শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসায় দোর্দ- প্রতাপ চালিয়েছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী। যখন যাকে খুশি তাকে দেখে নেওয়া এবং সাইজ করাতে তিনি ছিলেন বেপরোয়া। তবে দুই দিনের ছাত্র আন্দোলনে তার সে কর্তৃত্বের অবসান হয়েছে। ছাত্রদের দাবির মুখে মাদরাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালকের পদ এবং একইসঙ্গে শিক্ষকের পদও হারাতে হলো তাকে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এবং সেইসাথে হেফাজত আমিরের পুত্র হিসেবে সংগঠনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তেও তার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। মাদরাসা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর হেফাজতের পদও তিনি হারাতে যাচ্ছেন বলে শুক্রবার চট্টগ্রামে জোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। মূলত তার কৃর্তিকান্ডের কারণেই আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দীর্ঘ ৩০ বছরের হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিমের পদ ছাড়তে হয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে। যদিও তাকে মাদরাসার সম্মানজনক পদ উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে।
৯০-এর দশকে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আনাস মাদানী। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে দেশে গড়ে ওঠা মুরতাদ নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের ব্যাপক উত্থানের পর আলোচনায় আসেন তিনি। বিশেষ করে আল্লামা শফী অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর হাটহাজারী মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পিতাকে সামনে রেখে তার কিছু ভ‚মিকা নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়ায় সরকারি-বেসরকারি জমি দখলের অভিযোগ উঠে আল্লামা শফী পুত্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, পিতার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে মাদরাসায় নানা অনিয়ম করছিলেন তিনি।
আন্দোলনরত ছাত্ররা যে প্রচারপত্র বিলি করে তাতে বলা হয়, তিনি বেশ কয়েকজন ছাত্রকে বহিষ্কার ও শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন। আবার নিজের পছন্দমত কিছু লোককে নিয়োগও দিয়েছেন। আল্লমা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতার পর মাদরাসার মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে বিরোধে জড়ান আনাস মাদানী। মাদরাসার একটি অংশ সহকারী মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে মহাপরিচালক করার প্রস্তাব করলেও এর বিরোধিতা করেন আনাস মাদানী। তিনি তার পছন্দের ব্যক্তিকে এ পদে বসাতে চান।
আর এর প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সহকারী মহাপরিচালকের পদ থেকেও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন জুনাইদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের উপর জুলুম-নিপীড়নের অন্যতম শিকার প্রবীণ এ আলেমেদ্বীনকে নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্যও করেন বিভিন্ন সময়। ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ এবং দলাদলি সৃষ্টিতেও তার ভ‚মিকা রয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। এসব কারণে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা। মূলত এর জেরেই বুধবার ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। মাদরাসার কয়েক হাজার ছাত্র আনাস মাদানীকে বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের প্রথম দিনেই মাদরাসায় তার কক্ষসহ তিনটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
গুরুতর আহত করা হয় তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীকে। দাবির মুখে বুধবার রাতেই শূরা কমিটি আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেয়। পরদিন তাকে পুনর্বহাল করা হচ্ছে এমন খবরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শূরার বৈঠকে আনাস মাদানীর বহিষ্কারাদেশ চ‚ড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যদিয়ে হাটহাজারী মাদরাসায় আনাস মাদানীর কর্তৃত্বের অবসান ঘটলো। শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল বয়সের ভারে ন্যুজ আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে উপদেষ্টা পদে রেখে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া। শূরার বৈঠকে আল্লামা শফীও মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।