বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
এদিকে ভোটে সুস্পষ্টভাবে পরাজিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেষ নীলনকশাও কার্যত ভণ্ডুল হয়ে গেছে। শুক্রবার এক দিনে দুই রাজ্য থেকে চূড়ান্ত আঘাত এসেছে ট্রাম্পের ওপর। এদিন জর্জিয়ায় জো বাইডেনের জয়ের সার্টিফিকেট দিয়েছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। ট্রাম্পের শেষ ট্রাম্পকার্ড মিশিগানের কর্মকর্তারাও বলেছেন, বাইডেনের জয়ের সার্টিফিকেট না দেওয়ার পক্ষে কোনো প্রমাণাদি তাদের কাছে নেই। ট্রাম্প এখানকার রিপাবলিকান প্রশাসনকে ব্যবহার করে বাইডেনের জয় ঝুলিয়ে রাখার নিষ্ম্ফল চেষ্টা করেছিলেন।
অন্যদিকে পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভোট গণনা স্থগিত রাখার পক্ষে আদালতে ট্রাম্পের আইনজীবী কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। সব মিলে রাজ্য আইনসভার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার আশাও শেষ হয়ে গেছে ট্রাম্পের। তবে ট্রাম্প এখনও নিজের পরাজয় স্বীকার করেননি। ট্রাম্প মিশিগানের প্রভাবশালী দুই রিপাবলিকানকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। রাজ্য সিনেট সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মাইক সিরকেই এবং রাজ্য আইনসভার স্পিকার লি চ্যাটফিল্ড শুক্রবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওয়াশিংটন পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে একদল বিক্ষোভকারী তাদের দেখে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারীরা মিশিগানের ভোট অবিলম্বে প্রত্যয়ন করার দাবি জানান।
হোয়াইট হাউসে রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ট্রাম্পের সঙ্গে সভা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। সভা থেকে বেরিয়ে রিপাবলিকান পার্টির এ দুই নেতা সাফ জানিয়ে দেন, মিশিগানের ভোট যথানিয়মেই প্রত্যয়ন হবে। ফলাফলের কোনো পরিবর্তনের তথ্য তাদের কাছে নেই। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্ভবত তাদের যুক্তির সঙ্গে একমত হয়েছেন। তাই ওই দুই কর্মকর্তা পরোক্ষভাবে বাইডেনকেই জয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
মিশিগানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন জিতেছেন। ভোটের ফল প্রত্যায়ন করা নিয়ে সেখানে নাটকীয় অবস্থা তৈরি হয়। কাউন্টি নির্বাচন বোর্ডের দুই রিপাবলিকান সদস্য প্রথমে সার্টিফিকেটে সই দিতে অস্বীকার করেন। পরে গণরোষের ভয়ে তারা স্বাক্ষর করেন। অবশ্য স্বাক্ষর দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তারা দাবি করেন যে তাদের কাছ থেকে চাপ দিয়ে স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছে।
নির্বাচন-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায় হেরে চাপে পড়েন ট্রাম্প। তখন তিনি তার দলের নেতাদের বোঝাতে শুরু করেন বাইডেনের জয়কে তারা যেন কোনোভাবেই স্বীকৃতি না দেন। পেনসিলভানিয়ার নেতাদের সঙ্গেও ট্রাম্প বৈঠকে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ তা আর হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও নির্বাচনে তার বিজয় নিয়ে ভিত্তিহীন দাবি তুলেছেন। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনে আমি জয়ী হয়েছি।’ তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন না নিয়ে সংবাদ সম্মেলন স্থল ছেড়ে চলে যান। নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে ট্রাম্পের এই অনাস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে বিশ্নেষকরা মন্তব্য করেছেন। ট্রাম্পের আইনজীবী সিন্ডি পাওয়েল দাবি করেছেন, সব ক’টি দোদুল্যমান রাজ্যের ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। এসব নিয়ে তারা সর্বোচ্চ আদালতে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।
বাইডেন ডেলাওয়ারে নিজের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটর চার্লস শুমারের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তারা কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। নাগরিকদের জন্য প্রণোদনা আইন দ্রুত পাস করা নিয়েও কথা বলেছেন। বাইডেনের টিম যথারীতি ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই ক্ষমতা গ্রহণের কাজকর্ম এগিয়ে নিচ্ছে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন