শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের সাওগাত নিয়ে আসছে মাহে রামাযান

রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের সাওগাত নিয়ে আসছে মাহে রামাযান

রেজাউল করিম মছরুর:

আরবি বর্ষপঞ্জি তথা হিজরি সালের শাবান চান্দ্রমাসের সমাপ্তির পরই প্রতিবছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসে ইবাদতের মাস রমজানুল মোবারক। এ গুরুত্ববহ তাৎপর্যপূর্ণ মাসের আগমন সারা বিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

মুসলমানদের জীবনে সারা বছরের মধ্যে রমজান মাসে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি। তাই বলা হয়, রামাযান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকর, শোকর তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। মাহে রামাযান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সা. সাহাবায়ে কিরামকে মোবারকবাদ দিয়ে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’(মুসলিম)

‘রামাযান’ শব্দটি আরবি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রামাযান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযমের সঙ্গে জীবন-যাপন করে এবং ষড়রিপুকে দমন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। রোজা মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রামাযান’।

রাসুলুল্লাহ সা. রামাযান মাসের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতেন এবং রজব মাসের চাঁদ দেখে মাহে রামাযান প্রাপ্তির আশায় বিভোর থাকতেন। শাবান মাসকে রমজান মাসের প্রস্তুতি ও সোপান মনে করে তিনি বিশেষ দোয়া করতেন এবং অন্যদের তা শিক্ষা দিতেন। সাহাবায়ে কিরাম শাবান মাসে আসন্ন রমজান মাসকে নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে অতিবাহিত করার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। শাবান মাসের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে সাহাবিরা অধিক পরিমাণে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শুরু করতেন।

ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যক্তিরা হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করে জাকাত প্রদানের প্রস্তুতি নিতেন। প্রশাসকেরা কারাবন্দি লোকদের মুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। রাসুলুল্লাহ সা. যখন শাবান মাসে উপনীত হতেন, তখন মাহে রমজানকে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্যে আবেগভরে আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনা করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রামাযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

তাই মাহে রমজানের অসীম কল্যাণ ও বরকত লাভের প্রত্যাশার জন্য দৈহিক ও মানসিকভাবে ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। রাসুলুল্লাহ সা. একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ করে মাহে রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এ মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (মিশকাত)

নৈতিক পরিশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস হিসেবে মাহে রমজানের আগমনে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান নামাজ- রোজার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা, টুপি কেনেন অথবা ধুয়ে-মুছে পাক-পবিত্র করে রাখেন। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ রামাযান মাসের বিশেষ খতমে তারাবি নামাজ জামাতে পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নফল ইবাদত, জিকর-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তেগফার, দান-সাদকা করে বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে সচেষ্ট হন।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা প্রতিশ্রুতি সম্পাদনকারী এবং অর্থসংকটে দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটের সময় ধৈর্যধারণকারী, তারাই হলো সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকি।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭)

তাই পবিত্র এই মাসে নামাজ-রোজা পালন তথা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি তথা সেহরি, ইফতার, তারাবি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, তাহাজ্জুদ, জিকর-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তেগফার, জাকাত-ফিতরা, দান-সাদকা প্রভৃতি আদায় প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য।

কেননা, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র রামাযান মাস ভালোভাবে যাপন করবে, তার সমগ্র বছর ভালোভাবে যাপিত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রজনী আগমন করে, তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করেন, ‘হে কল্যাণকামী, এগিয়ে যাও! হে মন্দান্বেষী, স্তব্ধ হও!।’ (তিরমিজি)

লেখক: শিক্ষার্থী, গাছবাড়ী জামিউল উলুম কামিল মাদরাসা।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com