রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
ঘূর্ণিঝড় আমফানের তান্ডবে গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে লন্ডভন্ড উপকূলীয় এলাকা। গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে প্রচন্ড বেগে দমকা বাতাস বইছে এর সঙ্গে রয়েছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টি এবং বাতাস উপেক্ষা করে মানুষ ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন রোজাদার বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুরা। প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পটুয়াখালী ২ জন, চট্টগ্রাম, ভোলা, ও সাতক্ষীরায় একজন করে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ থেকে জীবন রক্ষায় আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে আসা মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বেশির ভাগ কেন্দ্র ভাঙাচোরা। দরজা নেই, জানালা নেই। নেই টয়লেট, পানি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা। উপকূল ও চরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এতে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন রোজাদার বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুরা। করোনা মহামারী আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা লোকজন চরম উদ্বেগ-শঙ্কায় রয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার সঙ্কটও আছে। আছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। নগরীর পতেঙ্গায় এলাকায় লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ তদারকি করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের বিভিন্ন স্কুল কলেজ এবং পাকাবাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. সালাউদ্দিন (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
যশোর : ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা. বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে প্রবল বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বৃষ্টি হয় থেমে থেমে। দিনভর অন্ধকার ছিল, সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। অমফান মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমের উপকূল অঞ্চলে। স্থানীয় প্রশাসন ও আশ্রয়কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ৬০৮টি, মংলায় ১০৬টি বাগেরহাটের ৯৯৭টি ও সাতক্ষীরায় ১২৭২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে রয়েছে গবাদি পশু। উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের অগ্রভাগ সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আঘাত হেনেছে। ওই এলাকায় তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ৬০-৭০ কিলোমিটার।
বরিশাল : পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও ভোলার উপকূলভাগে বিকেল ৫টার দিকে বাতাসের তীব্রতা ৫৫-৬০ কিলোমিটারে উঠেছে। জোয়াড়ে ভর করে আসা আম্পনের প্রভাবে সমগ্র উপকুলভাগে নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিহীন সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াল ঝড়ের আতংক নিয়ে আধার নামছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ৩ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১০ লাখ নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নিরাপদ আশ্রয় লাভ করেছে। তবে এ বিপুল সংখ্যক মানুষ কেন্দ্রগুলোর এক ছাদের নিচে আশ্রয় নিতে গিয়ে করোনা ভাইরাসের আতংক ও সংক্রমনের মধ্যে সামাজিক দুরত্ব সঠিকভাবে বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
খুলনা : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুপার সাইক্লোন আমফানের অগ্রভাগ খুলনা উপকূল অতিক্রম করছে। যার প্রভাবে খুলনায় ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বইছে। আগামী আধা ঘণ্টায় এটি খুলনা উপকূল অতিক্রম করবে। তখন বাতাসের গতিবেগ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার হবে।এছাড়া বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষ।
পটুয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় ‘আমফানের’ প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছীন্ন কমপক্ষে ৮টি গ্রামের সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, জোয়ারের পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দুইজন নিহত হয়েছেন। গতকাল গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রাসেদ (৬) নামে এক শিশু ও কলাপাড়ায় মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া এলাকায় খালে নৌকা ডুবে নিখোজঁ শাহ আলম নামে এক স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যু হয়েছে।
চরফ্যাশন : ঘূর্ণিঝড় আম্ফান চরফ্যাশন উপজেলা একনারী মারাত্মক জখম ও বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় সাইক্লোন ‘আমফান’ সর্বোচ্চ ২৪৫ কিলোমিটার গতির ঝড়ো বাতাসে চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছুপিয়া এলাকার রেন্ডিগাছ ভেঙে মাথায় পড়ে ৭০বছরের বৃদ্ধ সিদ্দিক ফকির মারাত্মক জখম হয়। তাকে তাৎক্ষণিক চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসকেরা তার অবস্থা খারাপ দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।
সাতক্ষীরা : সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমফান পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ঢুকে তান্ডব চালাতে থাকে। ঝড়ের গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার। স্বাভাবিক জোয়ারের চাইতে ৬ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নসহ উপক‚লীয় এলাকার অধিকাংশ দূর্বল বেড়িবাঁধগুলো রাতের জোয়ারে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে বহু গ্রাম, মাছের ঘের। আমপানের তান্ডবে সুন্দরবনসহ উপক‚লীয় এলাকা আশাশুনি-শ্যামনগরের বহু গাছ ও ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে। বিকাল থেকেই গোটা জেলা বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে। সাতক্ষীরা অবহাওয়া অফিস জানিয়েছে শহরে বাতাসের গতিবেগে রয়েছে ঘণ্টায় ১০০ কি.মি.। এদিকে, সাতক্ষীরা শহরের সংগীতা মোড় এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই মধ্য বয়সী নারী শহরের কামালনগর এলাকার বাসিন্দা।
ঝালকাঠি : ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ক্রমেই বাড়ছে এবং তীব্র রূপ নিচ্ছে। জেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় বেড়েছে পানিও। এরই মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত পাঁচ ফুট পানি বেড়েছে নদী তীরে।