনকে দিয়ে ভালোভাবে কাজ করিয়েছি। বর্তমানে যিনি আইজিপি, তিনি ছিলেন এসবির ডিজি, তাকে কিন্তু কয় বছর তাকে ওখানেই বসিয়ে রেখেছিলাম যে এই কাজটা করে দিতে হবে। আরও কিছু অফিসার, ডিপার্টমেন্টের ২০-২২ জনের মতো।’
‘সঙ্গে আমি, বেবী মওদুদ, আমরাও কাজ করেছি।’
পাকিস্তান আমলে গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি গিয়ে বঙ্গমাতা ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন নানা কৌশলে। সেই কাহিনি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “আমি তাদেরকে (এসবি অফিসার) আমি ঠাট্টা করে বললাম, ‘আমার মা এমন গেরিলা ছিলেন, এই যে আমার মা দিনের পর দিন যোগাযোগ করেছেন, পার্টির লোকদের সাথে কথা বলেছেন, আপনারা কোনোদিন ধরতেও পারেননি, কোনোদিন একটা রিপোর্টও লিখতে পারেননি। পাকিস্তানিরা পারে না ‘।”
‘আমার মা একজন সত্যিকার গেরিলা হিসেবে কাজ করেছেন এই দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য।’