সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার/সাইফুর রহমান:
দিরাইয়ের নদ-নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির সাথে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে দিরাইয়ের হাওর রক্ষা বাঁধ। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন বেশ কয়েকটি বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১০৪টি বাঁধের মধ্যে ৮টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৫, ৮৬ ও ৮৭নং পিআইসি অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা যায়। তাছাড়া সাধারণ ঝুঁকিতে রয়েছে ৮০নং পটাইখালী, ৩২নং জারলিয়া, ৭নং খাকসিরা, ৮৭নং কেজাউড়া ও ৯৩নং জয়পুর বাঁধ।
সরেজমিন বেশ কয়েকটি বাঁধ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নিম্নমানের কাজের কারণে এবং ড্রেসিং ঠিকমতো না হওয়ায় নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে বাঁধ দিয়ে পানি ছুঁইয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে, এতে অনেক বাঁধই ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট পিআইসির সভাপতিরা বলছেন, বাঁধ ভালো আছে, কোনো বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু এলাকার লোকজনকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করতে দেখা গেছে। দিরাই পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম মাছুম প্রদীপের নেতৃত্বে পূর্বদিরাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের খাল দিয়ে বরাম হাওরে পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ১১নং পিআইসির সাকিতপুর গ্রামের নয়াবাড়ির সামনের অংশে বাঁধের ভেতর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। গ্রামের লোকজন তাই বাধ্য হয়েই বাঁশ ও মাটি দিয়ে সেটি মেরামতের কাজ করছেন। গ্রামবাসি জানান, এ হাওরে সাকিতপুর, চান্দপুর, করিমপুর, মাটিয়াপুর ও শ্রীনারায়ণপুর গ্রামের প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এ বাঁধ ভেঙ্গে গেলে সবগুলো জমি তলিয়ে যাবে নিমিষেই। জানতে চাইলে পিআইসির সভাপতি জ্যোতির্ময় তালুকদার জানান, আমি এখন বাড়ির কাজে আছি, বাঁধে কোন সমস্যা হচ্ছে না বলেও তিনি জানান। সূত্র মতে, ০.০৬৪ কিলোমিটার বাঁধের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৮১ টাকা ৬৪ পয়সা।
এদিকে বরাম হাওরের তুফানখালীতে তিনটি পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এই তিনটি বাঁধকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে ৮৫নং পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৩৪৯ টাকা ৩৯ পয়সা, ৮৬নং পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ২৯ হাজার ১২৬ টাকা ৮৪ পয়সা ও ৮৭নং পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২১ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৬ টাকা ৩৪ পয়সা।
অন্যদিকে সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকায় রয়েছে চাপতির হাওরের ৭নং খাকসিরা পিআইসিতে বরাদ্ধের পরিমাণ ১০ লাখ ৪২ হাজার ১১৭ টাকা ২১ পয়সা, টাংনী হাওরের ৩২নং জারলিয়া পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ২ হাজার ৪১২ টাকা ৮৫ পয়সা, বরাম হাওরের ৮০নং পটাইখালী পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২০ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৭ টাকা ৮৮ পয়সা, উদগল বিল হাওরের ৯৩নং জয়পুর পিআইসিতে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ২৪ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫ টাকা ৪৮ পয়সা।
বরাম হাওরের ৭৭নং পিআইসির সভাপতি মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, এ বছর আমাকে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার না দিয়েই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা অনুসারে কাজ করেছি। আমাদেরকে অন্ধকারে রেখেই তারা কাজ করিয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কাজের পূর্ণ টাকা পাননি বলেও তিনি জানান।
দিরাই উপজেলার হাওর রক্ষা বাঁধের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা (এসও) এ.টি.এম. মোনায়েম হোসেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তিনটি বাঁধ চিহ্নিত করেছি, আর সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে আরও ৫টি। তবে বাঁধের সার্বিক অবস্থা ভালো আছে, আমরা মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক পরিদর্শন ও কাজ করে যাচ্ছি।