রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১

আতঙ্ক নিয়েই কৃষকদের ধান কাটায় তোড়জোড়: হৃদয়ে বোবা কান্না

amarsurma.com

মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
হৃদয়ে বোবা কান্না ও আতঙ্ক নিয়েই চলছে হাওরপাড়ে ধান কাটার তোড়জোড়। পাকা-আধাপাকা ধান কেটেই মনের শান্তনা নিচ্ছেন হতভাগা কৃষকরা। তাছাড়া মৌসুমের শুরুতেই কয়েকটি হাওর তলিয়ে নি:শেষ হাজার হাজার কৃষক। তাদের পরিবারের দীর্ঘ স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।
জানা যায়, চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কাটি শেষমেষ বাস্তবে রূপ পেল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি গত দুই সপ্তাহে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ছোট-বড় অনেক হাওর প্লাবিত হয়। পাহাড়ি ঢলে বাঁধ উপচে ও ভেঙে ইতিমধ্যে শাল্লার ছায়ার হাওর, তাহিরপুরের নজরখালী, টাঙ্গুয়ার একাংশ, গুমরার হাওর, দিরাইয়ের চাপতি ও হুরামন্দিরা, জগন্নাথপুরে নলুয়ার হাওরসহ জেলার ১৯টি ছোট-বড় হাওর-বাওর ও ফসলি বিল তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কয়েক হাজার কৃষকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি।
একদিকে পাহাড়ি ঢল ও অন্যদিকে হাওর রক্ষা বাঁধে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় হাওরাঞ্চলের কৃষক নিজেদের পাকা ও আধাপাকা ধান কাটছেন তোড়জোড় করেই। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের তাগাদাও ছিল আতঙ্কের অন্যতম কারণ। প্রতি বছর সরকার হাওর রক্ষা বাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা দিলেও টেকসই বাঁধ হয় না কখনই। পিআইসি কমিটির সদস্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ দলীয় কিছু নেতাকর্মীদের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রতি বছরই অভিযোগ থাকে সাধারণ কৃষকদের পক্ষ থেকে। তবে কৃষকরা সব হারালেও মধ্যস্বত্ত্ব ভোগি হিসেবে পিআইসি, দলীয় কিছু নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রশাসনের একটি বড় অংশ তাদের পকেট ভারী হয়।
দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলার ছোট-বড় ১০টি হাওর ও হাওর সংলগ্ন কয়েকটি হাওরে এ বছর ৩০ হাজার ১১০ হেক্টর বোরো চাষ হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ইতিমধ্যে তলিয়ে ফসলহানি ঘটেছে চাপতি ও হুরামন্দিরা হাওরের। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, ওই দুই হাওর ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। তবে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি বিভাগের দেয়া এ ক্ষয়ক্ষতির তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই।
সূত্র আরও জানায়, এ বছর দিরাইয়ে মোট ৩০ হাজার ১১০ হেক্টর বোরো জমি আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে ২৮ হাজার ৪৩০ হেক্টর ও হাওরের বাইরে (পতিত জমিতে) ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর। হাইব্রিড মোট ১৩ হাজার ৮৭৭ হেক্টর, হাওরে ১২ হাজার ৫১২ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর। উফসি মোট ১৫ হাজার ৯৮৮ হেক্টর, হাওরে ১৫ হাজার ৬৮৮ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ৩শত হেক্টর। স্থানীয় মোট ২৪৫ হেক্টর, হাওরে ২শত হেক্টর ও হাওরের বাইরে ১৫ হেক্টর। চলতি বছর বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১০৩ মেট্রিক টন চাউল। গত বছর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা এ বছরের সমান থাকলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাউল। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন চাউল। এ বছর বোরোতে ৩০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র মতে, গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত হাওরে ৯৩ শতাংশ ও হাওরের বাইরে ৬ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। তবে এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে সূত্রটি জানায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com