শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এই দিনে ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। হাজার বছরের শোষণ-বঞ্চনার অভিশাপমুক্ত হওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাঙালি জাতির সংগ্রামময় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এ দিনটি। ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনটিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের।
পাকিস্তানি শোষকদের কবল থেকে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। ৯ মাস বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় বিজয় ও সার্বভৌমত্ব। জাতি অর্জন করে একটি দেশ, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ কোনো ধরনের সহিংসতা সমর্থন করে না। তিনি জাতীয় জীবনে আরও ধৈর্য, সংযম ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। আসুন, সব ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
পুরো জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনতচিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার অবর্তমানে যুদ্ধ পরিচালনাকারী তারই সহকর্মী চার জাতীয় নেতা এবং ৯ মাসে অসামান্য আত্মত্যাগকারী বাংলার অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। পাশাপাশি দেশ আজ মেতে উঠবে স্বাধীনতা উৎসবের আমেজে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগমুহূর্তে দেয়া সে ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ ও নির্দেশ দেন। তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে সে বার্তা ছড়িয়ে যায় দেশের সর্বত্র। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় সেদিনই ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুরো জাতি।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে শপথ নেয় স্বাধীন বাংলার অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত এ সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে।
৯ মাস চলা মুক্তিযুদ্ধে একদিকে রচিত হয় ইতিহাসের মহীয়ান অধ্যায়, মুক্তিকামী বাংলার মানুষের বীরত্বগাথা; আরেক দিকে ছিল হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজের কলঙ্কিত অধ্যায়। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৩০ লাখ মানুষের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে লাখো কণ্ঠে সারা দেশে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়েছে। সারা দেশের মানুষ একযোগে গেয়ে উঠলেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…’। সোমবার (২৬ মার্চ) সকালে দেশের পাশাপাশি প্রবাসেও একযোগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। একযোগে জাতীয় সংগীত পরিবেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে উঠেন ‘আমার সোনার বাংলা…’। এর আগে সবাইকে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আহ্বান জানানো হয়।