মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৫ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম : আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য সিলেটবাসীকে হাত তুলে ওয়াদা করালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নৌকা আর আওয়ামী লীগকে কখনো ছাড়বেন না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছিলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এসময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি করে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মদনমোহন কলেজের হিরকজয়ন্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধনামন্ত্রী বলেন, যুগোপযোগী শিক্ষার প্রতি বর্তমান সরকারের দৃষ্টি রয়েছে। সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধাবী। তাদের মেধা বিকাশের সব চেষ্টা করছে সরকার। দেশের যেসব জেলায় সরকারি কলেজ ও বিদ্যালয় নেই, সেসব জেলায় একটি করে সরকারি কলেজ ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় সিলেটে শিক্ষার হার সবচেয়ে কম ছিল। সিলেটের শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে এখান থেকে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে। বর্তমানে সিলেট শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে।’ মদন মোহন কলেজের হীরক জয়ন্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তিনি প্রাথমিক ও নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি কমিশন গঠন করে। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে সেটা বাস্তবায়ন করেনি। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নিরক্ষর মুক্ত দেশ গঠনের কাজ শুরু করে। বিএনপি ক্ষমতায় আসার থেকে এ প্রক্রিয়া থেমে যায়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিরক্ষর মুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে আবার কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ৭১ ভাগ মানুষ নিরক্ষরমুক্ত। এটি দ্রুত শতভাগে উন্নীত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মধ্যে সিলেট শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। সিলেটকে এগিয়ে নিতে শিক্ষামন্ত্রী দেয়া হয় সিলেট থেকেই। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের ৬০ ভাগ কোটা রাখা হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে আছেন। তাই প্রক্রিয়াটি সংশোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবছরই রাজশাহী ও চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হবে। আগামীতে সিলেটেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ করা হবে। তবে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধুমাত্র স্নাতকোত্তর কোর্স থাকবে। মেডিকেল কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলায় একটি করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার ইচ্ছা রয়েছে সরকারের। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ স্থাপন করারও ইচ্ছা রয়েছে সরকারের। পাশাপাশি ৮ম শ্রেণীতে ভোকেশনাল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে। যাতে কেউ উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হলেও জীবন-জীবিকার থেমে না যায়। প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন সমসময় আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন সকল আন্দোলনেই প্রবাসীরা এগিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে আরো বলেন, ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে ছেলের অসুস্থ স্ত্রী ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে দেখতে আমি বিদেশ গিয়েছিলাম। তখন আমার দেশে ফেরা আটকানোর চেষ্টা করা হয়। এসময় প্রবাসে বসবাসরত বাঙালিরাই আমার দেশে ফেরার ব্যাপারে ঐকমত্য সৃষ্টি করেন। তাদের জোরালো পদক্ষেপেই আমি দেশে ফিরতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা আরো বলেন, আমার দেশে ফেরার সময় সাথে ১০০ জন প্রবাসী বাঙালি আমার সাথে ছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সিলেটী। তাদের অবদানের কথা আমি ভুলিনি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা বেগবান রয়েছে। এজন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ। অর্থমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি শিক্ষার জন্য আন্তরিক। শিক্ষাখাতে তিনি অর্থছাড়ে কার্পণ্য করেন না।’ দেশের শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সাধারণের ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রাম বাংলায় বিত্তবানদের সাথে সাথে অনেক সাধারণ মানুষও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। দেশের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত পর্যায়ে উন্নীত করতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কলেজ প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য সুখেন্দুবিকাশ দাস প্রমুখ। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটের সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেট পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে সিলেট ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী সিলেটবাসীর কাছে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। শুধু ভোট চাননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতকে হুঁশিয়ার করে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমল ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের আমল, এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের আমল হচ্ছে উন্নয়ন ও সুশাসনের আমল। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেও বিএনপি-জামায়াত ক্ষান্ত দেয়নি। তারা নির্বাচন বানচালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। খালেদার প্রতিহিংসা থেকে সাধারণ মানুষও রেহাই পায়নি। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। কিন্তু আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের উন্নয়ন করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা দেশের উন্নয়ন, মানুষের উন্নয়ন করেছি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। তিনি বলেন, সিলেট বিভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় অহরহ বোমা হামলা হতো। সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের উপর হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয়েছে। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময় বিদেশিরাও নিরাপদ ছিল না। সিলেটে শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের উপরও হামলা হয়েছিল। ‘তাদের ক্ষমা নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেখানে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, সেখানেই মামলা হয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার দায়ে তাদের সবার বিচার হবে। প্রত্যেকের বিচার করা হবে। ‘জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। জাতির জনকের হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু আমরা জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার করেছি। যুদ্ধারপরাধীদেরও বিচার আমরা করবো। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হবে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিমানে লুটপাট করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান ছিল মরা লাশ। আমরা বিমানে প্রাণের সঞ্চার করেছি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করেছি। আমরা চাই গরীব মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। তিনি বলেন, আমরা ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার চালু করেছি। ৮ হাজার পোস্ট অফিস ডিজিটাল করেছি। এসবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আমরা দেশের সর্বত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। দেশের কেউ বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াবে না। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কোনো সরকারের আমলে এমনটা হয়নি। শিক্ষা খাতে সরকার উন্নয়ন করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১ কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। বিনামূলে মাধ্যমিক পর্যন্ত বই দিচ্ছি। এখন বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়ে যায়। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য দেশে শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। আমরা নার্সদের চাকরির মান উন্নত করেছি। দেশে ১২ হাজার নতুন চিকিৎসক এবং ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরো ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষা, যোগাযোগ, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসহ সব খাতে বর্তমান সরকার উন্নয়ন করছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হবে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের যৌথ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে জনসভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনসভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।