শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

ভারতে এনআরসি-সিএএ বিক্ষোভে কমপক্ষে ১৬ জনের মৃত্যু

আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)র প্রতিবাদে উত্তাল আসুমদ্র-হিমাচল। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভে শনিবার উত্তর প্রদেশে তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে৷ ভারতে অব্যাহত প্রতিবাদে এ নিয়ে কমপক্ষে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ পাশাপাশি এবার এই আইনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে বাংলায় বড়সড় ধাক্কা খেল গেরুয়া শিবির। বিজেপি ছাড়লেন দার্জিলিংয়ের বিজেপির হিল কমিটির প্রভাবশালী নেতা সন্তবাহাদুর গুরুং। এদিকে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ৷

ভারতের উত্তর প্রদেশে শনিবার বিক্ষোভে তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ৷ গত শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যটিতে নয়জন মারা গেছেন৷ উত্তর প্রদেশের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা ও পি সিং জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, সব মিলিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে প্রতিবাদে দেশজুড়ে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপি মোট ১৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে৷ আর এএফপি বলছে, শনিবার পর্যন্ত ২০ জন মারা গেছেন৷ উত্তর প্রদেশে শুক্রবারের সহিংসতায় মোট ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে তারা, যার মধ্যে আট বছরের এক শিশুও রয়েছে৷ জেলা পুলিশ প্রধান এএফপিকে জানিয়েছেন সেখানকার শহর বারানসিতে শিশুসহ প্রায় আড়াই হাজার মানুষ একটি মিছিল বের করে৷ পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে৷ এসময় পদদলিত হয়ে শিশুটির মৃত্যু ঘটে বলে দাবি করেন তিনি৷

এদিকে, কুয়ালালামপুরে ইসলামিক সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ৷ ভারতকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র উল্লেখ করে দেশটিতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বিবেচনা করা হয় এমন কিছু না করার আহবান জানান তিনি৷ বলেন, কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মুসলমানদেরকে নাগরিকত্বের বাইরে রাখারে বিষয়টি অন্যায্য৷

উত্তর প্রদেশ ছাড়াও শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে কলকাতা, চেন্নাই, পাটনা, কোচিসহ বিভিন্ন জেলায়৷ সিএএ ও এনআরসি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ এ বার দক্ষিণ ভারতেও। সোমবার চেন্নাইয়ের রাজপথে বিশাল মিছিল করল বিরোধীরা। ডিএমকে-র ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হলেন কংগ্রেস-সিপিএম-সহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা। প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। অন্য দিকে সিএএ-র সমর্থনেও মিছিল হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সিএএ-এনআরসির প্রতিবাদে সোমবার প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা আগেই করেছিল ডিএমকে। সোমবার সেই মিছিল শুরু হতেই রাস্তায় ঢল নামল আম জনতার। ডিএমকে সুপ্রিমো এম কে স্টালিন ছাড়াও মিছিলে শামিল হয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কে বালাকৃষ্ণন, বিদুথালাই চিরুথাইগল কাটচি (ভিসিকে) সুপ্রিমো থোল তুরিমাভালভনের মতো নেতারা। এ দিন সকালে শহরের এগমোরে জমায়েত হন সব দলের সমর্থকরা। সেখান থেকে মিছিল করে শেষ হয় রাজারথিনাম স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামেই জনসভায় বক্তব্য পেশ করবেন মিছিলে অংশ নেওয়া দলের নেতা-নেত্রীরা।

বেঙ্গালুরুতে এ দিন সিএএ-এনআরসি বিরোধী একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। বেলা ১১টা নাগাদ শহরের হজরত খাজি মহম্মদ আবদুল কুদ্দুস সাহিব ইদগাহ্‌ ময়দান থেকে মিছিল শুরু করে শহরের মিলার রোড, নন্দী দুর্গা রোডের মতো এলাকা প্রদক্ষিণ করে। তবে কোথাও কোনও অশান্তির খবর নেই। অন্য দিকে শহরে এ দিন সিএএ-র পক্ষেও একটি মিছিল করেছে বিজেপি। সিএএ-এনআরসিকে সমর্থন করে মিছিল হয়েছে কলকাতাতেও। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি জে পি নাড্ডা।

রোববার বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ানোয় সোমবার নতুন করে কারফিউ জারি হয়েছে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিবাদ সোমবার অষ্টম দিনে পড়েছে।

প্রতিবাদ অব্যাহত আছে আসামেও৷ কয়েকশো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন রাজধানী গৌহাটিতে৷ ১০ দিন বন্ধ রাখার পর সেখানে ইন্টারনেট খুলে দেয়া হয়েছে৷ এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী নতুন দিল্লিতে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ সেখান থেকে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে আটজনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নীচে৷

দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে শুক্রবার গণমাধ্যমগুলোর কাছে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়৷ তাতে সম্প্রচার মাধ্যমগুলোকে সহিংসতা উস্কে দিতে পারে এমন কিছু প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে৷

পশ্চিমবঙ্গে আইনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে বড়সড় ধাক্কা খেল গেরুয়া শিবির। বিজেপি ছাড়লেন দার্জিলিংয়ের বিজেপির প্রভাবশালী নেতা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে দার্জিলিংয়ের বিজেপির হিল কমিটির নেতা সন্তবাহাদুর গুরুং যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।

পাহাড় কমিটির জেলা সভাপতি মনোজ দেয়ান জানিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের সময়ে তারা সন্তবাহাদুরের কাজে খুশি ছিল না দল। আর তাই তার দল ত্যাগ করা নিয়ে কারও খুব একটা মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু তাদের আচরণেই স্পষ্ট অন্য কথা। যদিও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে কোন রকম প্ররোচনাতে পা না দিতে। কিন্তু তারই মাঝে বিজেপির দলীয় নেতারা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় রীতিমত প্রশ্নের মুখে গেরুয়া শিবির।

উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন আগেই বালুরঘাটে বিজেপি ছাড়েন এক সংখ্যালঘু নেতা। যা বিজেপির কাছে অবশ্যই বড় ধাক্কা ছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ধাক্কা বঙ্গ বিজেপির। এবার দার্জিলিং। যা বাংলার বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত। সূত্র: এপি, এএফপি, টিওআই।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com