শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মনোহরী ও বিবিধ মালামাল সরবরাহের দরপত্রে অনিয়ম ও স্বজন-প্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
মনোহরী ও বিবিধ মালামাল সরবরাহে অংশ গ্রহনকারি দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিহাব এন্টারপ্রাইজের বত্ত্বাধিকারী দিলোয়ার হোসেন ও মের্সাস মহসিন এন্টারপ্রাইজের স্বও্বাধিকারী মো. জসীম উদ্দিন পৃথকভাবে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মেসার্স নিহাব এন্টারপ্রাইজের স্বতও্বাধিকারী দিলোয়ার হোসেন গত ৭ অক্টোবর সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি উলেখ করেন. তার প্রতিষ্ঠান গত বছরের ২৯ অক্টোবর জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মনোহরী ও বিবিধ মালামাল সরবরাহ জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের টেন্ডারে অংশ গ্রহন করে। দরপত্র প্রকাশের পর তিনি জানতে পারেন ইতি লন্ড্রির স্বও্বাধিকারী ঝন্টু বৈদ্য সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন। বেশ কিছুদিন যাবার পর বিষয়টি পরিষ্কার হয় ।
কিভাবে একজন সামান্য লন্ড্রীর স্বত্ত্বাধিকারী মনোহরী ও বিবিধ মালামাল সরবরাহ করতে পারেন। এর পেছনে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারি হীরক রঞ্জন গোস্বামীর কারসাজি। ওই প্রধান সহকারি আড়ালে থেকে ইতি লন্ড্রীর বত্ত্বাধিকারী ঝন্টু বৈদ্যের নাম ব্যবহার করে দরপত্রের ব্যবসা করছেন হীরক রঞ্জন গোস্বামী।
একই ভাবে মেসার্স মহসিন এন্টারপ্রাইজের জসীম উদ্দিন জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৯ জানুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগের বিবরণে জানাযায়, মেসার্স মহসিন এন্টারপ্রাইজ বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছর থেকে বিধি অনুযায়ি জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মনোহরী ও বিবিধ মালামাল সরবরাহ করার জন্য আমার প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পায়। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারি হীরক রঞ্জন গোস্বামী আমার প্রতিষ্ঠানকে কোন চাহিদা পত্র দেননি আমাকে হুমকি ধামকি ও নানা কৌশল অবলম্বন করে তিনি নিজেই মনোহরী ও বিবিধ মালামাল ক্রয় করেন।
এরপর ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সিডিউল ক্রয় করেন। কিন্তু ওই প্রধান সহকারির নানা ছলছাতুরির কারণে আমার প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ গ্রহন করতে পারেনি। দুটি অভিযোগেহ উলেখ করা হয়।
২০১৮-২০১৯ দরপত্রের সিডিউলে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেওয়ার পর ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান সহকারি হীরক রঞ্জন গোস্বামী নিজে ২০১৮-২০১৯ সাল কলম দিয়ে কেটে ২০১৭-২০১৮ সাল করেছেন।
এতে করে দরপত্র সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হওয়ায় বিগত ৭ মাস ধরে হীরক রঞ্জন গোস্বামী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মনোহরী ও বিবিধ মালামাল নিজে ক্রয় করছেন। এতে তিনি সরকারি চাকুরী করেও ইতি লন্ড্রীর স্বত্ত্বাধিকারী ঝন্টু বৈদ্যের নাম ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
জানা যায় উপজেলার সাচনা বাজারে ইতি লন্ড্রীতে গিয়ে দেখা গেছে ওই প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ। এ প্রতিষ্ঠানটি স্বত্তাধিকারী ঝন্টু বৈদ্যের সঙ্গে কথা বললে মনোহরী ও বিবিধ মালামাল সরবরাহের দরপত্র কিভাবে ক্রয় করেছেন তা স্পষ্টভাবে কিছুই বলতে পারেন নি। তিনি এক একবার একএক কথা বলেন।
অপরদিকে, জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারি হীরক রঞ্জন গোস্বামী জানান, কম্পিউটারে টাইপ করা ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের দরপত্রের সিডিউলে ভুলক্রমে তিনি নিজে হাতের লিখে দেন ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছর। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান না থাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মনোহরী ও বিবিধ মালামাল প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি নিজেই ক্রয় করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী জানান. ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের স্থলে যদি হাতে লিখে ২০১৭-২০১৮ করা হয় তাহলে দরপত্রটি বাতিল করা হবে। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ জানান, একটি লিখিত অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।