সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
বিয়ের একদিন আগে বরের আত্মীয়-স্বজনকে আনতে গিয়ে নৌকাডুবিতে ১০ জনের সলিল সমাধি হওয়ার ঘটনায় পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় বাকরুদ্ধ বর এবং নিহতের পরিবারগুলো। ঘটনাটি ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামে।
শোকাহত পরিবার, গ্রামবাসি ও দিরাই থানা সূত্রে জানা যায়, দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে মোফাজ্জল মিয়ার বিয়ের দিন ছিল গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর (বুধবার)। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মোফাজ্জলের আত্মীয়-স্বজনকে নাইওরী আনতে নৌকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী মাছিমপুর ও নোয়ারচর গ্রামে যায়। ফিরে আসার সময় ছোট্ট নৌকাতে ৩০/৩৫ জন নারী ও শিশু উঠে পড়লে ঝুঁকি নিয়েই যাত্রা শুরু করে। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হঠাৎ ঝড়-তুফান শুরু হলে নৌকাটি ঝড়ের করলে পড়ে ডুবে যায়। এ সময় নৌকায় থাকা নারী-শিশুরা ডুবে গেলে খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নিখোঁজ সবার মৃতদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদল। নারী ও শিশুসহ নিখোঁজ ১০ জনের সবার মৃতদেহ উদ্ধারের পর দুপুরে অভিযান শেষ করা হয়েছে।
২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রাম থেকে ফিরোজ মিয়া পরিবারের লোকজন নিয়ে রফিনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে যান। বিকেলে সেখান থেকে সেখানকার আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ২৬ জন যাত্রীসহ ইঞ্জিনচালিত নৌকা কালিয়াকুটা হাওরের আইনুল বিলের পাশে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়।
খবর পেয়ে এলাকাবাসী উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে জীবিত ও চার শিশুর লাশ উদ্ধার করে। এরা হলো মাছিমপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে শামীম (২) ও বদরুল মিয়ার ছেলে আবির (৩), পেরুয়া গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে সিফাতুল (২) এবং নোয়ারচর গ্রামের আফজাল মিয়ার ছেলে সোহান (৩)। এরপর নিখোঁজ থাকে ছয়জন।
গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ওই ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এরা হলেন দিরাই উপজেলার পেরুয়া গ্রামের নসিবুল্লাহর স্ত্রী কারিমা বিবি (৭০)। গতকাল উদ্ধারকৃত মৃত সোহানের মা আজিরুন নেসা (২৫), মাছিমপুর গ্রামের বাসদ মিয়ার শিশুকন্যা শান্তা (৩), একই গ্রামের আয়াজ আলীর স্ত্রী রহিতুন নেসা (৩৫) এবং নোয়ারচর গ্রামের আফজাল আলীর ছেলে আসাদ (৫)। বেলা ১২টার দিকে সর্বশেষ উদ্ধার করা হয় মাছিমপুর গ্রামের আরজ আলীর মেয়ে তাসমিনা বেগমের (১১) মৃতদেহ।
দিরাই থানা অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, আজ (বুধবার) ভোর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল, থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী আবারো অভিযানে নামে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাওরের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিখোঁজ ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইতিমধ্যে উদ্ধার কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নিহতদের লাশ দাফন করা হয়েছে।