শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন
হাফিয মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার
ভূমিকা :
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ অবধি আল্লাহ তায়ালা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন পুরো পৃথিবীকে। আদিকাল থেকে সকল ধর্মের বিধানই আল্লাহর কাছ থেকে নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে মানুষের শান্তি ও কল্যাণে দেয়া হয়েছিল। শেষ নবী মুহাম্মদে আরবি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা সা. আনিত ধর্মই হল কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র ধর্ম। যার সম্পর্কে খোদ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নি:সন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন। যাহাদেরকে কিতাব দেওয়া হইয়াছিল তাহারা পরস্পর বিদ্বেষবশত তাহাদের নিকট জ্ঞান আসিবার পর মতানৈক্য ঘটাইয়াছিল। আর কেহ আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করিলে আল্লাহতো হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর’। সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ১৯।
বিশ্বনিয়ন্ত্রা আল্লাহর প্রেরিত একমাত্র ধর্ম ইসলামকে বাদ দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা, উন্নতি-অগ্রগতি ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং জীবন মানের উন্নয়ন সম্ভব না। তাই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হলে দ্বীনে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে মেনে নিয়ে তার ছায়াতলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে মাওলার রেজামন্দি তালাশ করতে হবে। তখনই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা, সুবিচার নিশ্চিতকরণ সম্ভব। অন্যথায় যুগ যুগ ধরে অশান্তির বীজ বপন চলবে। নাতিদীর্ঘ এই আলোচনায় সাম্প্রতিক সরকারিভাবে রচিত পাঠ্য বইয়ে ইসলাম শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করে চিরতরে বিদায় জানানোর পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দেশে মোট সাতটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এ শিক্ষানীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। আর এ নীতির উপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতি জাতীয় শিক্ষাক্রমে প্রতিফলিত হয়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ইসলামি শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শাখা থেকে ইসলামি শিক্ষাকে পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছিল। আর বর্তমানে মানবিক শাখায় ইসলামি শিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ শিক্ষাটি কলেজগুলোতে অবহেলিত অবস্থাতেই পড়ে আছে। এতে কলেজের ইসলামি শিক্ষার শিক্ষকগণ ঐচ্ছিক বিষয়ের একজন গুরুত্বহীন শিক্ষকে পরিণত হয়ে আছেন। অন্যদিকে এ বিষয়ের ছাত্রসংখ্যাও আস্তে আস্তে লোপ পেতে পেতে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। অথচ, ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষেও কলেজগুলোতে মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসা-সকল শাখার শিক্ষার্থীগণ ইসলামি শিক্ষাকে আবশ্যিক সাবজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করতো।
আবার প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০-এ ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়গুলোর বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়গুলোর ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত চালু থাকবে। বিষয়গুলোর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। এ মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করেই একজন শিক্ষার্থীর গ্রেড নির্ধারিত হবে। এ প্রস্তাবে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’কে গুরুত্বহীন হিসেবে বোর্ড পরীক্ষার বাইরে রাখা হয়েছিল। এর মানে দাঁড়ায়, ‘ইসলামি শিক্ষা’ বিষয়ে গ্রেড উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের পড়ার দরকার হবে না। শিক্ষকদেরও ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণের তেমন কোনো আগ্রহ থাকবে না। কারণ, শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষা ব্যতীত এটি পড়তে কখনোই আর আগ্রহী হবে না। আর শিক্ষকগণও এ বিষয়ে ক্লাস গ্রহণে আর কোনো গুরুত্ব দেবেন না।
অথচ, জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ ছিল যে, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা’। কিন্তু এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষানীতিতে উল্লেখিত শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অমান্য ও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে সম্পূর্ণভাবে ‘ইসলামি শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়েছে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো যে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রতিফলনের কোনো ব্যবস্থা ২০২০-এর শিক্ষাক্রমে রাখা হয়নি! আর শিক্ষানীতিতে ঘোষিত শিক্ষার্থীদের নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনের যে কথা বলা হয়েছে, সেটিও জাতীয়ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। অর্থাৎ স্কুল ও কলেজে ‘ইসলামি শিক্ষা’ বিষয়ে পড়াশুনার আর কোনো সুযোগ নেই।
৩০ মে ২০২২ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির এক যৌথসভায় এ শিক্ষাক্রমের অনুমোদন দেয়া হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৩ সাল থেকে শ্রেণিভিত্তিক নতুন এ শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। মূল্যায়নের ভিত্তি হবে ক্লাসের মাধ্যমে অর্জিত শিখন পদ্ধতি। অবশ্য পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে শিখন কার্যক্রমের পাশাপাশি পরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
নতুন সিলেবাসে এখনকার মতো এসএসসি ও এইসএসসি পরীক্ষা হবে না। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি বোর্ড পরীক্ষা হবে। এ দুটি পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে নির্ধারিত হবে এইসএসসির চূড়ান্ত ফলাফল। নতুন এ শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো বিভাগ বিভাজন থাকছে না। শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক ও অভিন্ন সিলেবাসে লেখাপড়া করবে। একজন শিক্ষার্থী মানবিক, বিজ্ঞান নাকি কমার্স বিষয়ে পড়বে, এটি নির্ধারিত হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। নতুন এ পদ্ধতিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি সাবজেক্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো: ১. ভাষা ও যোগাযোগ, ২. গণিত ও যুক্তি, ৩. জীবন ও জীবিকা, ৪. সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, ৫. পরিবেশ ও জলবায়ু, ৬. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ৭. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ৮. শারীরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ৯. শিল্প ও সংস্কৃতি এবং ১০. মূল্যবোধ ও নৈতিকতা।
স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, ২০২৩ সাল থেকে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ‘ইসলামি শিক্ষা’ নামে কোনো সাবজেক্ট আর থাকবে না। ফলে কোমলমতি শিশুরা ইসলাম শব্দটার সাথে অপরিচিতই থেকে যাবে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামি শিক্ষার ব্যবস্থা স্কুলে আর থাকলো না। সরকারিভাবেই স্কুল থেকে এ শিক্ষাটি তুলে দেয়া হলো! স্কুল থেকে ইসলামি শিক্ষা বাদ দেয়ার বিষয়টি ধর্মপ্রাণ বাঙালি জনতার কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশের সাধারণ জনগণ এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এ সিদ্ধান্ত জনতার কাছে ইসলাম বিদ্বেষ হিসেবে পরিচিতি পাবে। যার পুরা দায়ভার প্রধানমন্ত্রীর উপর গিয়ে পড়বে, যা সংশ্লিষ্টদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সিলেবাসে উল্লেখিত অন্য কোনো বিষয় নিয়েই মৌলিক কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন হচ্ছে না। যতো পরিবর্তন-পরিবর্ধন আর রকম ফের হচ্ছে শুধু ‘ইসলাম শিক্ষা’ নিয়েই।
ধর্মীয় শিক্ষা সংকোচন শুরুর ইতিহাস :
মূলত ইসলামি শিক্ষার প্রতি একটি মহলের কুদৃষ্টি সৃষ্টি হয়েছে ২০০১ সাল থেকে। এ সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি মহল ইসলামি শিক্ষাকে ধ্বংসের পাঁয়তারা শুরু করে। দশম শ্রেণির ১০টি সাবজেক্টের কোনোটিতে তারা হাত দেয়নি। তারা হাত দেয় ১০০ নম্বরের ‘ইসলামি শিক্ষা’র প্রতি। তারা ১০০ নম্বরের ইসলামি শিক্ষাকে ৫০ নম্বরে সংকুচিত করার হীন প্রয়াস শুরু করে। দেশের সবাই জানেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাজ শুধু নির্বাচন পরিচালনা করা। তিন মাসের জন্য ক্ষমতায় থাকা সরকারটির এ বিষয়টি নিয়ে নাক গলানোর কথাই নয়। কিন্তু ওই সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা চরম ইসলাম বিদ্বেষী কিছু ব্যক্তি এ শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১০০ নম্বরের ইসলামী শিক্ষার প্রতি তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়। পরবর্তীতে ধর্মীয় জনতার প্রতিবাদের মুখে তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
ইসলামি শিক্ষা নিয়ে এ ষড়যন্ত্র সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। অন্য কোনো শিক্ষা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা ও ষড়যন্ত্র নাই। যত মাথাব্যথা ও ষড়যন্ত্র শুধু ইসলাম ধর্ম আর ‘ইসলামি শিক্ষা’ নিয়ে। ষড়যন্ত্রের এ ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে শুরু হয় স্কুলের ‘ইসলামি শিক্ষা’ নিয়ে নতুন কারসাজি। এ সময় ‘ইসলাম শিক্ষা’ বইয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’। অথচ, হিন্দুধর্ম শিক্ষা ও খ্রিস্টান ধর্ম শিক্ষা বইতে এ রকম কোনো নাম দেয়া হলো না। এখানে প্রচ্ছন্নভাবে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ দুটো নামের মাঝখানে ‘ও’ অব্যয় দ্বারা দুটো ভিন্ন জিনিস বুঝানো হলো। আর উভয়ের মাঝে বিরোধ আছে মর্মে সূক্ষ্ম একটি কারসাজিরও বীজ বপন করা হলো। কারসাজির এ সূত্র ধরে দুষ্টচক্রটির পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল এ শিক্ষাকে পাঠ্যসূচি থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়া। চক্রটি তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শতভাগ সফল হলো। বর্তমানে ২০২২ সালের শিক্ষাক্রমে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ নামক বইটি সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে দিলো।
এ আলোচনার প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে পারি, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামি শিক্ষাকে বাদ দেয়া একটি অযৌক্তিক ব্যাপার। এটা একদিকে জাতীয় শিক্ষানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, অন্যদিকে মুসলিম জীবনের কদর্য এক হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি এটা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণের বহি:প্রকাশ। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। দেশের সংবিধানের শুরুতে আল্লাহতে বিশ্বাসের কথা লেখা আছে। এসব বিবেচনায় এদেশের স্কুল থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ যাওয়াটা একবারেই অযৌক্তিক, বৈপরীত্য ও হাস্যকর একটি ব্যাপার। এটি সংবিধান অবমাননারও শামিল।
মাদরাসার সিলেবাস এবং কিছু কথা :
২০২৩ সালের ৬ষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্য পুস্তক ইতোমধ্যে মাদরাসাগুলোতে পৌঁছেছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির মোট বইয়ের সংখ্যা ১৫টি, তম্মধ্যে মাত্র ৪টি বই ইসলামী ও আরবি বিষয়ের, বাকি ১১টি বই সাধারণ শিক্ষার। সাধারণ শিক্ষার বইগুলো হলো: ১) জীবন জীবিকা, ২) স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ৩) বিজ্ঞান অনুশীলন, ৪) বিজ্ঞান অনুসন্ধান, ৫) ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন, ৬) ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধান, ৭) গণিত, ৮) ইংরেজি, ৯) ডিজিটাল প্রযুক্তি, ১০) চারুপাঠ এবং ১১) শিল্প সংস্কৃতি। আরবি ৪টি বিষয় হলো: ১) আকাঈদ ফিকহ, ২) কোরআন মজিদ, ৩) কাওয়াঈদুল লোগাতুল আরাবিয়া ও ৪) লুগাতুল আরাবিয়া এত্তেছালিয়া। শুনা যাচ্ছে মাদরাসার কেন্দ্রীয় (পাবলিক) পরীক্ষায় মাত্র আরবী ১০০ নম্বরের ১টি বিষয়ের পরীক্ষা হবে। তাছাড়া আরবী অন্য বিষয়গুলোর পরীক্ষা হবে না, শিক্ষকরা মূল্যায়ন নম্বর দেবে, বাকি সাধারণ বিষয়গুলোর পরীক্ষা হবে।
পাঠ্য বইসমূহের বিভিন্ন গল্প, কবিতা, মূর্তির ছবি নিয়ে ওলামা-মাশায়েখ ও পীর সাহেবগণ প্রতিবাদ করছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
মোগল আমলে বা তারও আগে আলেমদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্টপোষকতা করা হতো। আলেমরা শিক্ষা বিস্তারে কাজ করতো, তাদের বেতন মন্ত্রীর সমান ছিল। ইংরেজ আসার আগে এলাকার ভূমি লাখেরাজ ও ওয়াকফ হিসেবে সরকার মাদরাসার হাতে দিতো, যা থেকে মাদরাসার ব্যয় যেমন নির্বাহ হতো, তেমনি জনগণের চাহিদার আলোকে এলাকার উন্নয়ন কাজে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অর্থ বরাদ্দ দিত। তখন শুধু বাংলায় আশি হাজার মাদরাসা ছিল। ইংরেজরা আলেম ও মুসলমানদের এ মর্যাদা দেখে এবং সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসে এ সকল সম্পত্তি মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ থেকে নিয়ে নেয়, ফলে অর্থাভাবে মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অনেক বছর পর মুসলিম নেতৃবৃন্দ চিন্তা করেন, মাদরাসা ও আলেম না থাকলে এক সময় ইসলাম ও মুসলিম বলতে কিছু থাকবে না। তাই তারা ইংরেজ সরকারের কাছে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে আলোচনা করেন। ইংরেজ সরকার সেখানে ইংরেজ বিরোধী কিছু হয় কিনা এ আশংকায় অধ্যক্ষ হবে ইংরেজ, এ শর্তে দাবি মেনে নেয়। সরকারি রোষানলে পড়ে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ক্ষতিগ্রস্ত হবে চিন্তা করে মুসলিম নেতৃবৃন্দ ইংরেজ সরকারের শর্ত মেনে নেয়। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। নেতৃবৃন্দ নিজেদের অর্থে ১৭৮০ সালে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তবে সিলেবাস ও পাঠ্য সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপের সুযোগ ছিল না। এ দায়িত্ব যিনি পালন করতেন তার পদবী ছিল হেড মাওলানা। কলিকাতা আলিয়ার প্রথম হেড মাওলানা মোল্লা মজদুদ্দীন। আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর সেখান থেকে অসংখ্য যোগ্য আলেম তৈরি হয়, যাতে উপমহাদেশে ইসলামি শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়। এর প্রায় একশত বছর পর ১৮৬৬ সালে ইংরেজ আমলে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে পরিচালনার জন্য স্থাপিত হয় ক্বওমী মাদরাসার মুল ভিত্তি দেওবন্দ মাদরাসা। তখন আলিয়া এবং ক্বওমী মাদরাসার সিলেবাস একই রকম ছিল। কোরআন, হাদিস, ফিকহ ইত্যাদি ভালো আলেম হওয়ার মতো সিলেবাস ছিল, সাধারণ বিষয় ছিল না। আলিয়া থেকে পাস করে কেউ ক্বওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করতো। ক্বওমী মাদরাসা থেকে পাস করে কেউ আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করতো। ১৯৮০ সালে সরকার জনবল কাঠামো ও শিক্ষাগত সনদ নির্ধারণ করে দিলে ক্বওমী সনদ দিয়ে আলিয়ায় চাকরির সুযোগ শেষ হয়।
১৯১৫ সালে আলিয়াতে সাধারণ বিষয় অন্তর্ভূক্ত করে নিউস্কিম এবং সাধারণ বিষয় ছাড়া ওল্ডস্কিম, এ দু’ ধারায় বিভক্ত করা হয়। শর্ষিনা আলিয়া, সিলেট আলিয়া, ঢাকা আলিয়ার একাংশ নিউস্কিম সিলেবাস গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। তারা ওল্ডস্কিমে থেকে যায়। এক পর্যায়ে ১৯৫৭ সালে সরকারি এক ঘোষণায় সকল নিউস্কিম মাদরাসা স্কুল-কলেজে পরিণত হয়। লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেসা তার বিশাল সম্পত্তি মাদরাসার নামেই ওয়াকফ করে। কিন্তু তা এখন নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামে মোহসিনিয়া মাদরাসা এখন মোহসিন কলেজে পরিণত হয়েছে। এভাবে তিনটি ছাড়া সকল মাদরাসা কলেজে পরিণত হয়েছে। এভাবে মিশরেও নানা যুক্তি ও প্রলোভনে মাদরাসায় সাধারণ বিষয় পাঠ্যভূক্ত করতে করতে ইসলামি শিক্ষা বিলুপ্ত করা হয়েছে। আজকের আলিয়া মাদরাসার সিলেবাস দেখে মনে হচ্ছে, এগুলোও সে পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ, আগে স্কুলে ১০০ নম্বরের আরবি ১০০ নম্বরের ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা দিতে হতো। আরব অনেক দেশে একজন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্রকেও তার বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষার সাথে সাথে কোরআন-হাদিসের একটি নির্দিষ্ট সিলেবাসের পরীক্ষা দিতে হয়। বর্তমানে মাদরাসায় যে সিলেবাস ৯০% মুসলমানের দেশে এ সিলেবাস স্কুল-কলেজের জন্য প্রয়োজন।
মাদরাসায় গত কিছুদিন আগেও বাংলা ইংরেজি ১০০ নম্বর করে ছিল। ১০০ নম্বর পড়েই তারা ২০০ নম্বর পড়ুয়া স্কুল কলেজ ছাত্রদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতো। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় শর্তারোপ করে ২০০ নম্বর করে বাংলা, ইংরেজি না থাকলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে না। ফলে ২০০ নম্বর করে ৪০০ নম্বরের বাংলা, ইংরেজি দিতে গিয়ে মাদরাসার মূল আরবি বিষয় সংকুচিত করা হয়।
গুরুত্ব হারাচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা: যা ভাবছে ধর্মীয় মহলগুলো
দেশের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে চলতি ২০২২ সালের ৩০ মে। রূপরেখার কোনো স্তরেই ধর্মশিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরণের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। প্রাক-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকরাই শেখাবেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বছর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এরমধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
ধর্মীয় মহল বলছেন, নতুন এই শিক্ষাক্রমে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিরোনামে ধর্মীয় শিক্ষা রাখা হলেও মূলত তা কোনোক্রমে ধর্মশিক্ষা নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় শিক্ষাক্রম থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়ার যে পরিকল্পনা চলছিল, এ শিক্ষাক্রম তার সফল বাস্তবায়ন। ২০১০ সালে প্রণীত সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর সেই শিক্ষানীতি কেউ অনুসরণ করেন নি। ২০১২-এ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ইসলামি শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শাখা থেকে ইসলামি শিক্ষাকে পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছিল। মানবিক বিভাগে ইসলাম শিক্ষাকে করা হয়েছিল ঐচ্ছিক। তারপর জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০-এ ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। আর ২০২২ সালে এসে ইসলাম শিক্ষাটাকেই বাদ দেয়া হয়েছে।
যুগ যুগ ধরে মানুষ একটু শান্তি, একটু স্বস্তি আর নির্মল জীবন যাপনের জন্য ইসলাম ধর্মকেই বেছে নিয়েছে। সত্য উদঘটনের জন্য নিরপেক্ষভাবে তারা ইসলামি শিক্ষাকে গবেষণা করে চলেছে। নিবিড়ভাবে তারা ইসলামি সংষ্কৃতির সম্মোহনী শক্তির অনুসন্ধান করে চলেছে। আর বর্তমান বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগেও এই শিক্ষার অনুসন্ধান ক্রমে বেড়েই চলেছে। যুগ সন্ধিক্ষণের প্রতিটি স্তরেই কোনো না কোনো জগত বিখ্যাত ব্যক্তি এ শিক্ষার কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন। ইসলামি শিক্ষার ছায়াতলে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়ে ধন্য হয়েছেন। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের প্রাণের শিক্ষা হলো সেই ‘ইসলামি শিক্ষা’। সুতরাং ইসলামি শিক্ষার প্রতি অন্ধ বিদ্বেষ পোষণ করা কারো জন্যই কাম্য নয়।
বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বেকারত্ব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আয়-বৈষম্য ও পর্নোগ্রাফির বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা। এমতাবস্থায় তাদেরকে ন্যূনতম একটু ধর্মের শিক্ষা প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবি। তাই কোমলমতি শিশুদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই ধর্মকে যে সরানো উচিত হবে না সেটা কর্তৃপক্ষের মনে রাখা প্রয়োজন। আমরা চাই, এ শিক্ষা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ুক! স্কুল এবং কলেজে আগের মতোই ‘ইসলামি শিক্ষা’ বাধ্যতামূলক থাকুক।
উলামায়ে কেরামদের কাছে দাবি :
দীর্ঘকাল ধরে ইসলাম শিক্ষাকে সংকোচন করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে শিক্ষা কার্যক্রম, সিলেবাস প্রণয়ন ও সাম্প্রতিককালের আলিয়া মাদরাসা সমূহের সিলেবাস তৈরির মাস্টারপ্লান করা হয়েছে, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে আর দেখিয়ে দিতে হবে না; সূর্যের ন্যায় জাতির কাছে তা এখন পরিষ্কার। ইসলাম, মুসলমান ও ইসলামি শিক্ষাকে চিরতরে বিলুপ্ত করে দিতে বহুকাল আগ থেকেই কাজ চলছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত তারা হয়ত আংশিক সফল হলেও হয়েছে; এটা নির্দিধায় বলা যেতে পারে।
কিন্তু দু:খ ও পরিতাপের বিষয় যে, প্রায় শতাব্দীকাল আগে থেকেই ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র ও সিলেবাসের উপর কঠোর নজরদারী চলছে। তবে আমরা এতটাই গাফিল যে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি গণ্ডিসীমার মধ্যেই আছি। সাধারণ শিক্ষার শিক্ষাক্রম কিংবা সিলেবাস নিয়ে অতটা চিন্তিত নই, যতটা ইসলামি শিক্ষা নিয়ে ইসলামের দুশমনরা চিন্তিত। ফলে যা হওয়ার তা হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ শিক্ষায় কলেজ লেভেলে প্রবেশ করা মাত্রই বাংলা বইয়ে যে কয়টি পাঠ পড়ানো হয়, তাতে স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রতি এক ধরণের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। এই সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। দেশে অনেক মুসলিম লেখকের সাহিত্য মান সমৃদ্ধ রচনা থাকার পরও শুধুমাত্র কৌশলে মগজ ধোলাইয়ের কাজ হিসেবে ‘কবর নাটক’, ‘বিষাদ সিন্ধু’সহ ইসলাম ধর্মকে হেয় করার বিভিন্ন পাঠ শেখানো হয়। তাছাড়া উন্নত বিশ্বে ডারউইনের মতবাদ শেখানো না হলেও আমাদের দেশে তা অবলীলায় শেখানো হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের একটু বুঝার বয়স হওয়া মাত্রই তারা ইসলাম বিদ্বেষের কাছে হেরে যাচ্ছে।
তাই দেশের ধর্মীয় নেতা তথা উলামায়ে কেরামদের কাছে বিনীত অনুরোধ যে, ক্বওমী মাদরাসাসহ ইসলাম শিক্ষার সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার সিলেবাস ও পাঠ নিয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা অতীব প্রয়োজন। পাশাপাশি ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক সকল সিলেবাস ও পাঠ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় আগামি প্রজন্ম ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব ধারণ করলে জাতি পথহারা হবে। এর খেসারত উভয় জাহানেই আমাদেরকে বহন করতে হবে।
উপসংহার :
গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এদেশের ক্ষমতায় আসীন আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারী একজন ধর্মভীরু নারী হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতার দীর্ঘ সময়ে তিনি ইসলাম ও মাদরাসা শিক্ষার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বতন্ত্র একটি আরবি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দিয়ে বাংলাদেশে একটি অসম্ভব সাহসী ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। ইসলামি শিক্ষা প্রসারের নিমিত্তে ইতোমধ্যে তিনি ১০১০টি দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করছেন। তাঁর এ কাজগুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রশংসনীয় হয়েছে। এমতাবস্থায়, শিক্ষাক্রম থেকে ‘ইসলামি শিক্ষা’ বাদ যাওয়াটা একবারেই বেমানান ও বৈপরীত্য একটা বিষয়।
বাংলার মুসলিম মানসে ধর্মীয় চেতনা ও গবেষণা সৃষ্টির লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। এছাড়া তিনি ইসলামি শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেছিলেন। (পূর্বে স্বায়ত্বশাসিত মাদরাসা বোর্ড ছিল না)। তিনি আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষ অবলম্বন ও সাহায্য প্রেরণ করেছিলেন। ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। মূলত তিনি সদ্য স্বাধীন একটি ভঙ্গুর বাংলার অবকাঠামোর উপরে দাঁড়িয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে মুসলিম উম্মাহর জন্য যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসাযোগ্য।
এমতাবস্থায় তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে স্কুল থেকে ‘ইসলাম শিক্ষা’ তুলে দেওয়াটা দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। এটা ‘কারা করছে, কার স্বার্থে করছে এবং কেন করছে’ সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বেকায়দায় ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র বলে দেশবাসি মনে করেন। কারণ স্কুলের ধর্ম শিক্ষাটি এদেশের মাটি ও মানুষের শিকড়ের সাথে জড়িত। এ শিক্ষাটি জাতির জাতীয় শিক্ষা হিসেবে পরিচিত। সুতরাং স্কুল থেকে ‘ইসলাম শিক্ষা’ তুলে দেয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
তথ্য সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব, বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিণ্ট পত্রিকা।
লেখক : সাংবাদিক, গবেষক ও গ্রন্থপ্রণেতা।