বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ অপরাহ্ন
যুক্তরাজ্যে থেকে দেশের রাজনীতিতে যুক্ত সিলেটের অনেকেই। এরমধ্যে অধিকাংশরাই দেশীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত। এতে নেতাকর্মীদের পরিবারে বাড়ছে দূরত্ব। বিএনপি-আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির পেছনে সময়-আবেগ-শ্রম-অর্থ খরচ করে দিনশেষে তারা ভুগছেন হতাশায়। -খবর বাংলা ট্রিবিউনের
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
খবরে বলা হয়- যুক্তরাজ্য থেকে যারা গত বিশ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি করছেন এমন লক্ষাধিক প্রথম প্রজন্মের প্রবাসী তাদের আয়ের একটি অংশ প্রবাসে পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচিতে, দেশে সাংগঠনিক কাজে খরচ করেন। বিশেষ করে সিলেট বিভাগে সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রার্থীদের সিংহভাগ ব্যয়ের খরচ জোগান প্রবাসীরা। অথচ কোটি প্রবাসীর দেশে ভোটাধিকারের দীর্ঘদিনের দাবি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। রাজনীতিতে সময় দিতে গিয়ে পরিবারকে সময় দিতে না পারায় গত দুই দশকে প্রবাসীদের অনেক পরিবারে দেখা দিয়েছে ভাঙন, অশান্তি। রাজনীতি, টেবিল টক, আড্ডা আর ফোনালাপে ব্যস্ততায় সন্তানদের সময় দিতে না পারায় সন্তান ও স্ত্রীর সঙ্গে তৈরি হচ্ছে দূরত্ব।
জানা গেছে, অন্তত সত্তর বছর ধরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে নিজেদের পছন্দের দলের জন্য বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের পেছনে অকাতরে টাকা খরচ করছেন। অনেকে বিদেশে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রবাসে বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন, সামাজিক মর্যাদা লাভের আশায় প্রবাসের স্ব স্ব দলের কমিটিতে পদ-পদবি পেতে সময় ও অর্থ খরচ করছেন। সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে সময় দিতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাদের অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
উল্লেখ্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা শেখ সুজাত মিয়া ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে দুই বার এমপি হন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের শীর্ষ নেতা বর্তমান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ২০০৮ ও ২০২৩ সালে দুই বার সিলেট ২ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মধ্যে সিলেট-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী ও গণফোরাম থেকে মোকাব্বির খান একবার করে ও হুইপ সেলিম উদ্দীন ২০১৪ সালে সিলেট-৫ আসন থেকে এমপি হন।
লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার মামলায় আসামি হওয়ায় অনেক বিএনপি নেতাকর্মী মা-বাবা মারা গেলেও লাশ দেখতে দেশে যেতে পারছেন না। অনেকে দেশে গিয়ে দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে অনেক হাইব্রিড নেতা হুন্ডিসহ নানা ধরনের অবৈধ ও কিছু বৈধ ব্যবসা করে মিলিয়নিয়ার হয়েছেন। কিন্তু সেই দলেরই ত্যাগী নিবেদিত নেতাকর্মীরা বিত্তবান নেতাদের কাছে অসহায়। বড় দুটি দলেই প্রবাসের ত্যাগী নেতারা উপেক্ষিত। পদ-পদবি শেষ পর্যন্ত সুবিধাবাদী, বিত্তবানদের হাতেই বন্দি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন যিনি থাকেন গত দুই যুগ ধরে তিনি ব্রিটেনে এলে অন্য দলের এখানকার নেতাকর্মীরা ডিম ছোড়েন, হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করেন। প্রবাসের মাটিতে এসব দেখে বিদেশিরা হাসে। দেশ অপমানিত হয়।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী বলেন, সংসার সন্তানদের সময় না দেওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে রাজনীতি একটি। মেধা, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা যাদের বেশি তারাই নেতা হন। সবাই যে শুধু প্রবাসে রাজনীতিতে সময় ও টাকা নষ্ট করেন তা নয়। গান-বাজনা, নেশা-জুয়াতেও অনেক প্রবাসী সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের কাছে আমার অনুরোধ,পরিবারকে সময় দিন, আগে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হন, তারপর রাজনীতি আর সামাজিকতা।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটের জগন্নাথপুরের ব্যবসায়ী এম এ কাদির বলেন, ব্রিটেনে থেকে ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হলে তারা নিজেরা সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের পাশাপাশি ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারতেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সদস্য শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন বলেন, প্রবাসী জীবনে বাংলাদেশি রাজনীতি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, কিন্তু যেহেতু আমরা অনেকেই দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে আছি, দেশে আমাদের বাড়িঘর, সহায়-সম্পত্তি, পরিবার-পরিজন রয়েছে, তাই রাজনীতি সচেতন যে-কেউ পরবাসে বাংলাদেশি রাজনীতি করতেই পারেন। কিন্তু নিজের পরিবার, কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে ফুলটাইম রাজনীতি করতে গিয়ে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। সংসার জীবন, সন্তান, স্ত্রী-পরিবারের প্রতি উদাসীন হওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
তিনি আরও যোগ করেন, তবে দেশে যেমন রাজনীতি দুর্বৃত্তায়িত, পরবাসেও সেটা সংক্রমিত। চিহ্নিত সুবিধাভোগী দালাল, চাটুকার, তেলবাজদের কারণে প্রকৃত রাজনীতিকদের রাজনীতিতে টিকে থাকা অনেক কষ্টকর। ক্ষমতার আনুকূল্য টাকাওয়ালা দুর্জনদের পুরস্কৃত করে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের ভোটাধিকারের কথা বলা হলেও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছরেও দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির মৌলিক এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ স্ব স্ব দেশের প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়। বাংলাদেশের মোট ৮ শতাংশের ওপরে প্রবাসী। সেই হিসাবে ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার ভোটার প্রবাসী হিসেবে কর্মরত। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংসদে প্রবাসীদের জন্য সংক্ষরিত আসন থাকলেও বাংলাদেশে নেই।