রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : এবার হজে পাঁচ হাজার হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে অনিয়ম হয়েছে তার দায় ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ওপর চাপিয়েছেন একই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বাবুল হাসান। তিনি জানান, মন্ত্রী নিজেই সব কিছু করেছেন। ইনচার্জ মিনিস্টার অনেক কিছু করে ফেলেন, তখন কিছু বলার থাকে না। আজ রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ধর্মসচিব এ কথা জানান। অতিরিক্ত কোটায় পাঠানো পাঁচ হাজার হজযাত্রীর বাড়িভাড়া বেশি দেখিয়ে ছয় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য হাবের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ অনিয়মের অভিযোগ করছেন হাবের বর্তমান কমিটির নেতাসহ ওই কমিটির অন্য সদস্যরা। বাড়ি ভাড়ার অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম সচিব বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া যখন হয় তখন আমি ছিলাম না। মন্ত্রী মহোদয় (সৌদিআরবে) চলে গেলেন। কিন্তু আমি যেহেতু সরকারের সচিব, পারমানেন্ট পোস্ট হোল্ড করি, সে জন্য দেখলাম আমার দায়িত্বটা বেশি। এ জন্য আমি যেতে পারিনি। আমি তিনবার যাওয়ার সময় পরিবর্তন করেছি।’ ‘বাড়ি ভাড়া হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ভিসা হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য নির্বাচিত ও অনির্বাচিত হাব (হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) নেতাদের সমন্বয়ে একটি ১০ সদস্যের কমিটি মন্ত্রী করে দিয়েছেন। তারা বাড়ি ভাড়া করেছেন। তখন বেশি-কম হতেই পারে। আমি যতটুকু জানি, বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে বেশি আলাপ করেছিলেন জামাল সাহেব (হাবের সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন)। সময় তো ছিল না, কিছু অনিয়ম হতেই পারে। সে ব্যাপারে আমার কোনো ইয়া নেই।’ অনিয়ম হলে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না-এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী তো এ বিষয়ে কমিটি-টমিটি করে দিয়েছেন। নিহতদের খোঁজটোজের মধ্যে কমিটির সবাইরে লাগাইছে যে বাড়ি ভাড়া কর। কত হওয়ার কথা কি হইছে-টইছে, ওই পর্যায়ে আমি আর আলাপে যাচ্ছি না ভাই। যেহেতু মাননীয় মন্ত্রী সব করেছেন।’ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব কিন্তু আপনার ওপরেও পড়ে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘তা তো আসেই। তবে ইনচার্জ মিনিস্টার অনেক কিছু করে ফেলেন, তখন ছে (বলা) থাকে না কিছু বলার। যদি গভর্নমেন্ট করে করবে (শাস্তিমূলক ব্যবস্থা)।’ মিনায় পদদলিত হয়ে ৭৯ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন জানিয়ে সচিব বলেন, ‘মৃতদেহ শনাক্ত করা প্রকৃতপক্ষে খুবই কঠিন ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘হজে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০৫ জন ও মহিলা ২৪ জন। দু’দিন আগের তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজ এখন ৭০ এর কাছাকাছি বলে আমার মনে হয়। আহত যারা ছিল তারা সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে।’ মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল হাসান বলেন, ‘সৌদিআরবের নিয়মে হজের সময় কোনো মৃতদেহ তারা অন্য দেশে পাঠায় না। ইরান ছাড়া অন্য কোন দেশ এ অনুমতি পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশও এ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায়নি। মৃতের পরিবার ফেরত আনার আবেদন করেছে বলেও আমার জানা নেই।’ ‘হজের সময় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মৃতদেহ ফেরত আনার রেওয়াজ নেই। সেক্ষেত্রে সরকার ফেরত আনতে চাচ্ছে কি না তা জানতে হবে, সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাতে পারবে’ বলেন ধর্ম সচিব। ইরান তো পেরেছে-আমরা কেন পারছি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইরান চেয়েছে তাই তারা পেরেছে। আমাদের সরকার চায় কি না তা জানতে হবে, সে প্রশ্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েকে করুন।’ মিনার দুর্ঘটনার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এ জন্য হাজিরা দেশে ফিরতে দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানান সচিব। নিহতদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘হজ নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত ছিলাম! এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেওয়ার কথা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ ফান্ডে যে অর্থ থাকে তা দিয়ে যা কিছু করা দরকার তা করেছি।’