সাইফ উল্লাহ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্ত এখন ভারত হতে চোরাই পথে আনা গরু-ঘোড়া ও মাদকের চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে গোপন চুক্তিতে চলছে চোরাই পথে আনা ভারতীয় গরু-ঘোড়া ও মাদকের রমরমা বানিজ্য।
প্রতি রাতেই মধ্যনগর সীমান্তের চোরাই পথে গরু-ঘোড়া মাদকদ্রব্য সহ ভারতীয় পণ্যসামগ্রী আসছে বাংলাদেশে।স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাটকীয় নিরবতায় জনমনে কৌতুহল সৃষ্টি হচ্ছে।স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী চোরাকারবারিদের কাছে অসহায় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ।কারণ গোপন চুক্তিতে বিরাট মাসোহারা দিয়ে চলে এসব চোরাচালান।
জানাযায় ধর্মপাশা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের মহেষখলা, কাইতাকোনা, কড়ইবাড়ী, (কড়ই চড়া) ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটাসহ উপজেলা সীমান্তের বিভিন্ন চোরাই পথে প্রতিরাতেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত হতে গরু, গোড়া ও মাদকদ্রব্যসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী অবাধেই আসছে বাংলাদেশে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে জানাযায় গতকাল ১১মে ভোররাতে সীমান্ত পিলার ১১৮৯/৭-এস এর নিকট শূন্য রেখা বরাবর ভারত হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের কড়াইবাড়ি নামক স্থান হতে উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের মহিষখলা গ্রামের চোরাকারবারি এরশাদ মিয়ার ৪টি ভারতীয় গরু আটক করলেও চোরাকারবারি এরশাদ মিয়াকে আটক করতে পারেনি বিজিবি।
বিভিন্ন তথ্যসুত্রে জানা যায়, উপজেলা সীমান্তবর্তী এলাকার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের আন্তরপুর, মহেষখলা, গোলগাও, কাইদাকুনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর, ভোলাগঞ্জসহ কয়েকটি গ্রামের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া, আমানীপুর, রংচিসহ কয়েকটি গ্রামের একটি সংঘবদ্ধ চক্র স্থানীয় সীমান্তরক্ষী বর্ডারগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি রাতেই সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ভারত হতে বাংলাদেশে পালে পালে শত শত গরু-ঘোড়া মাদকসহ আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় পণ্যসামগ্রী সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আনছে।এরপর রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলে ঐসকল গরু একত্র করে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও হাওরে রেখে দেয় এবং মহিষলা বাজার ইজারাদার হতে গরু ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ সংগ্রহ করে, সময়ক্ষন বুজে এলাকার বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করে। প্রতিনিয়ত সম্পুর্ন নিরাপদ ভাবে ভারতীয় গরু ও মাদকদ্রব্য পাচারে সহজ হওয়ায় দিনে দিনে এই এলাকাটি ওপেন চোরাকারবারিদের ঘাটি হিসাবে পরিচিত হয়ে গেছে। ওই সকল এলাকার বিভিন্ন বাজারের রোড ও গ্রামের অলি-গলি দিয়ে প্রতি দিনে-রাতে যুদ্ধের সাজোয়া যান এর মতো চলে ভারত হতে অবৈধভাবে আমদানিকৃত গরুর বহর। অবাধে চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলিতে নানা অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে।এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখে সচেতন মহল কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধামকিসহ মাদক ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারি বানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
গত ৪মে ঈদের পরের দিন প্রকাশ্যে দিনের বেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ভারতীয় গরু চোরাচালানির সাথে কথা হলে উনি বলেন, পার্শ্ববর্তী উপজেলার কয়লা চুনাপাথর ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স করে এলসির মাধ্যমে ভারত হতে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি করছে। এতে সরকার পাচ্ছে রাজস্ব, আর আমরা চোরাই পথে গরু ঘোড়াসহ অন্যান্য ভারতীয় পণ্যসামগ্রী আমদানি করছি, এতে সরকারের আমলারা পাচ্ছে চাঁদা। উনি বলেন, আমাদের টাকা কিন্তু যাচ্ছেই, কারো টাকা সরকারি কোষাগারে আবার কারো টাকা সরকারের আমলাদের পকেটে। উনি খুব তাচ্ছিল্য করে বললেন, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা অনেক লেখালেখি করেছে, কিন্তু কি হয়েছে?অযথা লিখে লাভ নেই।
উপজেলার আমতরপুর গ্রামের স্বপন মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে মোবাইল ফোনে কথা হলে উনি বলেন, আমিসহ আমাদের গ্রামের ২০-২৫ জন এ ব্যবসায় জড়িত, আমরা কিভাবে ভারত হতে গরু নামাই এসব জেনে আমাদের হয়রানি কইরা কি করতে বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, গরু ও মাদক পাচার নিয়ে অনেক নিউজ করেছি, নিউজ করার পর কয়েকদিন বন্ধ থাকলে পুনরায় আবার চালু হয়ে যায়। চোরাচালানিরা অনেক কৌশলী ভারত হতে চোরাই পথে আনা গরু নিরাপদে পাচার করতে, মহেষখলা বাজারে ইজারাদার হতে গরু কেনা-বেচার একটি রশিদ সংগ্রহ করে অন্যান্য এলাকায় পাচার করে। কেউ আটক করলে হাতে রশিদ ধরিয়ে দেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসন জানলেও কিছু করার নেই এই গরু চোরাচালানে সব রাঘববোয়ালরা জড়িত।
স্থানীয় বাসিন্দা রমা কান্ত রায় বলেন, মধ্যনগর উপজেলা সিমান্ত এখন গরু চোরাচালানের পথের স্বর্গ রাজ্য, প্রতিদিন গরু, মহিষ, ঘোড়াসহ নিশা জাতিয় দ্রব্য আসছে, আমরা সাধারণ মানুষ যদি বেশী কিছু বলি, যে কোন সমস্যায় ফেলে দিবে, তাই চুপ করে থাকি, কোন কিছু জানিনা, বুঝিনা।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ-২৮ ব্যাটালিয়ন বিজিবির মাটিয়ারবন বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বরত নায়েক সুবেদার এর সাথে কথা হলে উনি বলেন, ভারত হতে চোরাই পথে গরু নামছে আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু সময় সুযোগে রাত্রি গভীরে বৃষ্টি হলেই চোরাকারবারিরা ভারত হতে চোরাই পথে ভারত হতে বাংলাদেশে গরু নামায়, তখন আমরা বৃষ্টির মধ্যে অস্র নিয়ে ঘটনাস্থলে থাকতে পারিনি। স্থানীয় বিজিবির সাথে গোপন চুক্তিতে এসব কর্মকাণ্ড চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে উনি বলেন, এসব মিথ্যা আপনি একদিন আমাদের ক্যাম্পে আসেন এবং এলাকায় ঘুরেন সঠিক তথ্য পাবেন।
মধ্যনগর থানা অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) নির্মল চন্দ্র দেব বলেন, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিজিবির আমরাও চেষ্টা করছি গরু পাচারকারীদের গ্রেফতার করতে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ২৮-বিজিবি অধিনায়ক মোঃ মাহবুবুর রহমান এর সরকারি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করলেও উনি ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।