মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, হাওরপাড়ের কৃষকদের দৃ:খ-দুর্দশা দেখে সত্যিই আমি আতঙ্কিত। যাদের এক ফসলি জমির উপর নির্ভরশীল, সেই কৃষকদের কল্যাণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে সরকার বিভিন্ন ধরণের কার্ডের ব্যবস্থা করে দেবে। এছাড়া প্রণোদনা হিসেবে আগামি বোরো মৌসুমে এই হাওরের ফসল ডুবির শিকার কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সার-বীজ ও কীটনাশক দেয়া হবে। গতকাল (শনিবার) সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ডুবে যাওয়া চাপতি হাওর পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদেরকে তিনি একথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ বেনজির আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোঃ মোশাররফ হোসেন খান, সিলেটের উপ-পরিচালক মুজিবুর রহমান, সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাহিদ আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা (এসও) এ.টি.এম. মোনায়েম হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল হক ইমনসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতি বছর হাওর এলাকায় বন্যার পানি একটু আগেই চলে আসে, একটি মাত্র ফসল বোরো ধানই এই এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জে হাওর এলাকা রয়েছে। গত কয়েক বছর ভালই ছিল, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার কারণে কৃষকরা মোটেই তাদের ধান কাটতে পারেনি। এ বছর চাপতির হাওরের বৈশাখীর বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। তাতে কৃষকদের প্রায় ৬০/৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কা অনুযায়ি, সামনে আরও বৃষ্টি হতে পারে। সেটি যদি হয়, তবে আমাদের জন্য হবে চরম দু:খজনক। ফলে অর্থনীতিতে ব্যবাপক প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে যারা অতি কষ্ট করে বোরো ধান করে ঘরে তুলতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর হাওরের ফসল ডুবির জন্য আমরা কতগুলো কারণ চিহ্নিত করেছি। এরমধ্যে আমরা যে ধানের জাত চাষ করি, সেগুলো আসতে ও পাকতে একটু সময় লাগে। আরেকটা হল, বাঁধগুলোর রক্ষণা-বেক্ষণ ব্যবস্থা আশানুরূপ না। আগামিতে বাঁধগুলোকে টেকসই করতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সে লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশের ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ, অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অসহায় হয়ে পড়েন, তাই সবার সাথে সমন্বয় রেখেই কাজ করতে হবে। আর সমন্বয় বাড়াতে পারলে বাঁধের কাজগুলো টেশসই হবে, কমিয়ে আনা যাবে ক্ষতির পরিমাণ।
কৃষি মন্ত্রী বলেন, এই এলাকার মানুষের অনেক দিনের দাবি নদী খনন করা, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে না পারলে শুধু বাঁধ দিয়ে হবে না। নদী খনন করে সেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে বলেই মানুষের কথা চিন্তা করে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি।
তিনি আরও বলেন, আগামি নভেম্বর-ডিসেম্বরেই বাঁধের কাজ শুরু করতে হবে এবং বন্যা আসার আগেই তা শেষ করতে হবে। চাপতির হাওরে প্রায় ১২ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রশাসন থেকে কিছুটা সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামিতে ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে। দেশে খাদ্য নিয়ে কোন হাহাকার নেই, সেই হিসেবে এই এলাকার মানুষও না খেয়ে থাকবে না।
এদিকে কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক চাপতি হাওরের বৈশাখি বাঁধের আসার সাথে সাথেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাঁধ সিন্ডেকেটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বার বার এই সিন্ডিকেটের কথা মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। পরে মন্ত্রী তার বক্তব্যে বাঁধ বিষয়ে পুরো পরিকল্পনা তুলে ধরেন।