শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : চিফ হুইফ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রাষ্ট্র এবং সংসদকে অকার্যকর করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার টিআইবিকে কে দিয়েছে। তারা নিজেরাই নাচের পুতুল। সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে টিআইবির দশম জাতীয় সংসদ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এ কথা বলেন। এ সময় হুইপবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, টিআইবি’র অর্থের উৎস কোথায় এটি জনগণ জানতে চায়। দেশবাসীর এটা জানার অধিকার রয়েছে। তারা তাদের সীমালঙ্ঘন করেছে। চিফ হুইপ টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালার সঙ্গে তুলনা এবং“নিয়ম রক্ষার্থে” সংসদ চলছে মর্মে মন্তব্যের তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধান ও চলমান মহান জাতীয় সংসদকে অবজ্ঞা করা হয়েছে এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে অপমানিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে” এধরনের মন্তব্য করার অধিকার টিআইবিকে কে দিয়েছে? টিআইবি নিজেরাই নাচের পুতুল। এখানে প্রতিয়মান হয় প্রভূদের সুতার টানেই তারা নাচে। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতার পালা বদলের একমাত্র পথ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ে সব দলের সমান অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। কিন্তু সে নির্বাচনে তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) ও জোটভুক্ত দল কোনভাবেই অংশগ্রহণ করেনি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার জাতীয় সংলাপের ডাক দেয়ার পর ও তারা নির্বাচনে আসেনি। সেক্ষেত্রে সংবিধান রক্ষার্থে জাতীয় নির্বাচনের কোন বিকল্প ছিলনা। ফলে সংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ভাবেই ২০১৪ সালে ০৫ জানুয়ারী সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলীয় জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সাংবিধানিক রীতিনীতি অনুসরনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। এক্ষেত্রে সাংবিধানিক রীতিনীতির কোন প্রকার ব্যত্যয় ঘটানো হয়নি।
আসম ফিরোজ বলেন, ‘একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা কোন দলের নিজস্ব বিষয়। এখানে জোর জবরদস্তির কোন সুযোগ রয়েছে বলে অমরা মনে করিনা। টিআইবি এবিষয়ে তাদের প্রতিবেদনে কোন মন্তব্য করেনি। বিষয়টি সকলের মনে সন্দেহের উদ্রেক করে। সে নিয়মেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। একটি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাকে বিএনপির জনপ্রিয়তার ঘাটতি এবং জনগণের প্রতি আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জনগণ মনে করে। তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচন পরবর্তি সময়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যে জনগণের ওপর পেট্রোল বোমা ছোড়ার নীতি গ্রহণ করে। এটা সংবিধান বিরোধী কাজ। এখানে টিআইবি নিরব কেন এটি জাতি জানতে চায়।
তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সারা বিশ্বে এ সংসদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সারা বিশ্ব এ নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিরা নেতৃত্ব প্রদান করছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আইপিইউ এবং সিপিএ এর মত দুটি সংগঠনে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চিফ হুইপ বলেন, সিপিএর বর্তমান চেয়ারপার্সন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং আইপিইউএর প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধূরী এমপি ৭ দিনের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের গণতন্ত্র যখন সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সকল সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে সুদৃঢ় অবস্থানে সে সময় দেশের একটি এনজিও কর্তৃক এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ উদ্দেশ্যমূলক এবং হতাশাব্যঞ্জক।
টিআইবি’র এ ধরনের মন্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত, বিভ্রান্তিমূলক ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়ে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। সাথে সাথে এধরনের অগণতান্ত্রিক প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন সম্পর্কে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বিভিন্ন মন্তব্য করা হয়। গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।