বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী আর নেই। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সোমবার সকাল নয়টার দিকে মারা যান (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যকালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৌলভীবাজার স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সৈয়দ মহসিন আলীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সৈয়দ মহসিন আলী নিউমোনিয়া, কিডনিতে সমস্যা এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। গত ৫ আগস্ট অসুস্থ হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গত ৪ আগস্ট রাতে হবিগঞ্জের মাধবকুণ্ডে আলোচনা সভা থেকে ফিরলে রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপরই মন্ত্রীকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়। এরপর পরিবারের সিদ্ধান্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয় সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে।
সৈয়দ মহসিন আলী ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর আগে ২০০৮ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময়ে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে ছাত্রজীবনে সৈয়দ মহসিন আলীর রাজনীতি শুরু। ১৯৭১ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সিলেট বিভাগ সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার ছিলেন এবং যুদ্ধে আহতও হয়েছিলেন।
সৈয়দ মহসিন আলী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি সিলেট জেলা ও বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সৈয়দ মহসিন আলী মৌলভীবাজার পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা/জেলা রেডক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মৌলভীবাজার চেম্বারের সভাপতি এবং মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্বও পালন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি তাকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক-২০১৪’ প্রদান করে এবং ‘হ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা-২০১৪’ পুরস্কারে ভূষিত করে।
সৈয়দ মহসিন আলী ভারতের কলকাতা থেকে এমবিএ ডিগ্রি প্রাপ্ত। তিনি মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের আওতায় দেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে পরিবার পরিকল্পনা ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় বলা ও লেখায় সুদক্ষ। সৈয়দ মহসিন আলী সরকারি ও ব্যক্তিগত সফরে ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি ভ্রমণ করেছেন।
সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সড়কের ‘দর্জি মহল’-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ আশরাফ আলী এবং মা আছকিরুন্নেছা খানম। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ মহসিন আলী বিবাহিত এবং তিন কন্যা সন্তানের জনক। তিনি একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গীত প্রীতি সর্বজনবিদীত। খেলাধুলা, সংগীত, বইপড়া ও শরীরচর্চা তার প্রিয় শখ।