বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
তসলিমা লতিফ অতঃপর গাফফার চৌধুরী

তসলিমা লতিফ অতঃপর গাফফার চৌধুরী

মুহাম্মদ আবদুল কাহহার :

আবদুল গাফফার চৌধুরীর বিগত দিনের পরিচয় হলো, তিনি একজন সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও  কলাম লেখক।  ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখি করেছেন এবং পরবর্তীতে বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন। গাফফার চেীধুরী তার প্রথম জীবনে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ গান রচনা করে সবার মন জয় করেছিলেন। কিন্তু গত ৩ জুলাই’১৫ শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে অবস্থিত ম্যানহাটনের জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক লেকচার সিরিজে একমাত্র বক্তা হিসেবে সেখঅনে উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে প্রবাসী বিতর্কীত এই লেখক ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবি তার আলোচনায় মহান আল্লাহর ৯৯ টি গুণবাচক নাম, রাসূল (স.), সাহাবী, পর্দা, দাঁড়ি-টুপিসহ অন্যান্য বিষয়ে ইসলাম অবমাননাকর বক্তব্য দেন। এর ফলে তার নামের সাথে ‘মুরতাদ’ (ইসলাম চ্যুত) নতুন করে আরেকটি পরিচয় যুক্ত হয়েছে। তার বক্তব্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত মুসলিমদের হৃদয়ে আঘাত হানে।  এতে করে সর্বত্র পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে গত রবিবার নিউইয়র্ক ম্যানহাটনে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধির বাসায় টাইম টেলেভিশনে এক স্বাক্ষাৎকারে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি দাবি করে বলেন, “আপনাদের মধ্যে আমার চেয়ে বড় মুসলান কে ?” তার নাস্তিক্যবাদী বক্তব্য এক দিকে বড় অসহ্যের কারণ। আবার তিনিই নাকি সবচেয়ে বড় মুসলমান! এ দাবিও করেছেন।  যদিও তার শেষোক্ত বক্তব্যটি অনেকরই হাসির খোরাক।
কলাম লেখক হিসেবে বেশ পরিচয় থাকলেও তিনি যে শাহবাগীদের মুরব্বী ও পৃষ্ঠপোষক তা আবারও জানান দিলেন। বাম হলেও মুসলিম পরিচয় বহনকারী লোকটি এতটা অজ্ঞতার পরিচয় দিবেন তা কেউ অনুমান করেনি। তিনি হয়তো ভেবেছেন, বর্তমান সরকারের সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গত বছর (২০১৪) ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পবিত্র হজ, মহানবী (স.), তাবলিগ জামায়াত নিয়ে কটাক্ষ করে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছিলেন। তেমনিভাবে বাংলাদেশি লন্ডন প্রবাসি এ কলাম লেখক নিজেকে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। কেননা তিনি দেখেছেন, ধর্মের অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তেমন সমস্যা হয় না। এতে করে ইসলামের বিপক্ষে যে সকল শক্তি রয়েছে তাদের সমর্থন ও আর্থিক সহযোগীতা পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে আশ্রয় মেলে। এছাড়া তসলীমা নাসরিনদের মতো নষ্টা-ভ্রষ্টা চরিত্রের নারীদের মন পাওয়া-তো ছোট-খাটো ব্যাপার নয়! একথা যুক্তি হলো, গাফফার চৌধুরীর বিতর্কীত বক্তব্যের পরে তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গাফফার চেীধুরীর উপর যত রাগ ছিল আমার, সব জল হয়ে গেল।’ তিনি আরো লিখেছেন,‘ ধর্মের মোটা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেশটাকে পুরো অন্ধকার বানিয়ে দিচ্ছে। গাফফার চৌধুরী নিতান্তই নিরীহ মানুষ, আল্লাহর ৯৯ নামের কথা বলেছেন শুধু, আল্লাহর তিন মেয়ের কথা তো বলেন নি।” এর আগে লতিফ সিদ্দীকীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, ‘ব্রাভো লতিফ সিদ্দিকী! এতদিনে বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রীদের মুখে কিছু সত্যভাষণ শুনলাম। আরো মন্ত্রী যেন শেখেন সত্য কথা বলা। এবার সত্য কথা শুনে প্রাণ জুড়ালো।’ তাই গাফপার চৌধুরী মন্ত্রী না হলেও তসলীমা নাসরীনের প্রাণ জুড়াতে ও রাগ কমাতে চেষ্টা করেছেন। তাই নয় কী ? লতিফ সিদ্দিকী মুসলমানদের ধর্মীয় অনুূভূতীতে আঘাত হেনে নানা নাটকের জন্ম দিয়ে সরকারের প্রতক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় গোপনভাবে দেশে প্রবেশ করে কারাগারের নামে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে জামিনে বেড়িয়ে গেছেন।  নামে কারাগার, কাজে মামার বাড়ি থাকা ছাড়া কোনই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মুসলিম দেশে নাস্তিকদের কদর এভাবে হলে   তখন আর অন্যান্য নাস্তিকরা কেন নিশ্চুপ হয়ে থাকবেন ?
যে লোকের মধ্যে সামান্যতম ঈমান আছে তিনি আবদুল গাফফার চৌধুরীর এ ধরণের আচররণকে কখনোই মেনে নিতে পারেন না।   অথচ মুসলীম পরিচয়ধারী ডা. ইমরান এইচ সরকার তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আমি আবদুল গাফফার চৌধুরীর নিউইয়র্কে দেয়া পুরো বক্তব্যটি শুনলাম। এক বার, দুই বার না, বার বার শুনলাম। তিনি ধর্মের অবমাননা করলেন কোথায় তা আমার বোধগম্য নয়। নয়াদিগন্তের মতো একটা গোয়েবলসীয় পত্রিকার খবরে যারা চিলের পিছে দৌড়াচ্ছেন, তাদের কান্ডজ্ঞানহীন ছাড়া আর কিছু বলার নেই। আমি ব্যক্তিগত সখ্যতা থেকে যতটুকু জানি, তিনি মাদ্রাসায় পড়ার সুবাধে ধর্ম সম্বন্ধে খুব পরিস্কার জ্ঞান রাখেন।” ইসরান এইচ সরকরকে বলব, ধর্ম এবং অবমাননা এই দুটি বিষয়ে যদি যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে এটি আপনার  বোধগম্য না হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। আর ‘গোয়েবলেস’ শব্দটি কোন ব্যক্তি, দল ও পত্রিকার নামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেই সুস্থ বিবেকবোধের ক্ষেত্রেও আপনি শূন্যের কোঠায়। আবদুল গাফফার চৌধুরী বরিশালে নিজ গ্রামের উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রসায় সিক্স পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুবাদে ধর্মসম্বন্ধে খুব পরিষ্কার রাখেন বলে দাবী করেন, তাহলে যে সকল ইসলামি স্কলারগণ গোটা জীবন কোরআন হাদীস, ফিকহ চর্চা করেন, তাদেরকে আপনি কান্ডজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় প্রকারন্তরে আপনি নিজেই একজন গÐমূর্খের পরিচয় দিলেন। আপনি হয়তো আবদুল গাফফার চৌধুরীর কথায় কোন অপরাধ দেখেন না। অথচ এ লেখাটি যখন লিখছি তখন পত্রিকার সর্বশেষ সংবাদটি ছিল“ গাফফার চৌধুরীকে তওবা করার দাবি সংসদে”। তাই ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে মন্তব্য করার আগে নিজের বিবেককে একবার জিজ্ঞেস করুন, আপনার কথাগুলো কতটা সত্য ?
মাসিক মদিনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, ‘আবদুল গাফফার চেীধুরী যা বলেছেন, তা চরম মূর্খতা। যার মধ্যে বিন্দু মাত্র ঈমান আছে সে এমন কথা বলতে পারে না। আল্লাহর গুণবাচক নামের সাথে মূর্তির নামের মিল থাকার যে কথা তিনি বলেছেন এটা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ। রাসূল স ও হিজাব নিয়ে দেয়া বক্তব্যও ঔদ্ধত্বপূর্ণ।’ গাফফার চৌধুরী ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন-হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। যুক্তিসঙ্গত কারণে ফেসবুকে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ যথার্থই লিখেছেন,‘ জনাব লতিফ সিদ্দিকী যখন ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করেছিল তখন বলেছিলাম, যে এই লোকে জুতা মারলে মিনাতে শয়তানকে পাথর মারার মত সাওয়াব হয়তো হবে না, তবে কিছু সাওয়াব অবশ্যই হবে। এখন জুতা মারার ব্যাপারটা গাফফার সাহেবের ওপরও প্রযোজ্য—।  যে যত বড় কলামিস্ট, লেখক, রাজনীতিবিদ বা যাই হোক না কেন, ইসলা অবমাননা করলে সে সবচেয়ে বড় অপদার্থ, মূর্খ।” ওই ঘটনার দু’দিন পর গত রোববার নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা ও ব্রæকলিনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কয়েকটি গ্রæপ ও নিউইয়র্ক প্রবাসী আলেম, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতীবদের সংগঠন ‘মাজলিছুল উলামা’ ইউএসএ এবং আমেরিকান ‘মুসলিম ভয়েসে’র  যৌথ উদ্যোগে প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন গাফফার চৌধুরী। পূর্বনিধারীত দুটি কর্মসূচীকে ঘিরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, জুতা মিছিল ও সংঘর্ষের  ঘটনা ঘটেছে। পথে ঘাটে জুতা খাওয়া বা পার্থ সাহেবের জুতা মারার অভিব্যক্তি প্রকাশ যেন কম মাত্রার প্রতিবাদ। অবগত হওয়া দরকার কেউ যদি আল্লাহ, রাসূল (স) ও তার সাহাবীদের অসম্মান করতে চেষ্টা করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে অসম্মানীত করেন। এসব দৃষ্টান্ত দেখে-শুনে বোধদয় হওয়া উচিত।  তা না হলে দেশের মাটিতে এর চেয়েও চরম প্রতিবাদের মুখোমুখী  হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
গাফফার চৌধুরী দীর্ঘ দিন থেকেই মুসলমানদের পেছনে লেগে আছেন। যখন যা মনে আসে তখন তা লিখেন ও বলেন।  তাঁর ৮০ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে বলেছিলেন,‘যতদিন বাংলাদেশ থেকে মৌলবাদী গোষ্ঠী হেফাজত, জামায়াত শেষ না হবে ততদিন গণজাগরণমঞ্চের মতো শক্তিকে সমর্থন দিয়ে যাবো।’ গাফফার চৌধুরীর মতে, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি ও মৌলবাদ। আর এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, ইসলামের অবমাননাকারী নাস্তিক মুরতাদের কঠোর শাস্তি না হওয়া এবং ধর্মপ্রাণ নিরাপরাধ মানুষকে অপরাধী বানিয়ে শাস্তি কার্যকর করাই দেশের জন্য বড় সমস্যা। হেফাজত ইসলামের আমীর মুফতি শফী ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস  সম্পর্কে ১১ জুলাই’১৩ লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশে দুই ভন্ড রাজনৈতিক পীরের আবির্ভাব।” ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহা সমাবেশের ওপর নৃশংস হামলার বিষয়ে বলেছিলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে অত্যন্ত সাহসের সাথে ধর্মান্ধ ফ্যাসিবাদী অভ্যুত্থান দমনে সাফল্যের প্রমাণ দেখিয়েছে. এজন্য তাদেও প্রশংসা করি। ” চৌধুরীর মতে ,‘হেফাজত হলো কাগজের বাঘ।’ তাঁর মতো নাস্তিকরাই বর্তমান সরকারকে ডুবাতে সারাক্ষণ চেষ্টা করছেন। যার ফলে সরকারের সব ভাল কাজগুলো হারিয়ে  যায় অতল গহŸরে। অনেকেই মনে করেন গাফফার চৌধুরী রেফারেন্স ছাড়া কিছু লিখেন না। তবে তার লেখায় মৃত মানুষের রেফারেন্স তুলনামূলক বেশি। আসলে লতিফ সিদ্দিকীর ভাইরাসে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বের ১৫০ কোটি মুসলমানের ঈমান-আকিদা এবং ইসলামের ওপর আঘাত দিয়ে মারাত্মক অপরাধ করেছেন। এখনও সময় আছে, তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসুন। নারীদের পর্দা নিয়েও বাজে মন্তব্য করেছেন। সব বোরকা পরিধানকারী খারাপ নয়। কেউ খারাপ চরিত্রের থাকলে তা কেবল ব্যক্তি অপরাধ বলেই গণ্য হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, আবদুল গাফফার চৌধুরীর এ বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানীমূলক কথা বলে মুসলমানদেরকে মাঠোনামানো তার উদ্দেশ্য হতে পারে।  কেউ কেউ মনে করেন গাফফার চৌধুরীর বক্তব্যে সরকারের ইন্ধন রয়েছে।  তা না হলে এত জঘন্য কথা তিনি বলতে পারেন না। এ জন্য সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বিচার দিবসে মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।  সুতরাং  মুসলিম দেশ ও রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে বর্তমান সরকারের উচিত আবদুল গাফফার চৌধুরী, লতিফ সিদ্দীকী ও তসলিমা নাসরিনসহ যে সব মুসলিম নামধারী নাস্তিক, মুরতাদরা-  ইসলাম, মুসলিম, আল্লাহ ও তার সিফাতি ৯৯ নাম, হজ্জ, পর্দা, তাবলীগ, রাসূল (স.), সাহাবীসহ ধর্ম নিয়ে তারা যে অজ্ঞতা, ধৃষ্টতা এবং ঔদ্ধত্বপূর্ণ সাহস দেখিয়েছেন, দেখাচ্ছেন,  সেসব অন্যায়ের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়ভাবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
লেখাটি ‘জিবিনিউজ’-এর সৌজন্যে

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com